খুমেক হাসপাতালে সেবার মান বেড়েছে : সম্প্রসারিত হচ্ছে ভবন

0
1493

কামরুল হোসেন মনি:
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে গত বছরের ২৮ জুন থেকে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে ডাঃ এটি এম মঞ্জুর মোর্শেদ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর পর থেকেই আস্তে আস্তে খুমেক হাসপাতালে সেবার মান দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমানে হাসপাতালে রোগী ভর্তি হলেই খাবারের বরাদ্দ করা হয়েছে। এছাড়া এ পর্যন্ত নতুন করে মানসিক বিভাগসহ ৬টি বিভাগও চালু করা হয়েছে। হাসপাতালের প্রশাসনিক ২য় তলা ভবনকে বর্ধিত করে ৪র্থ তলা সম্প্রসারণ করার কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। প্রয়োজনীয় জনবল, চিকিৎসার সরঞ্জাম সঙ্কট দূর হলেই সেবার মান আরো বেড়ে যাবে বলে মনে করেন হাসপাতালের ওই তত্ত্বাবধায়ক।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ এটি এম মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, সাধারণ রোগীরাই বলবে বর্তমানে হাসপাতালের সেবার মান আগে চেয়ে বেড়েছে কি না। তিনি বলেন, আগে সকল ভর্তি রোগীরা খাবার পেতো না। এখন হাসপাতালে রোগী ভর্তি হলেই তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া নতুন করে ৬টি বেড চালু করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ জনবল ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম বরাদ্দ পেলেই সেবার মান আরও বেড়ে যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, দিনকে দিন জনসংখ্যা যেমন বেড়েছে তেমনি রোগীর চাপও বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ৫শ’ বেড কাগজ কলমে থাকলেও সেই পুরনো লোকবল নিয়ে হাসপাতালটি পরিচালনা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে অনেক সময় চিকিৎসা সেবা দিতে বেগ পেতে হয়। তিনি বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি অনুযায়ী ৫শ’ বেড থেকে ১ হাজার বেড উন্নীত করার প্রয়োজন। চিকিৎসা সেবা আরও বৃদ্ধির জন্য ইতোমধ্যে হাসপাতালের প্রশাসনিকভবন ২য় তলা থেকে ৪র্থ তলা পর্যন্ত সম্প্রাসিরত করার জন্য কনস্ট্রাকশনের কাজ চলছে। এটি নির্মাণ হলেই আরও কয়েকটি স্বাস্থ্য বিভাগ চালু করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি এই অঞ্চলের মানুষের জন্য খুলনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
হাসপাতালের সূত্রে জানা যায়, খুমেক হাসপাতালে আগে ভর্তিকৃত রোগীরা খাবারের জন্য হা হা কার করতো। ২৫০ বেড খাতা কলমে থাকলেও এর চেয়ে তিনগুণ রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। ফলে ২৫০ বেডের বেশি রোগীর খাবার পাওয়ার সুযোগ ছিল না। এছাড়া রোগীরাও তাদের ন্যায্য খাবার থেকেও বঞ্চি হতেন। খাবার পরিমাণ কম, খাবার চুরি হয়ে যাওয়া, ডালের চেয়ে পানির পরিমাণ বেশি এই সব অনিয়মের মধ্যে বছরের পর বছর চলে আসছিলো।
২০১৭ সালের ২৮ জুন থেকে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ এটি এম মঞ্জুর মোর্শেদ দায়িত্ব গ্রহণ করার পরদিন থেকেই ওই সব অনিয়মগুলো তিনি হাতেনাতে ধরেন। এর পর দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেন। ওর পর থেকেই রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত খাবারের পরিমাণ, ডালের পরিমাণ বৃদ্ধিসহ নিয়মতান্ত্রিকভাবে পেতে শুরু করেন। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ এটি এম মঞ্জুর মোর্শেদ তার প্রচেষ্টায় চলতি বছরের গত ২৫ জানুয়ারি থেকে সকল ভর্তিকৃত রোগীদের জন্য খাবারের জন্য বরাদ্দ পাস করিয়ে আনেন। এটা অসহায় রোগীদের জন্য একটি আশীর্বাদ স্বরুপ।
এর পর থেকেই তিনি এই হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার জন্য সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রয়েছে রোগী ভর্তি হলেই সব রোগীর খাবারের ব্যবস্থা, মানসিক রোগ বিভাগসহ উল্লিখিত বিভাগ চালুসহ ২৭টি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো হচ্ছে হাসপাতালে নিয়মিত অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত, রোগীদের খাবারের মান বৃদ্ধি, লাশঘর স্থানান্তর করা, দালাল প্রতারক প্রতিরোধ করা, ১টার পূর্বে ওষুধ প্রতিনিধিদের ভিজিট বন্ধ করা, প্যাথলজি বিভাগে স্যাম্পল কালেকশন সময় বৃদ্ধি করা, ব্লাড ব্যাংকের পাশে নতুন করে কক্ষ নির্মাণ, অনুমোদিত ৫শ’ শয্যার রোগীর পরিবর্তে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি থেকে ভর্তিকৃত সকল রোগীদের খাবার ব্যবস্থা করা, ওয়ার্ড ইনচার্জদের দায়িত্ব পরিবর্তন করে নতুনদের দায়িত্বে অর্পণ করা, জখমি সনদপত্র প্রদানের জন্য বোর্ড গঠনপূর্বক কেবলমাত্র থানা ও আদালত থেকে চাহিদার প্রেক্ষিতে স্বচ্ছতার সাথে জখমী সনদপত্র প্রদানের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।
খুমেক হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডাঃ এস এম ফরিদুজ্জামান এ প্রতিবেদককে বলেন, হাসপাতালের জন্মের পর থেকে আলাদাভাবে মানসিক বিভাগ চালু ছিল না। মানসিক রোগীরা আসলে তখন শুধু বহিঃবিভাগ থেকেই চিকিৎসা পেতো। অনেক সময় হতদরিদ্র পরিবার চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে হিমসিম খেতেন। এখন বহিঃ ও আন্তঃ বিভাগে মানসিক রোগীরা চিকিৎসা পাবেন। এছাড়া যাবতীয় মানসিক রোগীদের সব ধরনের সেবা দেওয়া হবে। এতে সুবিধা বঞ্চিত হতদরিদ্ররা রোগীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। ৫টি পুরুষ ও ৫টি মহিলা বেড নিয়ে এই বিভাগের যাত্রা শুরু।
নিউরো মেডিসিন বিভাগে ভর্তি নুরু মিয়া (৭৫)। বাগেরহাট মোরেলগঞ্জের বাসিন্দা। তার ছেলে নাসির উদ্দিন বলেন, তার বাবা স্ট্রোক করে এখনো জ্ঞান ফেরেনি। এই ওয়ার্ডে ৭ দিন আগে থেকে বাবা ভর্তির জন্য সিরিয়াল দিয়ে রাখি। গত ৫ ফেব্রুয়ারি বেড খালি হলে তাকে এনে ভর্তি করা হয়। তিনি বলেন, নিউরো মেডিসিন বিভাগে রোগীর বরাবরই সব জায়গায় চাপ থাকে। কিন্তু রোগীর তুলনায় বেড স্বল্পতা থাকার কারণে তার মতো অনেকে সময়মতো চিকিৎসা নিতে পারছেন না। যার ফলে বাইরে থেকে ট্রিটমেন্টের জন্য প্রচুর ব্যয় হয়ে যাওয়ায় অনেকেই হিমশিম খাচ্ছেন। তার মতো অনেক রোগীর অভিভাবকের দাবি খুব দ্রুত যেন কর্তৃপক্ষ রোগীদের কথা বিবেচনা করে বেড সংখ্যা যেন বৃদ্ধি করেন।
নিউরো মেডিসিন বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডাঃ শাহিন আক্তার এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিদিন এ হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগে ১শ’ মতো রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন। এর মধ্যে নিউরো মেডিসিন রোগী থাকে ৩০-৪০ জনের মতো। মাত্র ৭টি বেড দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেকে বাধ্য হয়ে পেয়িং বা কেবিনে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। তিনি বলেন, ওই ওয়ার্ডে বেড সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি জনবলের দরকার আছে। কাগজ-কালমে এই হাসপাতালটি ৫শ’ বেডের থাকলেও সেই অনুযায়ী নেই বেড ও জনবল। আমরা আশা করছি বতর্মান সরকারের আমলেই এই সঙ্কট অচিরেই দূর হবে বলে তিনি আশাবাদী।