খুলনায় আলোচিত কলেজ ছাত্র শিবলু হত্যা মামলায় পুলিশ সদস্যসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল

0
557

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনাটাইমস:

সরকারী বি এল কলেজের ছাত্র আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল ওরফে শিবলু মোল্লা (২৭) কে ধারালো অস্ত্রাঘাতে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যাকান্ডের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় এক পুলিশ সদস্যসহ ১৪ জন আসামীর বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা রবিবার আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। যা সোমবার (১২ মার্চ) আদালতে উপস্থাপন হবে। সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ চক্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কারনে কলেজ ছাত্র শিবলুকে খুন হতে হয়েছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন ( পিবিআই) ইন্সপেক্টর শেখ আবু বকর রোববার দুপুরে কোর্টের জেনারেল রেজিস্টার অফিসার ( জিআরও)’র কাছে চার্জশিট জমা দেন। চার্জশিট এবং হত্যাকান্ডের আলামতসমূহ সোমবার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত ‘গ’ অঞ্চলে উপস্থাপন করা হবে বলে আদালতের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছেন। এর আগে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদকালে অভিযুক্তদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তিনি তিনটি রাম দা, দুটি ছোরা, একটি লোহার রড ও দু’টি লাঠি হত্যাকান্ডের আলামত হিসেবে জব্দ করেন। যেগুলো কয়েকজন আসামীর বাড়ী এবং ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী ড্রেন থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। এর মধ্যে ১৫ ইঞ্চি সাইজের একটি ছোরার যার বাট নেই। যেটা শিবলুর বুকে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু টেনে বের করার সময় বাটটি খুলে পড়ে যায়। মামলার আই ও এ তথ্য জানিয়েছেন। ১১ পৃষ্ঠার চার্জশিট এবং ২ হাজার ২শ পৃষ্ঠার কেস ডকেটের পাশাপাশি তিনি অলামতগুলোও আদালতে দাখিল করেছেন। অভিযোগপত্রে হত্যাকান্ডের প্রত্যক্ষদর্শী ২৬ জনসহ মোট ৪২ জন সাক্ষীর জবানবন্দিতে নির্মম হত্যাকান্ডের লোমহর্ষক বিবরন ফুঁটে উঠেছে বলে জানা গেছে।
পিবিআই খুলনা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিছুর রহমান তদন্তে পাওয়া তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, শিবলু স্থানীয় সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজদের প্রতিরোধ করতেন। তার প্রতিবাদী ভূমিকার কারনে সন্ত্রাসীদের কর্মকান্ডে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। যে কারনে তারা পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করে।
আসামীদের মধ্যে আরিফ, রহমত, কাশেম, আবু হানিফ, পুলিশ কনেস্টবল মোঃ গোলাম মোস্তফা ওরফে বিপ্লব, ইউসুফ,বাবু এবং জসিম কারাগারে আছেন। শহিদুল, এনামুল শেখ ওরফে ইমা এবং জুয়েল ওরফে কসাই জুয়েল উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। আবুল হোসেন, আবুল হাসান এবং বাবু শরীফ পলাতক রয়েছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২০ জুন, রাত প্রায় সাড়ে ১০ টায় দৌলতপুর দেয়ানা পূর্ব পাড়া হাসপাতাল মোড় এলাকায় একটি বেঞ্চে বসে শিবলু কোল্ড ড্রিঙ্কস খাচ্ছিলেন। এমন সময় ধারালো অস্ত্রে সজ্জিত সন্ত্রাসীরা এসে তার সাথে বাক-বিতন্ডা শুরু করে। এক পর্যায়ে আট জন তাকে এলোপাতাড়ি ভাবে কোপাতে শুরু করে। ১৪ জনের ঘাতক দলের বাকী ছয় সদস্য অস্ত্র হাতে শিবলুকে সে সময় ঘিরে রেখেছিল। মাথায়, ঘাড়ে, বুকে-পিঠে, হাত-পায়ে ধারালো অস্ত্রাঘাতে গুরুতর জখম অবস্থায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষনা করেন। নিহতের পিতা মোঃ ফারুকুজ্জামান ওরফে বাবু মোল্লার দৌলতপুর থানায় দায়ের করা লিখিত অভিযোগ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। তিনি জনৈক রিক্সা চালকের কাছে তার পুত্রের উপর হামলার খবর শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছিলেন। সে সময় আততায়ীদের কয়েকজন তাকেও অস্ত্র হাতে ধাওয়া করে। অবশ্য, তার ডাক চিৎকারে আশ-পাশের লোকজন ছুটে আসলে কিলাররা পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্তভার থানা-পুলিশের হাত ঘুরে (পিবিআই)’র উপর বর্তায়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ইন্সপেক্টর আবু বকর বলেন, স্বাক্ষী ও তদন্ত আসামীরা ঘটনার সাথে জড়িত ছিল এমন অকাট্য তথ্য পাওয়ার পর জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র আদালতে দাখিল করা হয়েছে।

তথ্যসূত্র: তিতাস চক্রবর্তী, সাংবাদিক, খুলনা।