খুলনায় পানি সংকট তীব্রতর হচ্ছে

0
814

এম জে ফরাজী, খুলনাটাইমস:
শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই খুলনার অধিকাংশ এলাকায় পানি সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ওয়াসার সরবরাহ লাইনে পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যাচ্ছে না, দিনের বেলা পর্যাপ্ত পানি উঠছে না গভীর নলকূপেও। বাসা-বাড়িতে ব্যবহৃত মোটরগুলোও ঠিকমতো ভূগর্ভস্থ পানি তুলতে ব্যর্থ হচ্ছে। এ অবস্থায় সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন নগরী ও জেলার অধিকাংশ এলাকার মানুষ।
খুলনা ওয়াসা সূত্র জানায়, ওয়াসার চারটি জোনের ৮৫টি গভীর নলকূপ থেকে মহানগরীর ৩১টি ওয়ার্ডে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এ নগরে প্রতিদিন পানির চাহিদা ১১ কোটি লিটার। চাহিদার ৪০ ভাগ পানি খুলনা ওয়াসা সরবরাহ করতে পারে। বাকী ৬০ ভাগ নগরিকরা গভীর-অগভীর নলকূল (টিউবওয়েল), নদী, খাল পুকুরসহ অন্যান্য উৎস থেকে সংগ্রহ করে। চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে মহানগরীতে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ৩৩ থেকে ৩৫ ফিট নিচে নেমে গেছে। শীত ও বর্ষা মৌসুমে পানিরস্তর ১৮ থেকে ২০ ফিটের মধ্যে অবস্থান করে। বর্তমানে খুলনা ওয়াসার পাম্প স্টাটিং ওয়াটার স্তরও সমস্যায় রয়েছে। ফলে পাম্প দীর্ঘ সময় ধরে চালাতে হচ্ছে। ওয়াসার গভীর নলকূপগুলো ভোর ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত টানা চালিয়েও চাহিদা মাফিক পানি সরবরাহ করতে অসুবিধা হচ্ছে। শহরের পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন উপজেলাও পানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করছে।
জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপকূলের বিশেষ করে বাগেরহাটের মংলা, খুলনার দাকোপ, কয়রা, সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার মানুষ বছরে অন্তত ৬ মাস তীব্র সংকটকাল অতিবাহিত করে। এ সময় ৪-৫ বা ৮-১০ কিলোমিটার দূর থেকেও পানি সংগ্রহ করতে হয়। এক কলস খাওয়ার পানি সংগ্রহ করতে ক্ষেত্রবিশেষে প্রতিদিন এক ঘণ্টা বা তার চেয়েও বেশি সময় তাদের ব্যয় করতে হয়। এসব এলাকায় যেসব টিউবওয়েল রয়েছে সেগুলোও শুষ্ক মওসুমে পানি স্বাভাবিক লেয়ারের নিচে নেমে যায়। যে কারণে ভূগর্ভ থেকে পানি উত্তোলন করা সম্ভব হয় না। ফলে স্বাভাবিক অবস্থা বিবেচনায় এনে ও দাতা সংস্থা ইউনিসেফের অর্থায়নে বাংলাদেশ সরকার খুলনার চার উপজেলাসহ সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটে মোট ৯৪টি অ্যাকুইফার রিজার্ভ পরীক্ষামূলকভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মো. জাহিদ পারভেজ বলেন, খুলনায় ২৬টি অ্যাকুইফার রিজার্ভ পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি করা হয়েছে। এগুলোর সুফল পাচ্ছে স্থানীয় লোকজন। এছাড়াও ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ও পিএসএফগুলোও সচল করার চেষ্টা চলছে। দাকোপ ও কয়রাসহ অন্যান্য উপজেলায় সাড়ে ১২শ’ রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং চালু রয়েছে।
পানি সংকটের বিষয়ে দাকোপ উপজেলার নলিয়ান গ্রামের স্কুল শিক্ষক আবুল কালাম বলেন, পৌষের মাঝামাঝি সময় থেকেই এলাকার অধিকাংশ পুকুরের পানি শুকিয়ে গেছে। নলকূপেও পানি উঠছে না। তিনি জানান, খাবার পানি আনার জন্য এখানকার নারীদের পায়ে হেঁটে দুই-তিন কিলোমিটার দূরে যেতে হচ্ছে।
ডুমুরিয়ার বাসিন্দা আলী বাদশা ফেসবুকে লেখেন, ‘শোভনা ইউনিয়নের কিছু এলাকাজুড়ে চরম খাবার পানি সংকট দেখা দিয়েছে। সরকার দ্রুত ব্যবস্থা না গ্রহণ করলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। এলাকার জনগন খুবই অসহায় হয়ে পড়েছে, বিশেষ করে বাদুরগাছা, বাগাআচড়া মানুষ খাওয়ার পানি পাচ্ছে না ২/৩ দিনের ভিতরে অবস্থা আরও খারাপ হবে।’
খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আব্দুল­াহ পিইঞ্জ বলেন, খুলনার পানি সংকট নিরসনে ২০১১ সালে রূপসার সামন্তসেনা এলাকায় ৬৪ একর জমিতে ৭৭ কোটি ৫০ লাখ লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন রিজার্ভার ও ট্রিটমেন্ট প্লান্ট তৈরীর কাজ শুরু হয়েছে। যেটি এখন শেষ পর্যায়ে। ওয়াসার এই মেগা প্রকল্পের আওতায় মধুমতি নদীর পানি পরিশোধন করে সরবরাহ করা হবে নগরীতে। সেপ্টেম্বর থেকে প্রতিদিন পাইপ লাইনে আরও ১১ কোটি লিটার পানি পাবে নগরবাসী। ফলে পানির সংকট কমার পাশাপাশি ভূ-গর্ভস্থের ওপর চাপ কমবে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি আরও জানান, এছাড়াও নগরীতে ৭টি রিজার্ভার ও ১০টি ওভারহেড ট্যাংক নির্মাণ এবং ৬৫০ কিলোমিটার পাইপ লাইন বসানোর কাজ শেষ হবে জুন মাসে। প্রকল্পের আওতায় প্রতিদিন পাইপ লাইনে পাওয়া যাবে ১১ কোটি লিটার পানি। বর্তমানে ওয়াসার গ্রাহক ১৮ হাজার, আর নতুন করে পানির সংযোগ দেয়া হচ্ছে ৪৫ হাজার গ্রাহককে। প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে কমবে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন। নগরীর ১৫ লাখ মানুষের প্রতিদিন ২৪ কোটি লিটার পানির চাহিদার বিপরীতে বর্তমানে খুলনা ওয়াসার সরবরাহ সাড়ে ১১ কোটি লিটার। ফলে প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ঘুচবে পানি সংকট। জাইকা ও এডিবির আর্থিক সহযোগিতায় প্রকল্পটিতে ব্যায় হচ্ছে ২ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা।