খুমেকে করোনা পরীক্ষার ১টি মেশিন অকেজো, দূর্ভোগে স্থানীয় ও বিদেশ গমনেচ্ছুকরা

0
383

টাইমস প্রতিবেদক:
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবের একটি মেশিন অচল থাকায় করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) পরীক্ষায় দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় ও বিদেশ গমনেচ্ছুকদের। সচল মেশিনটির উপর বাড়তি চাপ থাকায় প্রতিদিন পরীক্ষা-নিরীক্ষার সংখ্যা অর্ধেকেরও কমে নেমে এসেছে। অকেজো মেশিনটি সচল করতে আরও ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ সময় লাগবে। ফলে শীতে দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধ অনেকটা বিঘœ হবে। এদিকে করোনার এন্টিজোন ব্যবস্থাপনা যশোর ও মেহেরপুরে বসলেও খুলনায় আপাতত বসছে না।
এবিষয়ে খুলনা সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক খুলনাটাইমসকে বলেন, অকেজো মেশিনটি সচল করতে ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে তাঁর আলাপ হয়েছে। দ্রুতই এর সমাধান হবে। একই সাথে মেয়র বলেছেন, শীতে দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জন ও স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিতদের সাথে নিয়ে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে জনসাধারণকে মাস্ক ব্যবহারের পাশপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন এই জনপ্রতিনিধি।
খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ও করোনা প্রতিরোধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ডা: মেহেদী নেওয়াজ খুলনাটাইমসকে জানান, কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষার হার বেড়েছে। আসছে দ্বিতীয় ঢেউ। কাজেই পরীক্ষার হার ক্রমাগত বাড়তে থাকবে। এমন সময় পিসিআর ল্যাবের বড় মেশিনটি অকেজো হয়ে আছে। মেশিন সরবরাহকারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীকে অবগত করা হলেও তারা সরেজমিন পরিদর্শন করেনি। বরং মৌখিকভাবে জানিয়েছেন, মেশিনের এক যন্ত্রাংশ নষ্টের কারণে অচলাবস্থার সৃষ্টি। যন্ত্রাংশটি আমদানি করতে হবে। এতে ৬ হতে ৮ সপ্তাহ সময় লাগবে। এছাড়া করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির সভায় অচল মেশিনটির কথা জানানো হলে দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা নেয়া বলে আশ্বস্ত করা হয়।
জানা গেছে, খুলনা মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবের প্রতিদিন বর্তমানে সচল মেশিনটিতে ৯৪টি করে দুই দফায় ১৮৮টি এবং অকেজোটিতে তিন দফায় ২৮২টি নমুনা পরীক্ষা হয়। সবমিলিয়ে ৪৭০। এরমধ্যে প্রতিদিন বিদেশ গমনেচ্ছুক মানুষেরা আসছেন নমুনা পরীক্ষায়, যার সংখ্যা গড়ে ১৬০ বা তদুর্দ্ধ। গত ১ ডিসেম্বর ১৮৮টি স্যাম্পলের মধ্যে ১৪৫টি ছিল বিদেশ গমনেচ্ছুকদের। এতে স্থানীয় জনসাধারণের নমুনা পরীক্ষার সুযোগ কমেছে, পাশপাশি টেস্ট রিপোর্ট আসতেও দেরি হচ্ছে। ফলে ভোগান্তিও পোহাতে হচ্ছে তাদের।
আরও জানা গেছে, খুলনা মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে দিনপ্রতি ৩৫০ হতে ৪০০টি নমুনা আসে পরীক্ষার জন্য। এঅবস্থায় রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। এজন্য ২ ডিসেম্বর খুলনা মেডিকেল কলেজে জরুরী সভা করে করোনা প্রতিরোধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা টেকনিক্যাল কমিটি। সভায় কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ডা: মেহেদী নেওয়াজ, সদস্য সচিব ও সিভিল সার্জন ডা: সুজাত আহমেদ, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা: মুন্সী সেকেন্দার রেজা, খুলনা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান ডা: শাহনাজ আক্তার এবং অন্যান্য চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, পিসিআর ল্যাবের একটি মেশিন অকেজো থাকায় উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে বিদেশ গমনেচ্ছুক মানুষের জন্য ৯৪টি এবং স্থানীয় জনসাধারণের জন্য ৯৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হবে।
এদিকে কেসিসি’র স্বাস্থ্য বিভাগের আয়োজনে ও সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের সভাপতিত্বে মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধের লক্ষ্যে খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকার জন্য গঠিত কমিটির সভা হয়। সভায় সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন, কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জনসচেতনতামূলক প্রচারণা বৃদ্ধি, চলাফেরায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, শীত মৌসুমে উৎসব, পিকনিক, গেট-টুগেদার ইত্যাদি আয়োজনে নিরুৎসাহিত করা, কোভিড-১৯ উপসর্গ নিয়ে আগত রোগীদের এবং রোগীদের সংস্পর্শে আসা সকল ব্যক্তিকে নমুনা প্রদানে উদ্বুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
অপরদিকে খুলনা করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির এক জরুরি সভা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেনের সভাপতিত্বে তাঁর সম্মেলনকক্ষে রবিবার (২৯ নভেম্বর) সকালে অনুষ্ঠিত হয়। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক এবং খুলনা জেলায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মোঃ কামাল হোসেন সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জানানো হয়, খুলনায় পরীক্ষা বিবেচনায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্তের হার চার শতাংশ। যেখানে দেশে শনাক্তের হার ১৪ শতাংশ। দেশের অনেক জেলার তুলনায় খুলনায় শনাক্ত ও মৃত্যুহার অনেক কম। এর অন্যতম কারণ, খুলনায় সময়মতো প্রয়োজনী পদক্ষেপ নেওয়া। খুলনায় যাতে করোনাভাইরসের সংক্রমণ বৃদ্ধি না পায় তার জন্য সকল দপ্তরে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে আন্তরিকতার সাথে সঠিক সময়ে কাজগুলো সম্পন্নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সর্বোপরি মাস্ক ব্যবহারে জনসধারণকে উদ্ধুদ্ধ করার পাশাপাশি মসজিদে প্রচারসহ উপজেলা ও প্রত্যন্ত এলাকায়ও প্রচার জোরদারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সাথে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা বাড়িয়ে জরিমানা ও শাস্তি বাড়ানো যেতে পারে বলে সভায় সকলে মত দেন।