খুলনায় ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতার ছেলের নেতৃত্বে অস্ত্র ও ইয়াবা সিন্ডিকেট!

0
543

টাইমস রিপোর্ট: চরমোনাই পীরের রাজনৈতিক দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির সেক্রেটারি জেনারেল ডাঃ মোখতার হোসাইনের ছোট ছেলে হাসান জামিল ওরফে জামিলের বিরুদ্ধে খুলনায় অস্ত্র ও মাদক সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তার নেতৃত্বে সিন্ডিকেটের কয়েকজন সদস্য দীর্ঘদিন ধরে নগরীতে অস্ত্র ও ইয়াবা ব্যবসা করছে। বিনিময়ে এ পরিবারটি স্বল্প সময়ের মধ্যে অঢেল অর্থ-সম্পদের মালিক বনে গেছে।
সম্প্রতি একটি নাইন এমএম পিস্তল, গুলি ও ইয়াবাসহ এই সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য রাসেল গাজীকে (৩২) হাতেনাতে গ্রেফতার করে খুলনা সদর থানা পুলিশ। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী গ্রেফতার করা হয় হাসান জামিলকে (২৩)। ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে তাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ।
জানা গেছে, জামিলের মেঝ ভাই মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন ইসলামী যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক। জামিল নগরীর ছোট বয়রা গোলদারপাড়া এলাকার বাসিন্দা। পরিবারটির মালিকানায় বর্তমানে সেফ ড্রিংকিং ওয়াটার এবং সেফ ইসলামালি মাল্টিপারপাস লিমিটেড ও প্লট ব্যবসাসহ একাধিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনার অন্যতম দায়িত্বে রয়েছে তার বড় ভাই ফয়সাল।
এদিকে, হাসান জামিলের বিরুদ্ধে ওঠা অস্ত্র ও মাদক ব্যবসার নেপথ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ। একই সঙ্গে তার সঙ্গে জঙ্গী তৎপরতার কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি-না সেটিও পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খুলনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) ইন্সপেক্টর মোশারেফ হোসেন। এছাড়া জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদে অস্ত্র ও ইয়াবার উৎস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে। একই সঙ্গে এ সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যদেরও গ্রেফতারের বিষয়ে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
পুলিশ জানিয়েছে, গত ২৭ মে ভোর রাতে নগরীর নিরালা আবাসিক এলাকার আব্দুস সালাম গাজীর ভাড়া বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানকালে ওই বাসা থেকে একটি নাইন এমএম বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, ১টি ম্যাগজিন ও ১০ পিস ইয়াবাসহ রাসেল গাজীকে গ্রেফতার করা হয়। সে খুলনার রোহান পরিবহণের মালিক আব্দুর রহিম গাজীর ছেলে। বিষয়টি সম্পর্কে ২৮ মে দুপুরে সদর থানা কম্পাউন্ডে প্রেস ব্রিফিং করেন কেএমপির উপ-কমিশনার (সাউথ) এহসান শাহ। এ ঘটনায় ওই দিনই এসআই রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে অস্ত্র ও মাদক আইনে সদর থানায় দু’টি মামলা দায়ের করেন।
সদর থানার ওসি হুমায়ুন কবির জানান, গ্রেফতারকৃত রাসেল গাজীর সঙ্গে অস্ত্র ও ইয়াবা সিন্ডিকেটের সম্পৃক্ততা রয়েছে। সে জড়িত অন্যদের নামও প্রকাশ করেছে। তাদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে বলেও জানান তিনি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খুলনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) ইন্সপেক্টর মোশারেফ হোসেন রাসেলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই দিনই আদালতে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। ২৯ মে খুলনার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম সুমি আহমেদ শুনানি শেষে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পুলিশ জানায়, রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদকালে রাসেল অস্ত্র ও ইয়াবা সিন্ডিকেটের প্রধান হিসেবে হাসান জামিলের নাম প্রকাশ করে। একই সঙ্গে সে আরও কয়েকজনের নাম জানায়। রাসেল আরও জানায়, উদ্ধারকৃত নাইম এমএম পিস্তলটি সে জামিলের কাছ থেকে ৫৫ হাজার টাকায় কিনেছে। জামিল পিস্তলটি ৫০ হাজার টাকার বিনময়ে সংগ্রহ করে। এর প্রেক্ষিতে পুলিশ ৩১ মে রাতে নগরীর খালিশপুরস্থ কাস্টমস মোড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে শ্বশুর আলমগীর হোসেনের বাসা থেকে হাসান জামিলকে গ্রেফতার করে। ১ জুন জামিলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। ৩ জুন খুলনার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম সুমি আহমেদ শুনানি শেষে ১ দিনের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ মঞ্জুর করেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, হাসান জামিল ৭/৮ বছর আগে বরিশালের চরমোনাই মাদরাসায় লেখাপড়া করতো। সেখান থেকে খুলনায় এসে সে রাসেল ও জিসানসহ বখাটেদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়। এক পর্যায়ে সে অস্ত্র ও ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। মূলত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও নিরালা কেন্দ্রিক তাদের আড্ডা ছিল। সে ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়লে তাকে ‘অশ্রু’ নামে নগরীর একটি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রেও ভর্তি করা হয় পরিবারের পক্ষ থেকে। সর্বশেষ সে নর্দান ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয় বলেও সূত্র জানিয়েছে। হাসান জামিল নিজে এবং তার ভাই মামুন মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তির বিষয়টি স্বীকার করলেও অস্ত্র ও মাদকাসক্তির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তাদের দাবি, তাবলীগ জামাতে গিয়ে রাসেলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর বন্ধুত্ব। এ টুকুই। কোনো অস্ত্র বা ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে সে জড়িত না।
জামিলের বাবা ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা ডাঃ মোখতার হোসাইন দাবি করেছেন, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তার ছেলেকে অস্ত্র মামলায় জাড়ানো হয়েছে। তবে, জামিল কখনই মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি ছিলনা বলেও দাবি করেন তিনি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মোশারেফ হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, ২/১ দিনের মধ্যেই তাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদে অস্ত্র যোগানদাতাদের নাম বেরিয়ে আসতে পারে বলেও ধারণা করেন তিনি। এছাড়া তাদের সঙ্গে জঙ্গী তৎপরতার কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি-না সেটিও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ডা. মোখতার হোসেনের পরিবারের মালিকানায় থাকা সেফ ড্রিংকিং ওয়াটার এবং সেফ ইসলামালি মাল্টিপারপাস লিমিটেড ও প্লট ব্যবসাসহ একাধিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের আয়ের উৎস এবং হঠাৎ করে তাদের আলীশান বাড়ি ও অঢেল অর্থ সম্পদ নিয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে।

তথ্যসূত্র : দৈনিক প্রবাহ