খুলনায় মানববন্ধন ও র‌্যালিতে বক্তারা- গুমের শিকার ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দাও

0
197
????????????????????????????????????

খবর বিজ্ঞপ্তি:
মাছ ব্যবসায়ি মো. হাবিবুর রহমান হাওলাদারকে (হাবিব) ২০১১ সালের ৭ জুলাই ভোর আনুমানিক সাড়ে ৫ টার দিকে বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম বহরবুনিয়া ইউনিয়নের বেদবুনিয়া গ্রামের নিজ বাড়ির সামনে থেকে পুলিশের পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘ ৯টি বছর পেরিয়ে গেলেও তিনি আর ফিরে আসেননি। আদৌ বেঁচে আছেন কিনা তাও জানে না তার পরিবারের সদস্যরা।
হাবিবুর রহমান মোরেলগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম বহরবুনিয়া ইউনিয়নের বেদবুনিয়া গ্রামের মৃত মো. আসমত আলী হাওলাদারের ছেলে। তিনি পেশায় ঘের ব্যবসায়ি ও স’ মিলের মিস্ত্রি ছিলেন।
চরম ক্ষোভ ও হতাশার সঙ্গে উল্লিখিত তথ্য জানিয়ে বাবাকে ফেরত চাইলেন ব্যবসায়ি হাবিবুর রহমানের ছোট ছেলে শাওন হাওলাদার। ‘গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস’ উপলক্ষে শনিবার ২৯ আগষ্ট বেলা ১১টায় খুলনার জাতিসংঘ পার্কের সামনে অনুষ্ঠিত র‌্যালী ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি সরকারের কাছে এ দাবি তুলে ধরেন।
‘গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাÐসহ সকল রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন বন্ধ কর!’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক ও হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার্স নেটওয়ার্ক’ খুলনা যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করে।
একইভাবে এ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বেনাপোলের মেধাবী কলেজ ছাত্র মো. রেজোয়ান হোসেনের ভাই মো. রিপন হোসেন বলেন, ২০১৬ সালের ৪ আগষ্ট পুলিশ তার ভাইকে ধরে নেয়ার পর থেকেই সে গুম রয়েছে। তাকে আর পাওয়া যায়নি। তিনিও তার ভাইকে ফেরত দিতে সরকারের কাছে দাবি জানান।
পুলিশের নির্যাতনে দু’ চোখ হারানো নগরীর গোয়ালখালি রেললাইন এলাকার যুবক মো. শাহজালাল তার বক্তৃতায় বলেন, পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে টাকা দাবি করে। কিন্তু টাকা দিতে না পারায় খালিশপুর থানার তৎকালীন ওসি নাসিম খানের নির্দেশে পুলিশ তার দু’ চোখ তুলে দেয়। তিনি তার চোখ ফিরিয়ে দেয়া এবং দোষিদের শাস্তি দাবি করেন।
দেশের শীর্ষ মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ খুলনার ফোকাল পার্সন সাংবাদিক মুহাম্মদ নূরুজ্জামান এ কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন। মানববন্ধনকালে অনুষ্ঠিত সমাবেশে দিবসটির প্রতিপাদ্য তুলে ধরে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার্স কেএম জিয়াউস সাদাত।
গুমের শিকার ব্যক্তিদের তাঁদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার পাশাপাশি ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা ‘সফায়ারের’ নামে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও হেফাজতে নির্যাতনসহ সকল রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন বন্ধের দাবি জানিয়ে সমাবেশে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনার কো-অর্ডিনেটর অ্যাড. মোমিনুল ইসলাম, গেøাবাল খুলনার আহবায়ক শাহ মামুনুর রহমান তুহিন, নিরাপদ সড়ক চাই-নিসচা’র খুলনা জেলা সভাপতি এসএম ইকবাল হোসেন বিপ্লব, পরিবেশ সংগঠন-ছায়াবৃক্ষের নির্বাহী পরিচালক মাহবুব আলম বাদশা, সমাজকর্মী শেখ আব্দুল হালিম, গুমের শিকার মোড়েলগঞ্জের মাছ ব্যবসায়ি হাবিবুর রহমান হাওলাদার (হাবিব)’র স্ত্রী মাহামুদা বেগম, দু’ ছেলে শাওন হাওলাদার ও নয়ন হাওলাদার, বেনাপোলের কলেজ ছাত্র মো. রেজোয়ান হোসেনের ভাই রিপন হোসেন, স্বজন সালমা বেগম এবং পুলিশ কর্তৃক নির্যাতন চালিয়ে দু’ চোখ উপড়ানো খুলনার মো. শাহজালাল, তার স্ত্রী রাহিলা বেগম ও স্বজন মো. রানা হাওলাদার।
কর্মসূচিতে ‘অধিকার’র তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত দেশে ৫৭২ জন গুমের শিকার হয়েছেন। গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্ত্রী-সন্তানরা আর্থিক ও সামাজিকভাবে তাঁদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে চরম অর্থ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। এছাড়া তারা নানা ধরণের সমস্যার সম্মুখিনও হচ্ছেন। এ অবস্থায় সব ধরনের অন্যায়-অবিচারের প্রতিকার করে ন্যায়ভিত্তিক শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ভিকটিম পরিবারগুলোকে সঙ্গে নিয়ে দেশের জনসাধারণকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানানো হয়।
কর্মসূচিতে অন্যান্যের মধ্যে কলেজ শিক্ষক এমএ মান্নান বাবলু, সমাজকর্মী মো. বাবলুজ্জামান, মো. জাহিদুল ইসলাম, অবঃ ব্যাংক কর্মকর্তা মো. মাহবুব হোসেন, ইমাম হাফেজ মুহাম্মদ কামরুজ্জামান, অ্যাড. শহীদুল ইসলাম, হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার্স মো. জামাল হোসেন, এম এ আজিম, মো. রায়হান মোল্লা, মো. সায়াদ সালমী, মো. তামিম হাসান, সাংবাদিক তরিকুল ইসলাম, হারুন-অর-রশীদ, সাকিব হাসান, মো. রাকিব শেখ, ইমাম হোসেন মারুফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।