খুলছে স্কুল-কলেজ স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকেও নজর দিতে হবে

0
333

প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর দেশের প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিকপর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলার প্রস্তুতি চলছে, এটি অবশ্যই একটি স্বস্তির বিষয়। এর মধ্য দিয়ে সচল হবে দেশের স্কুল, কলেজ, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসা। করোনা সংক্রমণের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরাসরি পাঠদান বন্ধ রয়েছে। সর্বশেষ ঘোষণায় বাড়ানো ছুটি শেষ হবে ১১ সেপ্টেম্বর। খুলে দেওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা একটি বড় চালেঞ্জ, যা বলাই বাহুল্য। কারণ এর সঙ্গে বহু বিষয় জড়িত। আমরা আশা করব, জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ সফলভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে। জানা গেছে, যেসব শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী টিকা নেননি, তাদের টিকার আওতায় আনা হবে। বস্তুত এটি সার্বিক সুরক্ষার একটি মাত্র দিক।
আপাতত এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা সপ্তাহে ছয় দিন ক্লাস করলেও অন্য ক্লাসের শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ দুই দিন সরাসরি পাঠদানের পরিকল্পনা করা হয়েছে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বসানোর ক্ষেত্রে শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করার কথা রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতে কোনো জটলা সৃষ্টি না হয় তা নিশ্চিত করারও কথা রয়েছে। আপাতত অ্যাসেম্বলি ধরনের কোনো কর্মসূচি থাকবে না। স্যানিটাইজার ব্যবহারের ব্যবস্থা থাকবে, ওয়াশরুমও পরিচ্ছন্ন রাখা হবে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। কেননা, বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসম্মত ওয়াশরুমই নেই। বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশুদ্ধ পানির সংকট বিদ্যমান। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বসানোর ক্ষেত্রে শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করার মতো জায়গা আছে কিনা এটাও এক প্রশ্ন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এর চারপাশের পরিবেশ ঝুঁকিমুক্ত না হলে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকিমুক্ত বলা যাবে না। শিক্ষার্থীরা যে সড়কে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়া-আসা করবে, সেই সড়ক, গণপরিবহণ ও এর আশপাশের পরিবেশকেও ঝুঁকিমুক্ত করতে হবে। আমরা জানি, অনেক বয়স্ক ব্যক্তিই স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে গড়িমসি করেন। এ বাস্তবতায় খুদে শিক্ষার্থীদের শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে না নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া নিরাপদ নয়; এ তথ্য আমরা বহুদিন ধরে শুনে আসছি। এখনো সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের নিচে নামেনি। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলে শিক্ষার্থীরা কতটা ঝুঁকিমুক্ত থাকবে, এ প্রশ্ন অনেক অভিভাবকের।
বস্তুত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার যে পরিকল্পনা করা হয়েছে, তা স্বস্তিদায়ক হলেও সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ রাখা না হলে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি থেকেই যাবে। দেশে বড় পরিসরে করোনার টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হলেও এ কার্যক্রমে এখনো শিশুদের যুক্ত করা যায়নি। ফলে অল্পবয়সি শিক্ষার্থীদের ঝুঁকিমুক্ত রাখতে কর্তৃপক্ষকে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। বর্তমান বাস্তবতায় খুলে দেওয়ার পর উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তুলনায় মাধ্যমিক ও নি¤œ মাধ্যমিকের ব্যবস্থাপনায় ভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। বস্তুত এমন পরিস্থিতি মোকাবিলার অভিজ্ঞতা সংশ্লিষ্টদের নেই। কাজেই নতুন বাস্তবতায় নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনোরকম জটিলতা সৃষ্টি হলে দ্রæত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।