খুলনায় ফেসবুকে সংঘবদ্ধ আক্রমণের নেপথ্যে তথাকথিত সাংবাদিক দম্পতি ইভা-রানা

0
1104

নিজস্ব প্রতিবেদক:
খুলনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সংঘবদ্ধ আক্রমণের ঘটনা বেড়েই চলেছে। এসবের নেপথ্যে রয়েছেন তথাকথিত সাংবাদিক দম্পতি খুলনার ইশরাত ইভা ও শেখ রানা। এই দুষ্ট চক্র যখন তখন যে কাউকে আওয়ামী লীগ’র হাইব্রীড, স্বাধীনতা বিরোধী চক্র বলে সম্বোধন করছে। এ যেন আওয়ামী লীগ করার সার্টিফিকেট প্রদানকারী কৃর্তপক্ষ।

জানা গেছে, ফেসবুকে এমন নগ্ন আক্রমনের শিকার হয়েছেন ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ পেশাজীবী মহল। ভূক্তভোগীরা মান-সন্মান অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থেই এসব নোংরামি এড়িয়ে চলাই শ্রেয় মনে করছেন। তাই এনিয়ে খুব একটা প্রতিবাদি হননি। তবে বেকায়দায় পড়ে অনেকে এই চক্রটিকে চাঁদা দিয়ে রক্ষা পেয়েছেন। কেউ আবার এদের বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন।

তবুও দমেনি এই দম্পতি। উপরুন্তু ভুয়া ফেসবুক আইডি (২৫/৩০জনের) দিয়ে তাদের অপরাধ কর্মকান্ড অব্যাহত রেখেছেন। সামাজিক মাধ্যমে এই দম্পতির সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে সমাজের নানা মহল নিন্দা জ্ঞাপন করে। কেউ বলেছে এই দম্পতির জন্য তার সংসার ভেঙেছে। কেউ বলছে এরা সাংবাদিকতার নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন স্থানে চাঁদা দাবি করেছে। আর কেউবা বলছে খুলনা শহরটাকে এরা টাকা আয়ের উৎস বানিয়েছে।

ভূক্তভোগী খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে এরা আমাকে বদনাম করার চেষ্টায় মেতেছিলো। এদের নোংরামি কর্মকান্ডে আমি ও আমার পরিবার বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ি। তখন মান-সন্মান অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থেই মূলত এই দূগর্ন্ধ নিয়ে কোন প্রতিবাদ করিনি। এছাড়া সে আমাকে হাইব্রীড বলে সম্বোধন করেছে, খুলনা আওয়ামী লীগ পরিবার জানে আমি কে? এত বছর আওয়ামী লীগ করে তাদের কাছ হতে কি এখন স্বীকৃতি নিতে হবে?

খুলনা চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি ও সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বুলু বিশ্বাস তার ফেসবুকে হতাশাগ্রস্থ ভাষায় জানান, ওরা গোটা খুলনা শহরটাকে জ্বালায় খাচ্ছে। শহরের বিশিষ্ট মানুষদের বিতর্ক ফেলার কৌশলে লিপ্ত থাকে সর্বদা। তিনি এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার নেয়ার দাবি তোলেন।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক, বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ সোহেল এর সহধর্মিনী শাহরিন জোহরা তার ফেসবুকে ওই চক্রটির দমন করা প্রয়োজন বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন।

দৈনিক প্রবাহের সহকারী সম্পাদক, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান মেহেদী মাসুদ খান বলেন, ফেসবুকে এই অপরাধী চক্রটি এখন সক্রিয়। তারা বিভিন্ন নামে ফেসবুক আইডি (#আহমেদ বিপ্লব… #বেবি চৌধুরানী… #অহনা খান… #এসএম চয়ন… #মোহাম্মদ মাসুদ… # কেএস করনেল…) খুলে সাধারণ মানুষ, রাজনীতিক, শিক্ষক, সাংবাদিকদের সন্মানহানি ঘটাচ্ছে। কেউ এর প্রতিবাদ করলে তাকে অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ করছে, প্রাণনাশের হুমকিও দিচ্ছে! অবিলম্বে এদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানান তিনি।

খুলনা সাংবাদিক ই্উনিয়নের কার্যনির্বাহী সদস্য, খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সুমন আহমেদ বলেন, অন্যের সন্মান নিয়ে খেলা যেন ওদের নিত্যদিনের কাজ। তবে মনে রাখতে হবে পাপ বাপরেও ছাড়েনা। শহরের কতিপয় ব্যক্তিবর্গ ওদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ। সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য নানা ভূয়া ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে একযোগে সংঘবদ্ধ আক্রমণ চালায় এই চক্রটি। অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে প্রতিবাদকারীদের নিবৃত করার চেষ্টা করে।
তার মতে, অন্যের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে, প্রশ্ন তোলে চেতনা নিয়ে, যেখানে কিনা এদুটো বিষয়ে তারাই প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ যাদের চেতনা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে তারা পরীক্ষীত মুজিব সৈনিক। এদের অনেকেরই আওয়ামীলীগ এর জন্য ত্যাগ-তীতিক্ষা যা আছে, তার স্বীকিয়ানাও এই চক্রের আছে বলে মনে হয় না। বলা বাহুল্য ত্যাগীরা নিজেদের জাহির করেনা।

এই চক্রের আরেক ভূক্তভোগী প্রভাষক এসএম সোহেল ইসহাক বলেন, বিচার আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিছি, কারন এই খুলনায় একটা মানুষ নাই যিনি ওদেও (ইভা-রানা দম্পতি) প্রতিহত করবে। ওরা মানুষের মান ইজ্জত নিয়ে খেলা করছে। মান ইজ্জত আল্লাহর দান। আর ওরা শয়তানরুপী মানুষ।

জনৈক কমল মন্ডল  ফেসবুকে বলেন, আসলে এরা লোক অল্প কিন্তু অনেকগুলো ফেক্ আইডি ব্যাবহার করে বিভিন্ন নামে চালাচ্ছে। তাই মনে হচ্ছে যেন ওরা সংখ্যায় অনেক লোক। অহনা খান, সেটাও এই চক্রের ফেক্ আইডি।

খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের আরেকজন নেতা রেফাজুল শেখ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ওরা (ইশরাত ইভা-রানা) সাংবাদিক সেজে মানুষকে ভয়ভীতি দেখায়, ওরা এক নেতার আশ্রয়ে চলে এবং মানুষকে বøাকমেইল করে।

খুলনা মহানগর যুবলীগ নেতা শেখ শহীদ আলী আগের বক্তার সাথে তাল মিলিয়ে বলেন, শুধুমাত্র এরা দুজন না, এদের সাথে অহনা নামের আরো একটি মেয়ে আছে।

ভূক্তভোগী আফরোজা রওশন ফেসবুকে দাবি করেছেন, এই দুষ্ট দম্পতির জন্যই নাকি তার সংসার হারিয়েছে।

উল্লেখিত অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য নিতে অভিযুক্ত দম্পতির ইশরাত ইভা এর মুঠোফোনে (০১৭৮৫-৭৯৭৮৭৫) রবিবার রাত ১১টা বেজে ৭মিনিটে দুই বার কল দিলেও তিনি ফোন ধরেননি। সঙ্গত কারণেই তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

এবিষয়ে র‌্যাব-৬’র স্পেশাল কোম্পানী কমান্ডার মোঃ এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, ফেসবুকে সংঘবদ্ধ আক্রমণের অপরাধ কর্মকান্ড মহামারী আকার ধারণ করেছে। আমাদের নজরদারি রয়েছে। অপরাধী যে হোক কোন ছাড় পাবে না।
বাংলাদেশ টেযোগাযোগ রেগুলেটারী কমিশন (বিটিআরসি)’র অপরাধ পর্যবেক্ষণ টিমের কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা তদন্ত করে থাকি। এছাড়া সামজিক মাধ্যমগুলোতে সাইবার ক্রাইমের সাথে জড়িতদের সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ে রাখা হয়েছে।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার হুমায়ুন কবির পিপিএম বলেন, আমাদের গোয়েন্দা টিমের নজরদারি রয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে এধরণের অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, খুলনার সদর থানাধিন কয়লাঘাট এলাকা বসবাসকারী ইশরাত ইভা ও তার স্বামী শেখ রানা ফেসবুকের ওই দুষ্ট চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন। তারা নিজেদেরকে সাংবাদিক হিসেবে জাহির করে নগরীতে নানা ধরণের অপকর্ম করে আসছে। গোপালগঞ্জের একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের নাম ব্যবহার করে এরা সহজেই যেকোন অপকর্ম করে পার পেয়ে যাচ্ছে। আইনশৃংখলা বাহিনীর কতিপয় সদস্যদের সাথেও রয়েছে এদের সখ্যতা। তাদের সোর্স হিসেবে কাজ করে। তবে এই দৃশ্যমান কাজের আড়ালে চলে তাদের মাদক ও দেহ ব্যবসা। কতিপয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নারী দ্বারা ম্যনেজ করা এদের নিত্য নৈমিত্তিক কাজ। আর সেজন্যই নাকি এদের ছুঁতে পারেনা আইনের হাত। প্রসঙ্গত: খালিশপুর থানায় এদের বিরুদ্ধে মাদকের তিনটি মামলা রয়েছে। রাতভর এই চক্রটি বিলাসবহুল গাড়িতে চড়ে শহরজুড়ে ইয়াবা সরবরাহ করে বলেও একটি সূত্রে জানা গেছে। সূত্রটি আরও দাবি করেছে, সম্প্রতি খালিশপুর বঙ্গবাসী স্কুলে হত্যাকান্ড ঘটার নেপথ্যে রয়েছে চক্রটির মাদক ব্যবসা।

অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে, ২০১৭ সালের ২৬জানুয়ারি নগরীর খালিশপুর থানায় চাঁদাবাজি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে ইশরাত ইভা ও তার স্বামী শেখ রানার বিরুদ্ধে মামলা করেন একজন ব্যবসায়ী (মামলা নং-৩২)। মামলাটির তদন্ত শেষে এ দম্পতিকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে ওই মামলাটি। এছাড়া খুলনার মহানগর দায়রা জজ আদালতে চাঁদাবাজির মামলাটি বিচারাধীন রয়েছেন। এ মামলা দু’টিতে তারা জামিনে রয়েছেন বলে আদালত সুত্র নিশ্চিত করেছে। এছাড়া ফেসবুকে কুৎসা রটানো ও নানা অপরাধের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ৬জুন খালিশপুর থানায় জিডি নং-২০৪৮, ২০১৬ সালের ২৫ জানুয়ারি জিডি নং ১০৬৬, একই বছরের ১৫ মে খালিশপুর থানায় জিডি ৪৫৯ নম্বর জিডির সন্ধান মিলেছে।