খুলনার যাত্রীবাহী পরিবহণ মালিকরা ভালো নেই

0
187

ইয়াছিন আরাফাত রাকিব:
মহাসড়কে অবৈধ ইজিবাইক-মাহেন্দ্র’র দাপট, খুচরা যন্ত্রাংশের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, শ্রমিকদের বেতন-মজুরী পরিশোধ, ব্যাংক ঋণের কিস্তি ও বছরান্তে নবায়ন ফি পরিশোধ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় খুলনা জেলা বাস, মিনিবাস ও কোচ মালিকদের। তারপর করোনাভাইরাসজনিত মহামারীর দুটি ঢেউয়ে দায়-দেনায় জর্জরিত তারা। সরকারি কোন সহায়তা নেই। এখন ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার উপক্রম হয়েছে। সব মিলিয়ে ভালো নেই খুলনা জেলার যাত্রীবাহী পরিবহণ মালিকরা।

খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস-কোচ মালিক সমিতির যুগ্ম-সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সোনা জানান, দুই বছর ধরে করোনা মহামারীর কারণে পরিবহণের নবায়ন ফি পরিশোধ করা দায় হয়ে পড়েছে। এসময়ে ব্যবসা না হলেও শ্রমিকদের নিয়মিত মজুরী পরিশোধ করেছি, লোকসান গুনছি। তার ওপর মহাসড়কে অবৈধ ইজিবাইক-মাহেন্দ্র’র দাপট। যাত্রীরাও পরিবহণের বিকল্প হিসেবে এগুলোকে বেছে নিয়েছে। লিখিত অভিযোগের পর পুলিশ মাঝে-মধ্যে অভিযান চালাচ্ছে, তারপর আবারও দেদারছে চলাচল করছে মাহিন্দ্রা-ইজিবাইক। বাস মালিকদের বাঁচাতে দ্রুত এসব বন্ধের দাবি জানান। এছাড়া সরকারের কাছে গত দুই বছরের নবায়ন-সহ অন্যান্য ফি মওকুফের দাবি তার।

করোনাকালীন সময়ে বাস বন্ধের কারণে ড্রাইভার, হেলপার, সুপারভাইজারসহ অন্যান্য শ্রমিকরা বেতন-মজুরী পায়নি, এমনকি কোন সহায়তাও তাদেরকে দেয়া হয়নি, শ্রমিক নেতাদের এমন অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, এটা সত্যি নয়। সমিতির সদস্য প্রায় ২শ’ ৭৬ জন। প্রত্যেক মালিকই তাদের শ্রমিককে নিয়মিত সহায়তা করেছেন। তবে মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাড়ে ৮ হাজার সদস্য’র সহায়তা করা সম্ভব নয়। কারণ তারা বেশিরভাগই খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস-কোচ মালিক সমিতির গাড়ির শ্রমিক নন।

খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস-কোচ মালিক সমিতির লাইন সম্পাদক মো: রফিকুল ইসলাম জানান, একটি পরিবহণে ১৫ হতে ৫০ লাখেরও বেশি বিনিয়োগ করতে হয়। তার খুলনা-পাইকগাছা রুটে ৪টি, খুলনা-সাতক্ষীরা রুটে ২টি পরিবহণ চলাচল করে। কোভিড-১৯ এর পরপর দুটি ঢেউয়ের কারণে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। একদিকে পরিবহণ ব্যবসায় আয় নেই, তার ওপর টানা তিন মাস বন্ধ ছিল। তখন পরিবহণের যাত্রীরা ছোট ছোট যানবাহনকে বিকল্প হিসেবে বেছে নেয়। এতে পরিবহণ ব্যবসায় আরও ধ্বস নেমেছে। উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, ইজিবাইক, সিএনজি, মাইক্রোবাস, মাহেন্দ্র গাড়িগুলো পরিপূর্ণ যাত্রী নিয়ে চলছে। যার অধিকাংশই মহাসড়কে চলাচল অবৈধ। তবুও চলছে। পুলিশ ও প্রশাসন কর্মকর্তাদের এই অবৈধ যানবাহনগুলোর দিকে নজর না দিলেও পরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হচ্ছে কিনা তার দিকে নজর রয়েছে। এবিষয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের বারবার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও তা আমলে আনছে না।

তিনি আরও জানান, লকডাউনের কারণে খুলনা-বারোওড়িয়া, খুলনা-নওয়াপাড়া, খুলনা-শরাফপুর-সহ বেশকিছু রুটে গাড়ি চলাচল করতে পারছে না। এসব রুট এখন ক্ষুদ্র যানবাহনের দখলে। মহাসড়কে ক্ষুদ্র যানবাহন চলাচল বন্ধ না করলে একদিকে যেমন সড়ক দূর্ঘটনা হ্রাস সম্ভব নয়, তেমনি বাস মালিকদেরও বেচেঁ থাকা সম্ভব না। এই সংকট নিরসনে জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

সমিতির সদস্য মো: ইয়াছিন মোল্লা জানান, খুলনা-কয়রা রুটে তার মালিকানার পরিবহণটি চলাচল করে। লকডাউনের কারণে পুরো আড়াই মাস বাসটি বন্ধ ছিল। ফলে এর ওপর নির্ভরশীল ৭/৮টি পরিবার দূর্বিসহ জীবনযাপন করছে। আর পরিবহণ মালিকের বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। ব্যাটারী-টায়ারসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশের অবচয়জনিত ক্ষতি, সরকারের ট্যাক্স টোকেন, ফিটনেস সনদ, চালক, সুপারভাইজার ও হেলপারের বেতন পরিশোধ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা বন্ধ ছাড়া উপায় থাকবে না। তাছাড়া সরকারের কোন আর্থিক সহায়তা কখনও মেলেনি। এই শিল্পকে রক্ষা করতে সরকারের কাছে তার দাবি লকডাউনকালে ক্ষুদ্র পরিবহণ মালিকদের নবায়ন ফি মওকুফ করা হোক। চলমান দূর্যোগের কারণে অনেক মালিকই ব্যবসা অনেকাংশে গুটিয়ে নিয়েছেন বলে জানান তিনি।

খুলনা টাইমস/এমআইআর