খুলনায় তিন সাংবাদিকসহ ৫টি ওএমএস’র ডিলারশীপ বাতিলে প্রশাসনের ৬ সুপারিশ

0
793

নিজস্ব প্রতিবেদক:
খুলনা মহানগরীর ওএমএস পণ্য বিক্রয়ে অনিয়মের দায়ে সাংবাদিক সাঈয়েদুজ্জামান সম্রাটের মালিকানাধীনসহ ৫টি ডিলারশীপ বাতিলের সুপারিশ করেছে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি। এছাড়া অন্য ডিলারদের সুনির্দিষ্ট দোকান, গুদামের সক্ষমতা যাচাইপূর্বক ১ মাসের মধ্যে প্রতিবেদন পাঠাতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। বাতিলের জন্য সুপারিশ করা প্রতিষ্টানগুলো হচ্ছে সুলতানা এন্টারপ্রাইজ, এসএম এন্টারপ্রাইজ, রুবেল স্টোর, নির্মাণ এন্টারপ্রাইজ ও জোহরা এন্টারপ্রাইজ। এদিকে ওএমএস সংক্রান্ত যে কোন সিদ্ধান্ত নেয় বিভাগীয় কমিশনার ও আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি। তবে একমিটির কাছে এখনও প্রতিবেদনটি পৌছায়নি। প্রতিবেদন পাওয়া মাত্রই বিধিমোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানা গেছে।
এবিষয়ে খুলনাটাইমস’র এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় ওএমএস সংক্রান্ত বিভাগীয় কমিটির সদস্য সচিব ও খুলনার আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো: মাহবুবুর রহমানের সাথে। তিনি বলছেন, এখনও তার হাতে তদন্ত প্রতিবেদনের অনুলিপি পৌছায়নি। কাজেই এনিয়ে কোন মন্তব্য করা মুশকিল। তবে তিনি আশ^স্ত করেছেন, তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়া মাত্রই ওএমএস সংক্রান্ত বিভাগীয় কমিটির সভাপতি খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে বৈঠক ডেকে সেখানে উপস্থাপন করা হবে। অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খুলনা জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জিয়াউর রহমান স্বাক্ষরিত ওএমএস (oms) পণ্য বিক্রয়ের অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডিলারশীপ লাইসেন্স বাতিলকরণ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের সুপারিশসমূহ পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো। ৫ মে ৪১৭ নং স্মারকের এই প্রতিবেদনে বলা হয়, মো: সাঈয়েদুজ্জামান সম্রাাট, ওএমএস ডিলার এর বিরুদ্ধে ওএমএস পণ্য বিক্রয়ের অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত তদন্ত কমিটি ওএমএস নীতিমালা-২০১৫ অনুযায়ী সরেজমিনে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদনের সার্বিক পর্যালোচনায় নিম্নোক্ত সুপারিশমালা প্রদান করা হয়:-
(ক) সুলতানা এন্টারপ্রাইজ অঙ্গীকারনামায় উল্লেখিত স্থান খাদ্য বিভাগকে না জানিয়ে অন্যত্র স্থানান্তর করায়, তার দোকানের গুদাম ওএমএস-এর জন্য উত্তোলিত মালামাল রাখার জন্য যথেষ্ট না হওয়ায়, তার এবং তার ছোটভাই এম ওয়াহিদুজ্জামান (এস, এম এন্টারপ্রাইজ) এর নামে দুটি ডিলারশীপ থাকায়, উভয় ডিলারশীপ লাইসেন্স বাতিল করা যায়।
(খ) এইচ, এম আলাউদ্দিনের নামীয় নির্মাণ এন্টারপ্রাইজ এর ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাস হতে দোকান না থাকা স্বত্বেও ওএমএস-এর মালামাল উত্তোলন করায় উক্ত ডিলারশীপ লাইসেন্স বাতিল করা যায়। ২০১৯ সাল হতে তিনি ৩০/৪০ বার মালামাল উত্তোলন করেছেন। নির্দিষ্ট দোকান না থাকায় তিনি উক্ত মালামাল কোথায়, কিভাবে বিক্রয় করেছেন তা স্পষ্ট নয়। উত্তোলিত মালামাল তিনি আত্মসাৎ করেছেন কিনা-এই বিষয়ে অনুসন্ধান/তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন, খুলনাকে অনুরোধ করা যায়।
(গ) রুবেল ষ্টোর তার মোবাইল নম্বর (০১৭৯০-৫৭০৭০০) ব্যবহার করে পারস্পরিক যোগসাজশের মাধ্যমে নির্মাণ এন্টারপাইজ ও জোহরা এন্টারপ্রাইজের মালামাল উত্তোলন করায়, খাদ্য অফিসের অনুমতি ছাড়া নিজ দোকান অন্যত্র স্থানান্তর ও নির্মাণ এন্টারপ্রাইজের কোন দোকান না থাকা স্বত্বেও নীতিমালা ভঙ্গ করে উক্ত মালামাল উত্তোলনে সহায়তা করায়, রুবেল ষ্টোরের ডিলারশীপ লাইসেন্স বাতিল করা যায়।
(ঘ) জোহরা এন্টারপ্রাইজের দোকানটি হুমায়ুন কবির বর্তমানে পরিচালনা করেন না। তারা নিজেদের মালামাল নিজেরা উত্তোলনও করেন না। অঙ্গীকারনামা অনুসারে মালামাল তিনি নিজে সময়মত উত্তোলন করার কথা। এতে জোহরা এন্টারপ্রাইজের অত্র ডিলারশীপ চালিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে সক্ষমতা নেই মর্মে প্রতীয়মান হয়। এমতাবস্থায়, জোহরা এন্টরাপ্রাইজেরও ডিলারশীপ বাতিল করার জন্য সুপারিশ করা হলো।
(ঙ) সুলতানা এন্টারপ্রাইজ, এস এম এন্টারপ্রাইজ, রুবেল ষ্টোর ওএমএস ডিলারশীপ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য গোপন করায় এই সংক্রান্ত নীতিমালার শর্ত ভঙ্গ করায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট, খুলনাকে অনুরোধ করা যায়।
(চ) খুলনা মহানগরীতে ওএমএস-এর যে সকল ডিলার রয়েছে তাদের সুনির্দিষ্ট দোকান, গুদামের সক্ষমতা ইত্যাদি বিষয়ে যাচাই পূর্বক ০১(এক) মাসের মধ্যে জেলা প্রশাসক, খুলনা বরাবর প্রতিবেদন প্রদানের জন্য জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে বলা যেতে পারে।
সুত্র জানায়, ওএমএস ডিলার সাঈয়েদুজ্জামান সম্রাট সাংবাদিকতার পরিচয় ব্যবহার করে তিনি ভিন্ন ভিন্ন নামে ওএমএস এর একাধিক লাইসেন্স করেছেন। এসব লাইসেন্সের বিক্রয় কেন্দ্রসহ সত্বাধিকারীর কোন অস্তিত্ব নেই। নীতিমাল অনুসারে সরকারি মূল্যে চাল-আটা ক্রয় করে খোলা বাজারে বিক্রয় করতে হবে। যেহেতু লাইসেন্সের অনুকুলে বিক্রয় কেন্দ্র নেই, সেহেতু এই পণ্য কালো বাজারে বিক্রয় হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব কাজ তিনি সাংবাদিকতার পরিচয়ের পাশাপাশি খাদ্য অধিদপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তাকে (তদারকি) উৎকোচের দিয়ে করে আসছেন। ওএমএস’র ডিলার তিনজন স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিক। এরা হলেন, সাঈয়েদুজ্জামান মোল্লা সম্রাট ও তার ভাই এম ওয়াহিদুজ্জামান এবং এইচএম আলাউদ্দিন।
আরও জানা যায়, করোনা ভাইরাসের কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে সব কিছু বন্ধ করে দেয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে দরিদ্র মানুষদের মাঝে ১০ টাকা কেজির চাল বিতরণ কর্মসূচি চালু হয়। এছাড়া ১৮ টাকা কেজি ধরে আটা বিক্রি কার্যক্রম সারা বছর ধরে চলমান রয়েছে। এ জন্য খুলনায় ৮৯ জন ডিলার নিয়োগ করা হয়। সাঈয়েদুজ্জামান সম্রাটও নিজ নামে ডিলারশীপ নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম করেন। যার প্রেক্ষিতে খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন ১৬ এপ্রিল ৫ সদস্যের এই তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির আহŸায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ ইউসুফ আলী, সদস্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ এনএম ওয়াসিম ফিরোজ, দুদকের উপ পরিচাকল মোঃ নাজমুল হাসান, খুলনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এবং জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মুহাম্মদ তানভীর রহমান। তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। এই কমিটি তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপর খুলনা জেলা প্রশাসন প্রতিবেদনের আলোকে উল্লেখিত সুপারিশ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ওএমএস সংক্রান্ত বিভাগীয় কমিটির কাছে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠায়। এখনও এই কমিটি এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি।