খুলনায় মরণযান টলি নির্মাণের বড় কারখানা! সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব : ঘটছে দুর্ঘটনা

0
1982

টাইমস রিপোর্ট :

সড়ক মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়ানো মরণযান টলি (স্যালো ইঞ্চিন চালিত ৩ চাকার মিনি পিকআপ) নির্মাণের সব থেকে বড় কারখানা গড়ে উঠেছে রূপসায়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কতিপয় সদস্য ও ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের তুষ্ট করে অবাধে চলছে এর নির্মাণ কাজ। একজন কারখানা মালিকের নেতৃত্বে ৬টি কারখানায় বিরামহীনভাবে চলছে অবৈধ টলি নির্মাণ। প্রতিমাসে এখানকার নির্মিত ২০/২৫টি টলি যাচ্ছে বিভিন্ন জেলা উপজেলায়। সহজলভ্যে দ্রুতগামী টলি পাওয়ায় বিদেশ থেকে সরকারে আমদানিকৃত পিকআপ এর প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে ক্রেতারা। সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। সেইসাথে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে অহরহ। জেলার রূপসা উপজেলার পূর্ব রূপসা বাসস্টান্ড সন্নিকটে ব্যাংকের মোড়। এখানে রয়েছে বেশ কিছু সংখ্যক লেদ, গ্যারেজ ও বাসের ডেন্টিং কারখানা। এরমধ্যে সোহরাব হোসেন নামক একজন কারখানা মালিক দির্ঘদিন ধরে অবৈধ মরণযান টলি নির্মাণ করে চলেছে। গাড়ি প্রতি প্রকার ভেদে ৪ থেকে ৬ লাখ টাকায় প্রতিটি টলি নির্মাণ করছেন তিনি। বিভিন্ন জেলা উপজেলায় টলির চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় উক্ত সোহরাব তার কারখানা ছাড়া পাশর্^বর্তী আরো ৫টি কারখানায় চুক্তি ভিত্তিতে বিরামহীনভাবে নির্মাণ কাজ চালাচ্ছে। এসব কারখানার মালিকরা হলেন, নুর ইসলাম, ডালিম, বাবু, আলম ও নাসির। গত শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে ৬টি কারখানায় ১৫টি টলি নির্মাণ চলছে। এর মধ্যে দু’টি ছিলো ডেলিভারীর অপেক্ষায়। সম্প্রতি কারখানা মিস্ত্রি লিটন সাংবাদিকদের বলেন, এ পর্যন্ত সোহরাব সিন্ডিকেট প্রায় এক লাখ টলি নির্মাণ করে ক্রেতাদের সরবরাহ করেছে। এসব টলি ইট, বালু, খোয়া, রডসহ বিভিন্ন মালামাল বহনের জন্য ব্যবহার হচ্ছে। এখানকার নির্মিত টলি ফকিরহাট, বাগেরহাট, মোল্লাহাট, মংলা, মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা, কচুয়া, পিরোজপুর, ভান্ডরিয়া ও বরিশালসহ বিভিন্ন জেলা উপজেলার আগ্রহী ক্রেতারা নিয়ে যাচ্ছে। তবে রূপসা উপজেলা এলাকায় চলছে এখানকার নির্মিত ২শতাধিক টলি। টলির চাহিদা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে জানা গেছে, স্যালো ইঞ্চিন দ্বারা চালিত তিন চাকার এই যানের আকার মিনি পিকআপের চেয়ে কিছুটা বড়। তবে এটি অত্যান্ত দ্রুতগামী। অল্প ডিজেলে অনেক পথ অতিক্রম করতে সক্ষম। গাড়ির লাগেনা যেমন কাগজ-পত্র, তেমনি চালকের লাগেনা কোন ড্রাইভিং লাইসেন্স। তবে ঝুঁকি রয়েছে ব্রেকে। তিন চাকা থাকার ফলে এর গতিবিধি অনুযায়ী গতিরোধ অসম্ভব বলে জানিয়েছেন পরিবহন সেক্টরের একাধিক সূত্র। যে কারণে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। গত ১২ নভেম্বর খুলনা মংলা মহাসড়কের ফয়লায় দ্রুতগামী একটি টলি দুর্ঘটনা কবলিত হলে একজন ঘটনাস্থলে নিহত হন। আহত হন বেশ কলেকজন। ওই টলির মালিকের বাড়ি রূপসা উপজেলার শ্রীরামপুর এলাকায় বলে জানা গেছে। এটি দ্রুতগামী হওয়ার কারণ হিসেবে জানা গেছে, লোহার মোটা প্লেট ভাজ করে চেসিস তৈরির পর নির্মিত টলিতে বসানো হয় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন স্যালো ইঞ্চিন। লাগানো হয় বাসের ডিপেনশিয়াল, গিয়ারবক্স ও সেলফ এবং মাইক্রোবাসের স্টিয়ারিং বক্স। এছাড়া চাকার রিং দেয়া হয় টাটা গাড়ির। খুলনা-মংলা মহাড়কের পাশে প্রকাশ্যে এই অবৈধ মরণযান দিনের পর দিন নির্মাণ হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন রয়েছে নির্বিকার। দেখেও যেন কেউ দেখছেন না। এর কারণ হিসেবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মিস্ত্রি জানান, এসব যারা বন্ধ করবেন তাদের সাথে মাসিক চুক্তি রয়েছে। সেই সাথে স্থানীয় নেতাদের সাথেও সিস্টেম করা আছে। টলি নির্মাতা সোহরাব হোসেন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সাথে মাসিক চুক্তি বা এ সংক্রান্তে কাউকে অর্থ প্রদান অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন আমাকে এ পর্যন্ত প্রশাসনের কোন সংস্থা টলি নির্মাণে বাধা বিপত্তি দেননি। এ ব্যাপারে পূর্ব রূপসা বাস ষ্টান্ড পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. লিয়াকাত হোসেন বলেন, বিষয়টা আমি সম্প্রতি জেনেছি। খুব শিঘ্রই এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।