খুলনার সাইবার ক্রাইম গ্রুপের হোতারা প্রকাশ্যে : আতঙ্কে পেশাজীবী মহল

0
594
টাইমস রিপোর্ট : খুলনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে দীর্ঘদিন থেকে ক্রাইম করে আসা চক্রটি এখন প্রকাশ্যে চলে এসেছে । বিভিন্ন সময় এই সাইবার ক্রাইম গ্রুপের নগ্ন আক্রমনের শিকার হয়েছেন ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ পেশাজীবী মহল। বেকায়দায় পড়ে অনেকে এই চক্রটিকে চাঁদা দিয়ে রক্ষা পেয়েছেন। কেউ আবার এদের বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন। তবে দীর্ঘদিন ৩/৪বছর ধরে অন্ধকারে চলা এই সাইবার ক্রাইম গ্রুপের কার্যক্রম ক্রমশ্য প্রকাশ্যে রুপ নিয়েছে।
অনলাইন এক্টিভেট গ্রুপ, ভুয়া ফেসবুক আইডি দিয়েই মুলত এ চক্রটি সাইবার ক্রাইম পরিচালনা করছে। খুলনা মহানগরীতে প্রায় ২৫/৩০জনের একটি গ্রুপ এতে জড়িত রয়েছে বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষকে এরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এদের নগ্ন হামলা ও ফেসবুক আইডি হ্যাক করে অবশেষে চাঁদা দাবি করে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, খুলনার সদর থানাধিন কয়লাঘাট এলাকা বসবাসকারী ইশরাত ইভা ও তার স্বামী শেখ রানা এই সাইবার ক্রাইম গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন। তারা নিজেদেরকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে খুলনা নগরীতে নানা ধরণের অপকর্ম করে আসছে।
এনিয়ে ইতোমধ্যে তাদের দু’জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা হয়েছে। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি)’র বিভিন্ন থানায় তাদের বিরুদ্ধে একাধিক জিডিও রয়েছে। তারা একটি অখ্যাত অনলাইন (খুলনার কন্ঠ.কম) খুলে নিজেদের সাংবাদিক হিসেবে জাহির করতে নানা তৎপরতা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এ সাইবার অপরাধী চক্রের হোতাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে তেমন কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছেনা।
সম্প্রতি সময়ে এই সাইবার ক্রাইম গ্রুপের তৎপরতা নিয়ে নগরীতে নানা ধরণের গুঞ্জন শুরু হয়েছে। ফেসবুকে বিভিন্ন পেশাজীবী (শিক্ষক-সাংবাদিক-ব্যবসায়ী-রাজনীতিক-পুলিশ কর্মকর্তা) মানুষকে নোংরা ভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে আহত করা হচ্ছে। কেউ তাদের প্রতিবাদ জানালে তাকেও পড়তে হচ্ছে রোষানলে। সব মিলিয়ে এ চক্রটির কার্যক্রমে আতঙ্ক দিন দিন ছড়িয়ে পড়ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিভিন্ন নারী ও পুরুষের ছদ্দনামে ফেসবুক আইডি খুলে তারা এ সাইবার ক্রাইমের আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।
অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে, ২০১৭ সালের ২৬জানুয়ারি নগরীর খালিশপুর থানায় চাঁদাবাজি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে ইশরাত ইভা ও তার স্বামী শেখ রানার বিরুদ্ধে মামলা করেন একজন ব্যবসায়ী (মামলা নং-৩২)। মামলাটির তদন্ত শেষে এ দম্পতিকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে ওই মামলাটি। এছাড়া খুলনার মহানগর দায়রা জজ আদালতে চাঁদাবাজির মামলাটি বিচারাধীন রয়েছেন। এ মামলা দু’টিতে তারা জামিনে রয়েছেন বলে আদালত সুত্র নিশ্চিত করেছে।
এছাড়া ফেসবুকে কুৎসা রটানো ও নানা অপরাধের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ৬জুন খালিশপুর থানায় জিডি নং-২০৪৮, ২০১৬ সালের ২৫ জানুয়ারি জিডি নং ১০৬৬, একই বছরের ১৫ মে খালিশপুর থানায় জিডি ৪৫৯ নম্বর জিডির সন্ধান মিলেছে।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের সংশোধনী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করে: যা মিথ্যা ও অশ্লীল, কেউ তা পড়লে, দেখলে বা শুনলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে পারে, যার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় ও কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে। এমন ধরনের তথ্যের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি প্রদান করা হলে তিনি সর্বোচ্চ ১৪ বছর এবং কমপক্ষে ০৭ বছর কারাদন্ডে দন্ডিত  হবেন। সেই সঙ্গে এক কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানাও হতে পারে (ধারা ৫৭-এর উপধারা-১)।
এবিষয়ে র‌্যাব-৬’র স্পেশাল কোম্পানী কমান্ডার মোঃ এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, সাইবার অপরাধ মহামারী আকার ধারণ করেছে। আমাদের নজরদারি রয়েছে। অপরাধী যে হোক কোন ছাড় পাবে না।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটারী কমিশন (বিটিআরসি)’র সাইবার ক্রাইম পর্যবেক্ষণ টিমের কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা তদন্ত করে থাকি। এছাড়া সাইবার ক্রাইমের সাথে জড়িতদের সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ে রাখা হয়েছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার হুমায়ুন কবির পিপিএম বলেন, আমাদের গোয়েন্দা টিমের নজরদারি রয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে এধরণের সাইবার অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।