খুলনায় আবারও টিসিবির পেঁয়াজের চাহিদা বেড়েছে

0
479

আজিজুর রহমান, খুলনাটাইমস :
খুলনায় পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেলেই দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পেঁয়াজ কিনেছে মানুষ। মাঝখানে কয়েকদিন নতুন পেঁয়াজের দাম অনেকা নাগালের মধ্যে হওয়ায় এবং তুরস্কের পেঁয়াজের গুণগত মানে ক্রেতা সন্তুষ্ট না হওয়ায় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে কেনার আগ্রহ ছিল না। তবে বর্তমানে পেঁয়াজের দাম নাগালের মধ্যে না থাকায় সপ্তাহখানেক ধরে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আবারও টিসিবির পেঁয়াজ কিনছে মানুষ।

মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) নগরের ময়লাপোতা মোড়ে বেলা ১১টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, ৩৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনতে টিসিবির ভ্রাম্যমাণ দোকানে ভিড় করছেন নানা বয়সী মানুষ। প্রতিদিনই নগরের নির্ধারিত স্থানে ট্রাকে করে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন টিসিবির ডিলারেরা। সকাল থেকে প্রত্যেকটি ট্রাকের সামনেই ছিল দীর্ঘ লাইন। খুলনায় মূলত তুরস্ক থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি করছে টিসিবি।

মঙ্গলবার সকালে গল্লামরীর সাচিবুনিয়া এলাকা থেকে নগরের ময়লাপোতা মোড়ে এসে টিসিবির পেঁয়াজ কিনেছেন সালমা আক্তার নামের এক নারী। তিনি বললেন, পেঁয়াজের দাম চড়া হওয়ার পর রান্নায় পেঁয়াজ ব্যবহার বলতে গেলে ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু পেঁয়াজ ছাড়া রান্নার স্বাদ কোনোমতে সম্ভব না। তাই অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর পেঁয়াজ কিনেতে পেরেছি।

ফের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পেঁয়াজ কিনতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে বাগমারা মেইন রোড এলাকার আকরাম শেখ (৭৫) নামের এক ব্যক্তি বললেন, মাঝখানে নতুন পেঁয়াজের দাম অনেকটা নাগালের মধ্যে হওয়ায় এবং তুরস্কের পেঁয়াজের গুণগত মান ভালো না হওয়ায় কিনতে অনাগ্রহ ছিল। তবে সপ্তাহখানেক আবার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়িতে বেকার বসে না থেকে টিসিবির পেঁয়াজ কিনতে লাইনে দাঁড়িয়েছি।

টিসিবি খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয় জানায়, গত ২১ নভেম্বর থেকে খুলনায় পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে।  প্রথমে ৫টি স্পটে প্রতিটি ট্রাকে এক টন করে পেঁয়াজ বরাদ্দ দেওয়া হত। প্রত্যেক ক্রেতা এক কেজি করে পেঁয়াজ কিনতে পারতেন। পরে ট্রাক সংখ্যা বাড়তে থাকে। ডিলাররা প্রতিদিন ২ টন করে পেঁয়াজ পাচ্ছিলেন। চাহিদা থাকায় পরে ট্রাক বাড়িয়ে ১২টি পর্যন্ত করা হয়েছিল। তখন ট্রাক প্রতি ৩ টন করে এবং গ্রাহক প্রতি ২ কেজি করে পেঁয়াজ দেওয়া হয়। তবে মাঝখানে নতুন পেয়াজের দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসায় টিসিবির পেঁয়াজ কেনার আগ্রহ ছিল না। পরে ট্রাকের সংখ্যা কমিয়ে ২ টন করে পেঁয়াজ ৫টি ট্রাকে করে বিক্রি করা হয়। গেল সপ্তাহখানেক ধরে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আবার টিসিবির পেঁয়াজ কিনছে মানুষ। এখন নয়টি স্পটে প্রতিটি ট্রাকে ঢেড় টন করে পেঁয়াজ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রত্যেক ক্রেতা ২ কেজি করে পেঁয়াজ কিনতে পারবে।

ময়লাপোতা মোড়ে টিসিবির ডিলার সেলিম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. সেলিম হোসেন খুলনাটাইমসকে বলেন, সপ্তাহখানেক আগে নতুন পেঁয়াজের দাম কিছুটা কম হওয়ায় টিসিবির পেঁয়াজের চাহিদা কমে গিয়েছিল। তখন ক্রেতার আগ্রহ না থাকায় পেঁয়াজ নষ্ট হয়। কিন্তু বাজারে পেঁয়াজের দাম সহনশীল না হওয়ায় আবারও টিসিবির পেঁয়াজের চাহিদা বেড়েছে। বাজারে নতুন পেঁয়াজের দর কম থাকার কারণে মাঝে দুদিন পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু হঠাৎ করে দর বৃদ্ধি পাওয়ায় টিসিবির পেঁয়াজ সপ্তাহখানেক ধরে ট্রাকে করে বিক্রি করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে চার থেকে পাঁচ ঘন্টার মধ্যে ঢেড় টন পেঁয়াজ শেষ হয়ে যাচ্ছে। ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে আরও পেঁয়াজের প্রয়োজন বলে দাবি করেন তিনি।

খুলনার ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন পাইকারি কাঁচা বাজারে দেশী পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। আর গতকাল সন্ধ্যায় খুলনা নগরের ময়লাপোতায় কেসিসি সন্ধ্যা বাজারে দেশী পুরাতন পেঁয়াজ ১২০-১৩০ টাকা, নতুন দেশী পেঁয়াজ ১০০-১১০ টাকা,  তুরস্কের পেঁয়াজ (টিসিবি যে ধরনের পেঁয়াজ দিচ্ছে) তা ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

খুলনা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) উপ-ঊর্ধ্বতন কার্য নির্বাহী মো. রবিউল মোর্শেদ খুলনাটাইমসকে বলেন, সপ্তাহখানেক আগে নতুন পেঁয়াজের দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে থাকায় টিসিবির পেঁয়াজ কিনতে আগ্রহ ছিল না। তখন ক্রেতার চাহিদা না থাকায় ডিলাররাও আগ্রহ কম দেখাচ্ছিল। ফের পেঁয়াজের দর বৃদ্ধি পাওয়ায় আবারও টিসিবির পেঁয়াজের চাহিদা বেড়ে গেছে। খুলনায়  এখন তুরস্কের পেঁয়াজ দেওয়া হচ্ছে। পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসতে আরও তিন থেকে চারদিন সময় লাগবে। তিনি আরও বলেন, খুলনা টিসিবিতে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুদ আছে। আরও পেঁয়াজ আসবে। বিক্রিও চলতে থাকবে।