খুলনার সরকারি হাসপাতালগুলোতে সক্রিয় ১হাজার দালাল : চিকিৎসকরাই দেন শেল্টার!

0
610

কামরুল হোসেন মনি:
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতাল, শহীদ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল ও সদর হাসপাতালে ঘিরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো। এসব হাসপাতালগুলো ঘিরে পুরুষ ও মহিলা মিলে ৮০০ থেকে ১ হাজার দালাল সক্রিয়। খুলনাঞ্চলের বিভিন্ন স্থান থেকে অসহায় রোগীরা এদের খপ্পরে পড়ে অনেকে চিকিৎসার নামে সর্বস্বান্ত হচ্ছে।
খুমেক হাসপাতাল ও আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে একাধিকবার র‌্যাব-৬ এর পাশাপাশি গোয়েন্দা বিভাগও অভিযান পরিচালনা করে দালালদের আটক করেছেন। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার র‌্যাব-৬ ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে খুমেক হাসপাতালে অভিযানে আটক ১৬ দালালকে জেল-জরিমানা করা হয়েছে।
খুমেক হাসপাতালে সূত্র মতে, বৃহস্পতিবার (২৬ জুলাই) র‌্যাব-৬ এর একটি টিম বহিঃবিভাগ ও আন্তঃবিভাগে দালালদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিয়োজিত ১৬ দালালকে আটক করেন। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আরাফাতুল আলম ১৪ জনকে দুই মাস করে বিনাশ্রম কারাদ- ও দুইজনকে জরিমানা করেন। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে মরিয়ম বেগম (৩৫), বিলকিস বেগম (৩৫), রুবি বেগম (৫০), জেসমিন (৩৫), পারুল বেগম (৩০), মফিজুর রহমান (৩৮), শওকত হোসেন (২৭), কামেলা বেগম (৩০), রহিমা (২৫), ডলি (৩০), বিউটি (৩০), জেসমিন (২৫), মনজিল (৪৫), সাবিনা বেগম (৫০), হাজেরা বেগম (২৬) ও বিউটি (২৬)। এরমধ্যে হাজেরা বেগম ও বিউটি প্রথম দালালী করতে গিয়ে আটক হওয়ায় তাদেরকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদ- দেওয়া হয়।
র‌্যাব-৬ র‌্যাব এর স্পেশাল কোম্পানি কমান্ডার মো. এনায়েত হোসেন মান্নান জানান, ওই হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে দালালরা রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিয়ে আসছিল। এমন খবরের ভিত্তিতে সকাল থেকে ওই হাসপাতালে গোয়েন্দা নজরদারি করা হয়। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করে বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে সর্বস্বান্ত করেন এ সব দালালরা। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে র‌্যাব-৬ অভিযান পরিচালনা করেন। ওই সময় ২২ জন দালালকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে ২০ জনই ছিলো নারী দালাল। তাদেরকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও কয়েকজনকে অর্থদ-ে দ-িত করেন। এদেরকে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আল মামুন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। র‌্যাব-৬ এর স্পেশাল কোম্পানি কমান্ডার এনায়েত হোসেন মান্নান এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন। এছাড়া একই বছরে শহীদ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালেও র‌্যাব অভিযান পরিচালনা করে দালালদের আটক করেন। এর বাইরে গোয়েন্দা বিভাগও এ হাসপাতালে অভিযান চালান। গোয়েন্দা বিভাগের অভিযানে আটক দালাল চক্রটি স্বীকার করেন তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা। ওই হাসপাতালের দালাল ও একাধিক সূত্রে জানা গেছে, খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল ঘিরে মহিলাসহ প্রায় ১৫/২০ জন দালাল সক্রিয়, ওই তিনটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে শহীদ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের চিকিৎসকরা পালা বদল করে একেক সময় একেক ডাক্তার বসেন। কেউ সকাল ৯টায়, কেউ দুপুর ১২টায় আবার কেউ বা বেলা ১টা বা বিকেলে বসে থাকেন। ওই সব ডাক্তারের নির্দিষ্ট কোড রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে ডাক্তাররা টেস্টের প্রকারভেদ অনুযায়ী ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ কমিশন পেয়ে থাকেন। এছাড়া সন্ধানী ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সব ডাক্তাররা টেস্টের ওপর ৫০ শতাংশ কমিশন পেয়ে থাকেন বলে জনশ্রুতি আছে। চলতি বছরে র‌্যাব-৬ ও গোয়েন্দা বিভাগ খুমেক হাসপাতাল ও আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করে বেশ কয়েকজ দালালকে আটক করেন। অভিযানের পর কয়েকদিন দালালদের উৎপাত কমে গেলে পুনরায় আবার সক্রিয় হতে শুরু দালাল চক্রটি।
এ ব্যাপারে স্বাচিপ ও বিএমএ খুলনা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডাঃ মেহেদী নেওয়াজ এ প্রতিবেদককে বলেন, কোনো চিকিৎসকের সাথে দালালের কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না। যদি কোনো চিকিৎসকের সাথে কোনো দালালদের সম্পর্ক প্রমাণসহ অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৬ জানুয়ারি কেএমপির ডিবির একটি টিম ওই হাসপাতালের আশপাশে গড়ে ওঠা ডায়গনস্টিক সেন্টারের দালালকে গ্রেফতার করেন।