খুলনায় বাংলাদেশ কৃষক সমিতির ত্রয়োদশ জাতীয় সম্মেলন

0
1286

এদেশের কৃষকের ২১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে জোরদার কৃষক আন্দোলন গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে ও কৃষি-কৃষক বাঁচাতে শত সংগ্রামের ঐতিহ্যবাহী কৃষক সংগঠন বাংলাদেশ কৃষক সমিতির ত্রয়োদশ জাতীয় সম্মেলন ১৫ ও ১৬ ফেব্রæয়ারি খুলনার শহীদ হাদিস পার্কে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। জাতীয় সম্মেলন সফল করতে দেশব্যাপী তৃণমূল সংগঠন-গ্রাম কমিটি থেকে শুরু করে উপজেলা- জেলা কমিটি সাংগঠনিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে ও তা বাস্তবায়নে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৪০টি জেলার সম্মেলন সমাপ্ত হয়েছে সফলতার সাথে।
জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কৃষকনেতা মোর্শেদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন আজ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমাদের দেশ কৃষি প্রধান। ৮০ ভাগ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। ১৬ কোটি মানুষের খাদ্যের যোগান কৃষি থেকেই আসে। সরকারের ভুল নীতির কারণে কৃষি ও কৃষক আজ বিপন্ন। সারাদেশে সেচ সুবিধা ও বিদ্যুতায়নের ব্যবস্থা হয় নাই। বিএডিসিকে অকার্যকর করায় কৃষি উপকরণ নিয়ে ব্যবসা করেছে বহুজাতিক কোম্পানী ও মধ্যস্বত্বভোগী লুটেরা গোষ্ঠী। ভেজাল সার ও বীজ ব্যবহার করে প্রতি বছর আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক। বন্যা, খরা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিপূরণ পায় না কৃষক। ভূমি অফিস ও পল্লী বিদ্যুতে অবাধে চলছে অনিয়ম ও দুর্নীতি। আলু ও সবজি সংরক্ষণে পর্যাপ্ত কোন কোল্ড স্টোরেজ নাই। কঠোর পরিশ্রম করে ফসল ফলায় কৃষক, কিন্তু ফড়িয়া ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দাপটে ফসলের দাম পায় না। আজও দেশে কার্যকর ভূমি সংস্কার হয় নাই। ভূমি ব্যবহার নীতিমালা নেই, ফলে কৃষি জমিতে অবাধে অপরিকল্পিত কলকারখানা ও আবাসন গড়ে উঠছে। কৃষক জমি হারিয়ে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পাড়ি জমাচ্ছে দেশ-বিদেশের শ্রম বাজারে। কৃষি জমি চলে যাচ্ছে লুটেরা ধনিকদের হাতে। এই অবস্থা চলতে থাকলে এক সময় কৃষি জমি নিঃশ্বেষ হয়ে যাবে, ভেঙ্গে পরবে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা।’
কৃষকদের দাবির মধ্যে আছে ভূমি ব্যবহার নীতিমালা ও কার্যকর ভূমি সংস্কার, বিএডিসিকে সচল ও বিএডিসির মাধ্যমে সস্তায় কৃষি উপকরণ ও ভাড়ায় কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ, ধান, গম, পাট, ভুট্টা, সব্জিসহ ফসলের লাভজনক দাম প্রদান, ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারি ক্রয়কেন্দ্র চালু করে খোদ কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ফসল ক্রয়, আলু ও সবজি সংরক্ষণের পর্যাপ্ত কোল্ডস্টোরেজ নির্মাণ ও কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলা, ভূমি অফিস ও পল্লী বিদ্যুতের অনিয়ম-হয়রানি দুর্নীতি বন্ধ করা, শষ্যবীমা ও পল্লী রেশনিং চালু করা।
জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ১৫ ফেব্রæয়ারি দুপুর ২টায় খুলনার শহীদ পার্কে এবং কাউন্সিল অধিবেশন ১৬ ফেব্রæয়ারি শুক্রবার সকাল ১০টায় খুলনার প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে। প্রবীণ কৃষক নেতা আব্দুল আজিজ তালুকদার সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। সম্মেলনের উদ্বোধনের পর কৃষক নেতৃবৃন্দ, জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও ভাতৃপ্রতীম বিভিন্ন গণসংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা রাখবেন। বক্তৃতা পর্ব শেষে বিভিন্ন উপকরণে সজ্জিত হয়ে প্রায় পনের হাজার কৃষকের একটি র‌্যালী খুলনা শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করবে। সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পূর্বে এবং র‌্যালী শেষে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর শিল্পীবৃন্দ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করবেন। এবারের সম্মেলনে কৃষক সমিতির ভ্রাতৃপ্রতীম বিদেশী কৃষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করবেন। এর মধ্যে জার্মানী, নেপাল, ভারতের ৭টি সংগঠনের জাতীয় কৃষক নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করবে।
বিশেষভাবে স্বাগতিক জেলা হিসেবে খুলনা এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের জেলা বাগেরহাট, নড়াইল, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, গোপালগঞ্জ, পটুয়াখালীসহ অন্যান্য জেলা কমিটি পরিকল্পিতভাবে গ্রামে গ্রামে কৃষকের বাড়ির উঠোনে, চায়ের স্টলে, রাস্তার মোড়ে মোড়ে বৈঠক, গ্রাম সভা, হাট সভার মধ্য দিয়ে কৃষকদের অধিকার দাবী আদায়ের লক্ষ্যে সচেতন ও সংগঠিত করে শত শত গ্রাম কমিটি, ইউনিয়ন কমিটি গঠন করে। ফলে এবারের সম্মেলনে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর ব্যাপক সংখ্যক কৃষকের অংশগ্রহণ হবে সম্মেলনের সফলতা ও আগামী দিনের লড়াই-সংগ্রামের একটি শক্তিশালী দিক। খুলনা জেলার সবগুলো উপজেলায় ইতোমধ্যে শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। খুলনা জেলার প্রতিটি উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রাম থেকেই জাতীয় সম্মেলনে ব্যাপক সংখ্যক কৃষকের উপস্থিতি থাকবে।
খবর বিজ্ঞপ্তি