নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনাটাইমস :
খুন, ধর্ষণ, লুটপাট ইত্যাদি নেতিবাচক খবর শুনতে শুনতে আমাদের মনের ওপর যখন চাপ বাড়তে থাকে, যখন আমরা ভাবতে থাকি সমাজটা গেল রসাতলে, তখনই কোথাও না কোথাও কোনো না কোনো মানুষ প্রমাণ করেন, আসলে মানুষ মানুষেরই জন্য। তখন আবার ভরসা জাগে মানুষের ওপর। তেমনি একজন ভরসা-জাগানিয়া মানুষ থাকেন খুলনা শহরে। তিনি পেশায় একজন ইউটিউবার। তাঁর নাম সুরঞ্জিত গাইন জিৎ।
সুরঞ্জিতের ইউটিউব অ্যাকাউন্টটির নাম ‘দাকোপ মিডিয়া সেন্টার (ডিএমসি) বিডি’। সেখানে তিনি নানান রকমের বিনোদনমূলক ভিডিও তৈরি করে প্রকাশ করে থাকেন। এই চ্যানেলের ভিডিওগুলোই তাঁর আয়ের উৎস। এরমধ্যে ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে তিনি বিয়ে করেন। এই উপলক্ষ্যে সুরঞ্জিত নগরীর ক্ষুধার্ত, অসহায় ও দরিদ্র মানুষগুলোর পেটে একবেলা খাবারের ব্যবস্থা করেন।
বুধবার (১৮ মার্চ) সকাল থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত খুলনা নগরীর রেলওয়ে স্টেশন, নিরালা মোড়, শহীদ হাদিস পার্ক ও রূপসা মোড় এলাকার অসহায়, ছিন্নমূল ও পথশিশুদের মাঝে দুপুরের খাবার বিতরণ করেন সুরঞ্জিত ও তার স্ত্রী। এই নব দম্পত্তির জীবনকে স্মরণ রাখতে অসাধারণ এ উদ্যোগ।
সুরঞ্জিত গাইন খুলনার দাকোপ উপজেলার রামনগর গ্রামের সুকুমার গাইনের ছেলে। গ্রাম থেকে পড়ালেখার জন্য তিনি ২০১৮ সালের শেষের দিকে খুলনাতে আসেন। সেই থেকে বেকার হয়ে পড়েন জিৎ। বেকারত্ব দুরীকরণে তিনি অভিনব উদ্যোগ হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং কাজ শুরু করেন। আর তাতেই সফলতা দেখতে থাকেন সুরঞ্জিত।
খাবার পেয়ে ওই সকল শিশুরা আনন্দ-উল্লাসে মাতোয়ারা হয়ে পড়ে। উৎচ্ছ্বাসে মেতে ওঠা রেলওয়ে স্টেশনে রাকিব নামের এক শিশু জানায়, তারা পেটের ক্ষুধামেটাতে ঠিকমত খাবার পায় না। অনেক সময় না খেয়েও দিন পার করেছে। তবে আজকের এই খাবারে পেটের ক্ষুধা মিটাতে পারবে রাকিবের মতো প্রায় তিন শতাধিক শিশুর।
তথ্য প্রযুক্তির প্রসারে ইন্টারনেটে দিন দিন বাড়ছে তরুণদের অংশগ্রহণ। বিনোদনের উৎস হিসেবে তরুণরা বেছে নিচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো। এক্ষেত্রে শহরের তরুণদের পাশাপাশি পিছিয়ে নেই গ্রামের তরুণরাও। দেশের সর্বত্র ইন্টারনেট ব্যবস্থা এবং হাতের নাগালে সুলভমূল্যে প্রযুক্তির কল্যাণে এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলের তরুণদের কাছেও ফেসবুকের পাশাপাশি ইউটিউবসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমগুলোও বেশ পরিচিত। এতে সাবস্ক্রাইবারের দিক থেকে অল্পদিনেই বেশ এগিয়ে আছে তরুণ উদ্যোক্তা সুরঞ্জিত গাইন জিতের চ্যানেল ‘ডিএমসি বিডি’। চ্যানেলটির বর্তমান সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ৯০ হাজারেরও বেশি। তার চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবারের মাইলফলকও অতিক্রম করে চলছে।
তরুণ এ উদ্যোক্তা ইউটিউবে আয়ের উপায় সম্পর্কে জানান, ‘ইউটিউব অ্যাডসেন্স’ থেকে ইফটিউবে আয় করা যায়। এক্ষেত্রে ভিডিওর উপরে, নিচে অথবা পাশে বিভিন্ন পণ্যের কিংবা প্রতিষ্ঠানের ছোট ছোট বিজ্ঞাপন শো করা হয়। দ্বিতীয়ত, ‘এফিলিয়েট মার্কেটিং’ যেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রোডাক্ট রিভিউ করে উপার্জন করা হয়। তৃতীয়ত, ‘স্পন্সরশীপ’, এক্ষেত্রে টেলিভিশনের মতো ভিডিও’র শুরু, শেষে কিংবা মাঝখানে কোন প্রতিষ্ঠান বা পণ্যের বিজ্ঞাপন উপস্থাপন করে উপার্জন করা যায়।
ইউটিউবার সুরঞ্জিত গাইন জিৎ খুলনা খাঁনজাহান আলী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়াশোনা করেন। তিনি খুলনাটাইমসকে বলেন, ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন ছিলো অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো। তাই এ উদ্যোগ নেওয়া। তাছাড়া তাদের বিয়ে উপলক্ষে নিজের রোজগার করা টাকা দিয়ে ওইসব শিশুদের মুখে খাবার তুলে দেয়া মূল উদ্দেশ্য।
সুরঞ্জিত আরও বলেন, বেকারত্ব দূরীকরণের জন্য প্রযুক্তি পদ্ধতির মাধ্যমে টাকা আয় করে এ কাজ সম্পন্ন করে থাকি। সে কারণে তিনি মানুষের ভালবাসা নিয়ে আগামীতে বেকারত্ব দূরীকরণের মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জন করতে চাই। সর্বদা নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী অসহায় মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা ব্যক্ত করে জিৎ বলেন জীবনের লক্ষ্য একজন পরিচালক হওয়া। স্বপ্ন পূরনে জন্য দেশবাসির কাছে আমি দোয়া ও আশীর্বাদ প্রার্থী।