খুলনায় জোড়াগেট পশুর হাটে টার্গেট অনুযায়ী হাসিল আদায়ে ব্যার্থ হাট কর্তৃপক্ষ

0
603

নিজেস্ব প্রতিবেদকঃ এবারের খুুুুলনা জোড়াগেট পাইকারি কোরবানী পশুর হাটে টার্গেট অনুযায়ী হাসিল আদায়ে ব্যার্থ হয়েছে কুরবানীরর পশুর হাটের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আট কারণে এবার প্রথম জোড়াগেট কুরবানির পশুর হাটে হাসিল আদায়ের সফলতায় চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। খুলনা সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত এ হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সকল সুযোগ সুবিধা বিদ্যামান থাকা সত্ত্বেও কেন হাসিল আদায়ে টার্গেট পূরণ হলো না তা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন।

তারা মনে করেন, হাটে পশু (গরু-ছাগল) সরবরাহ বিগত বছরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ছিল। বিগত বছরের তুলনায় এবার হাটে ক্রেতার আগমন কম ছিল। ২০১৭ সালে এ হাটে পশু সঙ্কট দেখা দেয়ায় নগরবাসী আগেভাগে অন্যত্র থেকে পশু ক্রয় করে। হাট উদ্বোধনের পরপরই হাটে আগত পশুর দাম তুলনামূলকভাবে বেশি চাওয়া। ক্রেতার চেয়ে হাটে পশুর আগমন বেশি হওয়া। শেষ দিকে পশুর দাম কমে যাওয়া। কম দামেই পশু বিক্রি করা। প্রায় পাঁচ হাজার পশু হাট থেকে অবিক্রীত অবস্থায় ফেরত যাওয়া।

এবার পশুর হাটের হাসিল আদায়ের টার্গেট ছিল ২ কোটি ৪০ লাখ ২৯ হাজার টাকা। কিন্তু হাসিল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৬৫ লাখ ৩৫ হাজার ৮৮১ টাকা। পশু বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার ৩২টি। এর মধ্যে গরু ৫ হাজার ৩৮২টি ও ছাগল ১ হাজার ৬৪২টি বিক্রি হয়। গত বছর হাসিল আদায়ের টার্গেট ধরা হয় ২ কোটি ৬ লাখ ৫০ হাজার ৯৩৩ টাকা, কিন্তু আদায় হয় ২ কোটি ১০ লাখ ৩০ হাজার ৩৪৩ টাকা। মোট পশু বিক্রি হয় ৮ হাজার ৪০৩টি। এর মধ্যে গরু ছিল ৬ হাজার ৭৩৭টি, ছাগল ১ হাজার ৬৫৭টি আর ভেড়া ৫টি। গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় ১৪শ’ পশু কম বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে গরু বিক্রি কম হয়েছে ১৩শ’ ৫৫টি। তবে ছাগল বিক্রি প্রায় একই রকম হয়েছে। এবার হাটে পশু আসে ১২ সহ¯্রাধিক। বিক্রি করতে না পেরে প্রায় ৫ হাজার পশু ফেরত নিয়ে যায় ব্যাপারীরা। ২০১৭ সালে হাটে ১০ হাজার পশু আসে। দেড় হাজার পশু বাদে সব বিক্রি হয়ে যায়। এ দেড় হাজার পশু অসুস্থসহ নানা কারণে বেপারিরা ফেরত নিয়ে যায়। এতে করে ওই বছর শেষ মুহূর্তে এসে পশু সঙ্কট দেখা দেয়। এ সুযোগটি গ্রহণ করে বেপারিরা। তারা চড়া মূল্যে পশু কুরবানিদাতাদের নিকট বিক্রি করে। কুরবানিদাতারাও বাধ্য হয়ে চড়া দামে পশু ক্রয় করে। এতে করে হাসিলও পাওয়া যায় বেশি। এভাবেই গত বছর কেসিসি হাসিল আদায়ের টার্গেট পূরণ করে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়।

সূত্রগুলো আরও জানায়, এবার পশুর হাটের বিট মূল্য ধরা হয়েছে ২ কোটি ৪০ লাখ ২৯ হাজার ৪১৫ টাকা। গতবারের চেয়ে এবার বিট মূল্য বেশি ধরা হয়েছে ৩৬ লাখ টাকা। কোরবানির পশুর কেনাবেচার জন্য প্রতিবছর নগরীর জোড়াগেট পাইকারি কাঁচা বাজারে পশুর হাট বসায় কেসিসি। আগে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হাট পরিচালনা করতো। ২০০৯ সালে হাট থেকে কেসিসির আয় ছিল ৪৭ লাখ টাকা। ২০১০ সালের পর থেকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় হাট পরিচালনার উদ্যোগ নেয় কেসিসি। সেই থেকে হাটের মাধ্যমে কোটি টাকার রাজস্ব আয় করছে কেসিসি। গত বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে হাটের বিট মূল্য ছিল ২ কোটি ৬ লাখ ৫০ হাজার ৯৩৫ টাকা। কিন্তু হাসিল আদায় হয় ২ কোটি ১০ লাখ ৩০ হাজার ৩৪৩ টাকা। বিট মূল্যের চেয়ে ৪ লাখ টাকা বেশি রাজস্ব আয় হয়। ২০১৬ সালে হাসিল আদায় হয় ১ কোটি ৯৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫৪৩ টাকা। ওই বছর পশু বিক্রি হয় ৯ হাজার ২৪৪টি, এর মধ্যে গরু ছিল ৭ হাজার ৬২৭টি, ছাগল ছিল ১ হাজার ৬১২টি ও ভেড়া ছিল ৫টি। ২০১৫ সালে হাসিল আদায় হয় ১ কোটি ৭৭ লাখ ৩০ হাজার ৪৩০ টাকা। ওই বছর পশু বিক্রি হয় ৯ হাজার ৩২৪টি, এর মধ্যে গরু ছিল ৭ হাজার ৯০৮টি, ছাগল ছিল ১ হাজার ৪১৬টি। ২০১৪ সালে পশুর হাটে ১০ হাজার ১৫৫টি পশু বিক্রি হয়েছে। রাজস্ব আয় হয় ১ কোটি ৫৪ লাখ ৪২ হাজার ৪২০ টাকা। ২০১৩ সালে হাটে ৮ হাজার ৮৯১টি পশু বিক্রি থেকে রাজস্ব আয় হয় ১ কোটি ২৬ লাখ ৬ হাজার ৫১৮ টাকা। ২০১২ সালে হাট থেকে ৭ হাজার ৬২৯টি পশু বিক্রি থেকে আয় হয় ১ কোটি ৬ লাখ ৩২ হাজার ৫৯৮ টাকা। ২০১১ সালে আয়ের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৬ লাখ ৫৮ হাজার ৭১ টাকা। বিক্রি হয়েছিল ৮ হাজার ৩৯৬টি পশু।

কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পলাশ কান্তি বালা বলেন, পশুরহাটে হাসিল আদায় কেন বিপর্যয় ঘটেছে তা সভা না করে বলা যাচ্ছে না। কারণ রোববারই প্রথম অফিস খুলেছে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে ধারণা করা হচ্ছে, হাটে পশু সরবরাহ পর্যাপ্ত ছিল আর ক্রেতা সমাগম কম ছিল। তারা আগেভাগে অন্যত্র থেকে পশু ক্রয় করে। এর প্রভাব হাসিল আদায়ের টার্গেট পূরণে পড়তে পারে বলে তিনি মনে করেন। পশুর হাটে যারা ঠিকমত ডিউটি পালন করেনি তাদের হাজিরা কাটা হয়েছে। তবে কতজনকে অনুপস্থিত দেখানো হয়েছে তা তিনি জানাতে পারেননি।

হাট পরিচালনা কমিটির আহবায়ক কাউন্সিলর মো. শামসুজ্জামান মিয়া স্বপন বলেন, এবার হাটে পশু সরবরাহ বেশি ছিল কিন্তু ক্রেতা ছিল তুলনামূলকভাবে কম। কারণ জোড়াগেট কুরবানির পশুর হাটের ইতিহাসে এবারই প্রথম প্রায় পাঁচ হাজার পশু বিক্রি না হয়ে ফেরত যায়। এমন কি হাটের শেষ দিন ১০ ট্রলার ও পাঁচ ট্রাক পশু হাটে নামেনি। হাটে বিগত বছরের তুলনায় এবার পশু সরবরাহ ছিল অনেক বেশি। ক্রেতার মাঝে আতঙ্ক ছিল কারণ বিগত বছরে তারা পশু না পেয়ে অনেকে ফেরত যায়। এছাড়া বেপারিরা প্রথমে পশুর দাম বেশি চায়। এসব দিক বিবেচনা করে ক্রেতারা বাইরে থেকে পশু ক্রয় করে। শেষের দিকে যেসব পশু বিক্রি হয়েছে তা লোকসান দিয়ে বিক্রি করা হয়েছে। যার জন্য হাসিল তেমন পাওয়া যায়নি। এসব কারণে এবার হাসিল আদায়ের টার্গেট পূরণ সম্ভব হয়নি বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।

বাজার সুপার গাজী সালাউদ্দীন বলেন, জোড়াগেট পশুর হাটে শেষ মুহূর্তে পশুর দাম কমে যায়। কারণ, এবার হাটে পর্যাপ্ত গরু এসেছে। সরবরাহ বিগত বছরের তুলনায় বেশি ছিল। এত পরিমাণে হাটে গরু আসে রাখার জায়গা দিতে হিমশিম খেতে হয়। কিন্তু হাটে ক্রেতা সমাগম কম হয়। এবার বেপারিরা পানির দামে পশু বিক্রি করেছে। গত বছর ক্রেতারা পশু না পেয়ে চড়া দামে পশু ক্রয় করে। এবার কুরবানিদাতাদের বড় একটি অংশ এ হাটে না এসে কৃষকের বাড়ি থেকে বা অন্য হাট থেকে আগেভাগে পশু ক্রয় করেছে। এছাড়া হাটের শুরুতে বেপারিরা পশুর দাম চড়া চেয়েছিল। এতে করে হাটে আসা ক্রেতারা অন্যত্র চলে যায়। কিন্তু শেষ দিকে এসে সেই পশুই বেপারিরা ১৫-২০% কম দামে বিক্রি করে। এতে করে হাসিল আদায়ও কম হয়।