খুলনার সৃষ্টি সেন্ট্রাল স্কুল এন্ড কলেজে ছয় আবাসিক শিক্ষার্থীকে বেদম প্রহার

0
2675

এম জে ফরাজী : খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার সৃষ্টি সেন্ট্রাল স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছয় আবাসিক শিক্ষার্থীকে বেদম প্রহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠানটির উপাধ্যক্ষ ফয়সাল কুদ্দুস ভুঁইয়া ও অন্য দুইজন শিক্ষক মিলে এই কাজ করেছেন বলে জানা গেছে। টিউটোরিয়াল পরীক্ষার শেষ দিন (রবিবার) রাতে কয়েকজন শিক্ষার্থী এক জায়গায় সমবেত হয়ে গান গাওয়ার কারণে তাদেরকে অশ্লীল গালাগালি ও অমানবিকভাবে পেটানো হয় বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, গত ৮ অক্টোবর থেকে তাঁদের তৃতীয় টিউটোরিয়াল পরীক্ষা শুরু হয়। গত রোববার পরীক্ষা শেষ হয়। পরীক্ষা শেষ হওয়ায় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা টিভি দেখার জন্য আবাসিক শিক্ষক তাজউদ্দীন স্যারকে বলেন। তিনি অনুমতি না দিলে শিক্ষার্থী এক জায়গায় বসে কিছুক্ষণ আড্ডা দেওয়ার অনুমতি পায়। আড্ডার সময় তারা গান শুরু করে। এরপর ৫ম তলায় শিক্ষার্থীদের আবাসিক ফ্লোরে উপাধ্যক্ষ ফয়সাল কুদ্দুস ভুঁইয়া, সিনিয়র আইসিটি শিক্ষক সজীব রানা এবং আবাসিক শিক্ষক তাজউদ্দীন মিলে মোটা বেত দিয়ে শিক্ষার্থীদের বেদম প্রহার করেন ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন।
ওই ছয় শিক্ষার্থীর সঙ্গে সোমবার এই প্রতিবেদক দেখা করেছেন। তাঁরা সকলে নবম শ্রেণির আবাসিক শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে সজীব নড়াইলের, স্বাধীন বাগেরহাটের, জুনায়েদ সামিও খুলনার, পিয়াস গোপালগঞ্জের হাসিব হাওলাদার পিরোজপুরের ও অর্নব খুলনার বাসিন্দা। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ওই ছয় জন আবাসিক শিক্ষার্থীকে যে বেদম প্রহার করা হয়েছে তা তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্নতে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। শিক্ষার্থীদের পিঠে, হাতে, বাহুতে, উরুতে অনেকগুলো করে আঘাতের চিহ্ন ছিল। একজন শিক্ষার্থীর পিঠে কালো ক্ষত হয়ে আছে।
প্রতিষ্ঠানের বাংলা ও বিশ্বপরিচয়ের শিক্ষক মোঃ রুহুল আমিন জানান, ‘টিউটোরিয়াল পরীক্ষা শেষ হওয়ায় শিক্ষার্থীরা আনন্দ-উল্লাস করছিল। এতে অতিষ্ঠ হয়ে পার্শ্ববর্তী ফ্লাট থেকে শিক্ষকদের কাছে অভিযোগ জানানো হয়। পরে শিক্ষকরা তাদের শাস্তি প্রদান করেন। শাস্তিটা হয়ত একটু বেশি মাত্রায় হয়ে গেছে’।
তিনি আরও জানান, ‘অবশ্য পরে শিক্ষার্থীদের ডেকে শিক্ষকরা আদর-যত্ন করেছেন এবং অভিভাবকদের সাথে শিক্ষকরা কথা বলেছেন। এখন আর সমস্যা নেই’।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব থাকা উপাধ্যক্ষ ফয়সাল কুদ্দুস ভুঁইয়া এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ছুটির বিষয়ে নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকদের একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমরা পরে শিক্ষার্থীদের সাথে এবং অভিভাবকদের সাথে কথা বলেছি। এখন আর কোন সমস্যা নেই’।
শিক্ষার্থীদের মারধোর’র বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে উপাধ্যক্ষ বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং বলেন ‘প্রতিষ্ঠান চলতে গেলে অনেক সময় অনেক কিছু হয়ে যায়’।
এ বিষয়ে সদর থানা শিক্ষা অফিসার (মাধ্যমিক) আব্দুল মমিন বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর আমি ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়েছিলাম। শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থীদের বেদম মারধোর’র সত্যতাও পাওয়া গেছে’। তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়টি নিয়ে জেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা বলেছি। আজ রাতে আমি ঢাকা যাচ্ছি, ফিরে এসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে’।