খুলনায় ব্রয়লার মুরগির মাংসের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ

0
1392

নাদিম উল আলম : সারাদেশের ন্যায় খুলনায়ও ব্রয়লার মুরগির মাংসের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ দিন দিন কমে যাচ্ছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ইউটিউব এবং অনলাইন পত্রিকায় ব্রয়লার মুরগির মাংসের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরার কারণেই এমনটি হচ্ছে বলে ধারণা ব্যবসায়ীদের। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষয়টি ভিত্তিহীন। এক ধরণের ব্যবসায়ীরা এ ধরণের সংবাদ প্রচার করে ব্রয়লার ব্যবসার ক্ষতি করে চলেছে।
কিছুদিন আগেও যে মুরগির দাম ছিল একশত চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ টাকা কেজি। বর্তমানে সে মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি একশত বিশ টাকা বলে মুরগির বিক্রেতারা জানান।
দাম কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে মুরগি বিক্রেতা মিলন বলেন, ব্রয়লার মুরগির দাম খামারীরা কমিয়ে দিয়েছে, যার জন্য আমরা খুচরা বিক্রেতারা ক্রেতাদের কম দামে দিতে পারছি। গরীব মানুষের জন্য ব্রয়লার এখন হাতের নাগালে কিন্ত এক শ্রেনীর ক্রেতারা ব্রয়লার কিনতে আগ্রহী না।
মুরগি কিনতে আসা ক্রেতা পারভীন আক্তার বলেন, আমার পরিবার ব্রয়লার মুরগি খেতে চায়না। কারণ; বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ও পত্রিকায় এ বিষয়ে সংবাদ দেখেছি। ডাক্তাররাও ব্রয়লার খেতে নিষেধ করেছেন। লেয়ার ও কক জাতীয় মুরগির প্রতি আমাদের আগ্রহ বেশি।
সূত্র জানায়, আগেকার মুরগিগুলোর থেকে এখন অনেক চর্বিযুক্ত বড় মুরগি দেখতে পাওয়া যায়। এর কারণ হলো, মুরগিকে বড় করতে বেশির ভাগ সময় হরমোন ইনজেকশন দেওয়া হয়। মুরগির মাংসের মধ্যে থাকা এসব হরমোন মানব শরীরের ক্ষতি করে। কেবল বিভিন্ন ওষুধ বা হরমোন ব্যবহার করাই নয়, গবেষণায় বলা হয়- ৯৭ ভাগ মুরগির বুকের মাংসে ব্যাকটেরিয়ার কারণে সংক্রমিত হয়ে থাকে। বেশির ভাগ মুরগিতে এই ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পায়। মুরগির মাংসের মধ্যে বিষাক্ত আর্সেনিক পাওয়া যায়। এটি মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকর। হরমোন ও অন্যান্য ওষুধ ব্যবহারের কারণে মুরগির মাংসে এসব আর্সেনিক পাওয়া যায়। এছাড়াও বিভিন্ন ট্যানারীর বর্জ্য দিয়ে মুরগির খাবার তৈরী করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুরগির খাবার বিক্রেতা জানান, মুরগি আনার পর একদিনে সব বিক্রি হয় না তখন মার্কেটফিড নামে এক ধরনের খাবার খাইয়ে খাচায় রাখা হয়, এই খাবরটি মুরগির জন্য খুব ক্ষতিকর যা খেলে মুরগির ওজন ঠিক থাকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সৈয়দ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ব্রয়লার মুরগির মাংস খাওয়া ক্ষতিকর কথাটা সত্য নয়, বরং এটা জনপ্রিয় একটা খাবার এবং খামারীরা এ ব্যবসায় বেশ লাভবান হচ্ছে। মুরগির খাবারে বিভিন্ন বিষাক্ত ব্যাকটেরিয়া থাকে এবং ট্যানারীর বর্জ দিয়ে খাবার তৈরী হয় এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, একটা সময় ট্যানারী বর্জ্য দিয়ে খাবার তৈরির পরিকল্পনা ছিল কিন্তু পরবর্তীতে আর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
খুলনা পোল্ট্রি ফিস ফিড শিল্প মালিক সমিতির মহাসচিব এস এম সোহরাব হোসেন বলেন, বিভিন্ন কারণে পোল্ট্রি খামারিরা এ ব্যাবসা করতে গিয়ে লাভের মুখ দেখতে পায়নি। বরং অনেক খামার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দু’একজন ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের জন্য হয়তো এ ধরণের খাবার খাইয়ে মুরগি মোটাতাজা করছে। ব্যবসায়ীরা লাভের মুখ যেন দেখতে পারে এজন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে তবেই পোল্ট্রি ব্যবসা ভাল ভাবে করা যাবে।
বর্তমানে ব্রয়লার মুরগির দাম বাজারে কম কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই সিজনে মুরগির দাম কম থাকে কারণ উৎপাদন বেশি হয়। তবে ব্রয়লার মুরগির খাওয়ার কারণে অসুস্থ হতে পারে এমন সংবাদ কোথাও পাওয়া গেলে এখনই সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে এবং কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।