খুলনাসহ ১২ জেলায় ২৪৫ এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি এআরটি সেবা নিচ্ছে

0
451

নিজস্ব প্রতিবেদক:
খুলনায় দিনকে দিন এইচআইভি/এইডস আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত খুলনায় এইচআইভি/এইডস পজিটিভ পাওয়া গেছে ৩২ জন। সে হিসেবে প্রতি মাসে গড়ে সনাক্ত হচ্ছে ৪ জন করে। এ সময়ের মধ্যে মারা গেছে ৩ জন। ২০১৭ সাল থেকে চলতি বছরের ২৫ আগস্ট পর্যন্ত এইডস আক্রান্ত ১১ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এইডস আক্রান্তদের মধ্যে খুলনা মহানগরী এলাকার বাসিন্দা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, যশোর ও নড়াইল জেলার ব্যক্তিরা রয়েছে। এর মধ্যে খুলনায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যাই বেশি। বর্তমানে খুলনাসহ ১২ জেলায় ২৪৫ জনকে এআরটি সেবা প্রদান করা হচ্ছে। যার মধ্যে খুলনা জেলায় ৮০ জন রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সমুদ্র ও স্থল সীমান্ত অতিক্রম করে প্রবেশকারীদের রক্ত পরীক্ষা না করা, নিষিদ্ধ পল্লী ও ভাসমান যৌন কর্মীদের নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকা ও কনডম ব্যবহারে অনীহার কারণে দিনকে দিন এইচআইভি/এইডস পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। সব অপারেশনের পূর্বে রোগীকে বাধ্যতামূলক এইচআইভি পরীক্ষার জন্য সরকারের মাধ্যমে আগে এগিয়ে আসতে হবে। এটার জন্য আইন পাস হলেই এইডস রোগীদের সংখ্যা আরও সহজে সনাক্ত করা সম্ভব হবে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে ংঃৎবহমঃযবহরহম ড়ভ ঐওঠ ঝবৎারপব প্রকল্পের সূত্রে এ সব তথ্য জানা যায়। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এইডস/এসটিডি প্রোগ্রাম এবং ইউনিসেফ এর আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় ঢ়ৎবাবহঃরড়হ ড়ভ সড়ঃযবৎ ঃড় পযরষফ ঃৎধহংসরংংরড়হ ড়ভ ঐওঠ (চগঞঈঞ) অর্থাৎ ‘গর্ভবতী মায়ের থেকে শিশুর যাতে এইচআইভি না ছড়ায়’ প্রোগ্রামটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
খুমেক হাসপাতালে পরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক ডাঃ এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, এইচআইভি/এইডস রোধে জনসচেতনতা সৃষ্টি ছাড়া কোনো উপায় নেই। এই বিষয়ে মানুষের নিজের উদ্যোগে সচেতন হতে হবে। তিনি বলেন, যদি এইচআইভি পরীক্ষার মাধ্যমে কোনো গর্ভবতী মায়ের রক্তে এইচআইভি সনাক্ত হয় তবে তাকে চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে গর্ভের শিশুটির এইচআইভি প্রতিরোধ করা সম্ভব।
খুমেক হাসপাতালের প্রকল্পের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোল্ল্যা মোঃ নুরুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ৩২ জনকে এইচআইভি/এইডস পজিটিভ সনাক্ত হয়। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ রয়েছে ১৬ জন। এছাড়া গর্ভবতী মায়ের রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে দুইজনের এইচআইভি/এইডস পজেটিভ পাওয়া গেছে। এ সময়ের মধ্যে মারা যায় ৩ জন। তিনি বলেন, ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৪ আগস্ট পর্যন্ত এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি মারা গেছে ১১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরে মারা যায় ৩ জন। এ সময়ের মধ্যে ১১ হাজার ৪৭৫ জন গর্ভবতী মহিলাকে রক্ত পরীক্ষা করানো হয়। যার মধ্যে এইচআইভি/এইডস পজিটিভ পাওয়া যায় ৬ জনের। এছাড়া খুমেক হাসপাতালের এআরটি কর্নার থেকে উল্লিখিত সময়ের মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৪৫০ জন ব্যক্তির রক্ত পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৮০ জনের এইচআইভি/এইডস পজিটিভ পাওয়া গেছে।
সূত্র মতে, খুলনায় ২০১৯ সালে জানুয়ারি থেকে গত ২৪ আগস্ট পর্যন্ত গত ৮ মাসে এইচআইভি/এইডস পজিটিভ পাওয়া গেছে ৩০ জন। এছাড়া গর্ভবতী মায়ের থেকে রক্ত পরীক্ষা করে ২ জনের এইচআইভি পজিটিভি পাওয়া যায়। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ৩ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ৭ জন, মার্চ মাসে ২ জন, এপ্রিল মাসে ৩ জন, মে মাসে ২ জন, জুন মাসে ৫ জন, জুলাই মাসে ৩ জন ও ২৪ আগস্ট পর্যন্ত ৫ জন ব্যক্তির শরীরে এইচআইভি/এইডস পজিটিভ পাওয়া যায়।
বর্তমানে খুমেক হাসপাতাল এআরটি কর্নার থেকে ১২ জেলার ২৪৫ জন এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিকে এন্টি রেক্টোভাইরাল থেরাপী (এআরটি) বিনামূল্য সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এর মধ্যে খুলনায় ৮০ জন, যশোরে ৩৬ জন, নড়াইলে ২৭ জন, ঝিনাইদহে ১০ জন, বাগেরহাটে ১৪ জন, মাগুরায় ৪ জন, চুয়াডাঙ্গায় ৪ জন, গোপালগঞ্জে ৫ জন, ফরিদপুরে ৪ জন, পিরোজপুরের ৩ জন, বরগুনায় ১ জন (হিজড়া) ও রাজশাহী ১ জন (হিজড়া) এইচআইভি/এইডস আক্রান্তকে এআরটি সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ এসএম কামাল উল্লিখিত প্রকল্পের এক সভায় কাউন্সিলিং এর ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়ার জন্য মত প্রকাশ করেন। যাতে আক্রান্ত ব্যক্তি পরিবারের কাছ থেকে কোনো ধরনের অসহযোগিতা না পান।