খুলনায় অনৈতিক সম্পর্কের ফাঁদে ফেলে ব্লাকমেইলিং চক্রের দুই সদস্য গ্রেফতার

0
716

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ খুলনায় অনৈতিক সম্পর্কের গোপনে ভিডিও ফুটেজ তৈরি করে ব্লাকমেইলিং চক্রের দুই সদস্য গ্রেফতার হয়েছে।

সোমবার (২৪ সেপ্টেম্বর) র‍্যাব-৬ এক বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে এই চক্রের দুই সদস্য গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন ছোট বয়রার করিম নগর এলাকার বাসিন্দা মৃত-কাজী আব্দুর রউফেএ ছেলে কাজী আব্দুল মুনিম(২৮) ও তার স্ত্রী মোসাঃ তানজিলা হাসান ঝুমা (২৪),

র‍্যব-৬ এর স্পেশাল কোম্পানী কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ এনায়েত হোসেন মান্নান দুপুরে র‍্যাব-৬ কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিং এ বলেন, গত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখ অনুমান ৩টা ১৫ মিনিটের সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে, খুলনা মহানগরের খুলনা সদর থানাধীন নিরালা আবাসিক এলাকার কতিপয় ব্যক্তিকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বা কৌশলে তাদের কে নিয়ে মহিলা দ্বারা আপত্তিকর ছবি উত্তোলন করে তা ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এইরুপ সংবাদের ভিত্তিতে একটি চৌকস আভিযানিক দল  অনুমান রাত ০৪.০৫ ঘটিকায় উক্ত স্থানে অভিযান পরিচালনা করিলে আসামীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে,  গত-০৪ বছর পূর্বে ভুক্তভোগী ওয়াজেদ আলী নামক ব্যাক্তিকে উক্ত আসামীরা আলী ক্লাবের মোড়ে একটি তিনতলা বাড়ির নিচতলা রুমের মধ্যে ব্যবসায়িক কাজের কথা বলে নিয়ে যায়।সেখানে একটি মেয়েকে দিয়ে নানা রকম আপত্তিকর ছবি ও প্রায় ২০ মিনিটের ভিডিও তুলে অপরাধীচক্র তাদের কাছে রাখে এবং উক্ত আসামীরা ধারণকৃত ছবি ও ভিডিও গুলো বিভিন্ন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ছাড়বে বলে টাকা দাবী করে এবং ভুক্তভোগী ওয়াজেদ আলীর কাছ থাকা চেক বই জোড় পূবর্ক স্বাক্ষর করিয়ে আসামী কাজী আব্দুল মুনিম তাৎক্ষনিক ভাবে আট লক্ষ টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নেয়।পরে উক্ত ভুক্তভোগী ওয়াজেদ আলীর ছেলে মোঃ তৌহিদুজ্জামান সুমনের নিকট থেকে দুই লক্ষ টাকা আদায় করে ।এছাড়া ভুক্তভোগী ওয়াজেদ আলীর স্ত্রীকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে তার কাছ থেকে আরো বিশ লক্ষ টাকা আদায় করে অর্থ্যাৎ উক্ত পরিবারটিকে ব্ল্যাক মেইল করে ধাপে ধাপে প্রায় ত্রিশ লক্ষ টাকা আদায় করে।

উক্ত আসামীরা ত্রিশ লক্ষ টাকা নিয়েই ক্ষ্যান্ত হয়নি, কয়েক বছর চুপ থাকার পর পুনরায় গত ১৮ই সেপ্টেম্বর ০১৭৭২-৭৮৭৫৩৯ ও ০১৬৭০-৪৬১৫৯৭ নম্বর থেকে পুনরায় পঁঞ্চাশ হাজার টাকা দাবী করে। ওয়াজেদ আলীর পরিবার বার বার এতো টাকা দিতে পারবে না বলে বিধায় বিষয়টি স্থায়ী ভাবে সমাধানের কথা বললে রেশমা নামক একজন আসামী স্থায়ীভাবে বিষয়টি সমাধান করার জন্য আরো বিশ লক্ষ টাকা দাবী করে এবং ০১৭৩২-১৪৪১৬০ (বিকাশ) নাম্বারে প্রদান করে।

এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর রাত্র অনুমানিক আটটার সময় ০১৭৩২-১৪৪১৬০ নম্বর থেকে আরো দশ হাজার টাকা করে দুইবার মোট বিশ হাজার টাকা প্রেরণ করে। লএর পরেও আসামীরা মোবাইল ০১৬৭০-৪৬১৫৯৭ ও ০১৭৭২-৭৮৭৫৩৯ নম্বরের মাধ্যমে প্রাথমিক দাবীর বাঁকি ত্রিশ হাজার টাকা দাবী করতে থাকে।

এছাড়াও আসামীরা ভুক্তভোগীর পুত্রবধু শ্রাবনীর ফেইসবুকের মাধ্যমে অশালীন ভাষা এবং আপত্তিকর স্টীল ছবি আপলোড দিয়ে ভিডিও ইউটিউবে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিতে থাকে।ফলে ভিকটিমের পরিবার বিষয় সম্পর্কে খুলনা সদর থানায় ২০ সেপ্টেম্বর সাধারণ ডায়েরী করে। যাহার নং-১২৪০ এবং উক্ত ডায়েরীর কপি সহ র‌্যাব-৬ খুলনার নিকট একটি অভিযোগ দাখিল করে।

এরই প্রেক্ষিতে আমরা র‌্যাব-৬ এর পক্ষ থেকে তথ্য ও প্রযুক্তি ও বিকাশ অথরিটির সহায়তায় বিষয়টি যাচাই করতে থাকি এবং এক পর্যায়ে আসামীদের আটক করতে সক্ষম হই।

আসামীদের তাৎক্ষনিক দাবীকৃত বাকি ত্রিশ হাজার টাকার মধ্যে আসামীদের ২০ সেপ্টেম্বর ০১৭২১১৩১৫৯৩  নাম্বারে বার হাজার দুইশত চল্লিশ টাকা ভুক্তভোগী পরিবার প্রদান করে এবং ০১৭৩৪৯৪৩০৯৭ নম্বরে দশ হাজার টাকা প্রেরণ করে। উক্ত মোবাইল নম্বরগুলি আসামী মোসাঃ তানজিলা হাসান ঝুমার নম্বর বলিয়া জানা যায়। এছাড়া আসামী ঝুমার ০১৭২১১৩১৫৯৩ নাম্বারে প্রেরিত বার হাজার দুইশত চল্লিশ টাকা হইতে দশ হাজার টাকা তাহার অন্য একটি নাম্বার ০৭৯১৬৮৬৬৬৮ বিকাশ একাউন্টে ট্রাংজেকশন হয় যাহা আসামী ঝুমার নামে রেজিস্ট্রেশনকৃত বলে জানা যায়। এছাড়া আসামী ঝুমার মোবাইল ০১৭৩৪৯৪৩০৯৭ নম্বর থেকে প্রেরণকৃত দশ হাজার টাকা হইতে নয় হাজার টাকা ০১৭৫৫৯০০০০৭ নাম্বারে প্রেরন করে।যাহা মোসাঃ তানজিলা হাসান ঝুমার নামে রেজিস্টেশন আছে বলে জানা যায়। উক্ত মোবাইল নম্বর হইতে ০১৭৯১৭৪১৫৮৫ নাম্বারে তিন হাজার পাঁচশত টাকা প্রেরণ করে এবং উক্ত মোবাইল নম্বরটি আসামী ঝুমার ফুফুর নামে রেজিস্ট্রেশন আছে বলে জানা যায়। আসামীরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে ভুক্তভোগী ও ভুক্তভোগীর পরিবারবরকে ফেইসবুকে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ছাড়ার হুমকি প্রদান করে এবং কিছু ছবি ফেইস বুকে ছেড়ে নানাবিধ ভয়ভীতি মূলক কথা ফেসবুকে জানায় ও  বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে সর্বমোট
ত্রিশ লক্ষ বিয়াল্লিশ হাজার টাকা গ্রহণের পাশাপাশি স্থায়ী সমস্যা সমাধানের নামে আরো বিশ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা বর্ণিত ঘটনার সাথে জড়িত বলে স্বীকার করে।

আসামীর নিকট হতে ইন্টারনেটের প্রেরণকৃত কাগজপত্রের ফটোকপি-৪০ পাতা,প্রতারনার কাজে ব্যবহৃত সীম-১২ টি, মেমোরি কার্ড-০১ টি,সীমসহ  মোবাইল ফোন-০১ টি উদ্ধার করা হয়।আসামীর বিরুদ্ধে খুলনা মহানগরের সোনাডাঙ্গা থানায় তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে তৎসহ দন্ড বিধি আইনে মামলা রুজু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।