খুলনায় ব্যবসার আড়ালে চলছে মাদক বিকিকিনিঃমাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের অভিযানে গত এক মাসে আটক ৩২

0
564

কামরুল হোসেন মনি
জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ‘খ’ সার্কেলের একটি টিম অভিযান চালিয়ে মুদি দোকানদার লিটন মল্লিক ওরফে নাটা (৩৮)কে ১শ গ্রাম গাঁজাসহ আটক করে। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় রূপসা উপজেলার ৫নং ঘাটভোগ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আটক গাঁজা বিক্রেতাকে বিনাশ্রম ১৫ দিনের কারাদ-সহ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
রূপসা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ ইলিয়াসুর রহমান ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সূত্র মতে, সংস্থার উপ-পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে ‘খ’ সার্কেলের পরিদর্শক মোঃ সাইফুর রহমান রানার নেতৃত্বে একটি টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উক্ত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় রামেন্দ্রনাথ মল্লিকের পুত্র লিটন মল্লিক ওরফে নাটা এর মুদি দোকানে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে তার ক্যাশ ব্যাক্সে বিশেষভাবে রক্ষিত একটি ড্রয়ার থেকে ১শ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়। ‘খ’ সার্কেলের পরিদর্শক মোঃ সাইফুর রহমান রানা এ প্রতিবেদককে জানান, দোকানে ক্যাশ ব্যাক্সের মধ্যে আরও একটি বিশেষভাবে গোপন ড্রয়ার তৈরি করা আছে। সেখানে তল্লাশি চালিয়ে গাঁজা পাওয়া যায়। গাঁজাসহ লিটনকে আটক করার সময় ওই এলাকার ৫নং ঘাটভোগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাধন কুমার অধিকারী তাকে ছাড়ানো জন্য আমার কাছে তদবির করেন। এ সময় আমি তাকে বলি আপনি নিজেই মাদকের পৃষ্ঠপোষকতার তালিকাভুক্ত রয়েছেন। আপনি যদি আরেকবার তদবির করেন তাহলে আপনাকেও গ্রেফতার করতে বাধ্য হবো। এরপর ইউপি চেয়ারম্যান সাধান স্থান ত্যাগ করেন। আটক লিটন দীর্ঘ ৭-৮ বছর ধরে মুদি দোকানের আড়ালে এই গাঁজা ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। পরিদর্শক সাইফুর রহমান বলেন, রূপসা চর এলাকায় অভিযানের সময় পাইকারি গাঁজা বিক্রেতা মোঃ টুটুল শেখ টের পেয়ে পালিয়ে যায়।
এ ব্যপারে রূপসা উপজেলার ৫নং ঘাটভোগ ইউপি চেয়ারম্যান সাধন কুমার অধিকারী সোমবার (১ অক্টোবর) রাত ৭টা ২৬ মিনিটে মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, অভিযানের পর আমি সেখানে উপস্থিত হই। সেখানে মাদক বিক্রেতাকে ছাড়ানোর কোনো তদবির করিনি। মাদকের পৃষ্ঠপোষকতা তালিকায় তার নাম উঠে আসার বিষয় তিনি বলেন, আমি রাজনীতির সাথে জড়িত। প্রতিপক্ষ আমাকে ফাঁসানোর জন্য এ কাজ করতে পারেন।
সূত্র মতে, খুলনার ৯ উপজেলায় মাদক ব্যবসায়ী, চোরকারবারীদের পৃষ্ঠপোষক ও আশ্রয়-প্রশ্রয়দানকারী ব্যক্তিদের তালিকা রয়েছে ১২ জনের। যাদের নামের তালিকা রয়েছে এদের মধ্যে কেউ ইউপি চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন ক্ষমতাসীন দলের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালীদের আত্মীয়-স্বজন। ৬নং তালিকায় রয়েছে রূপসা উপজেলা ৫নং ঘাটভোগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাধন কুমার অধিকারীর নাম। খুলনার ৯ উপজেলায় মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারী হিসেবে মহিলা ও পুরুষ মিলে ১১৮ জনের তালিকা রয়েছে। এর মধ্যে তেরখাদায় ২২ জন, রূপসায় ২২ জন, দাকোপে ১৮ জন, পাইকগাছায় ৭ জন, কয়রায় ১৫ জন, ডুমুরিয়ায় ৭ জন, বটিয়ঘাটায় ৬ জন, দিঘলিয়ায় ৭ জন, ফুলতলায় ১২ জন। এসব মাদক বিক্রেতাদের মধ্যে জনপ্রতিনিধিরা সরাসরি মাদক বিক্রির সাথে জড়িত রয়েছেন।
জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় সূত্র মতে, গত সেপ্টেম্বর মাসে এ সংস্থা মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেন। এ মাসের শেষের দিকে ক্র্যাশ অপারেশনও পরিচালনা করেন। ওই মাসে ১২৬টি মাদকবিরোধী অভিযানে পরিচালনা করা হয়। এ সময় ২৯টি মামলা দায়ের করা হয়। যার মধ্যে ২০টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। এছাড়া এ সময়ের মধ্যে ৩২ জনকে মাদকসহ আটক করা হয়। যার মধ্যে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ২১ আসামিকে সাজা দেওয়া হয়। বিভিন্ন অভিযানে মাদক বিক্রির ৭৫ হাজার ৭শ টাকা, বিলাতী মদ ৩১টি, বিয়ার ১টি, গাঁজা ৬০৫ গ্রাম, ইয়াবা ৩১৩ পিস ও ফেনসিডিল ৩ বোতল উদ্ধার করা হয়। এ সময়ে আদালতের মাধ্যমে মাদক মামলা বিচারকাজ শেষে ৩ মাদক ব্যবসায়ীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করেন সংশ্লিষ্ট বিচারক।
জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামান সোমবার এ প্রতিবেদককে বলেন, তাদের গোয়েন্দাসহ দুই সার্কেলে মিলে গঠিত একটি টিম মাদকবিরোধী দিন-রাত অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তিনি বলেন, মাদক ব্যবসায়ীরা ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করার কারণে তাদের ধরতে একটু বেগ পেতে হচ্ছে। তারা বিভিন্ন ব্যবসার আড়ালে মাদক বিক্রিতে সক্রিয় হচ্ছে। আমাদের গোয়েন্দা টিম বিশেষ বিশেষ এলাকা চিহ্নিত করে নজরদারি বৃদ্ধি করেছে।