খালেকের উন্নয়নের চাকায় গতি দিতে পারেনি মনি

0
915

বিমল সাহা : ২০০৮ সালে তালুকদার আব্দুল খালেক খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি)’র মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর নগরীরতে যে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছিল তা ২০১৩ সালের পর থমকে যায়। বর্তমান মেয়র মনিরুজ্জামান মনি নির্বাচিত হওয়ার পর ঝিমিয়ে পড়ে প্রায় সকল উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। তালুকদার আব্দুল খালেকের রেখে যাওয়া কয়েকটি প্রকল্প ছাড়া উল্লেখ্যযোগ কোন প্রকল্প অনুমোদন বা বাস্তবায়নে সক্ষম হননি বর্তমান সিটি মেয়র ও নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনি। সরকারী দলের মেয়র না থাকায় কাঙ্খিত সেবা বা উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত ছিল নগরবাসী।
বিগত দশ বছরে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন প্রকল্প ও উন্নয়ন কর্মকান্ডের ব্যয় হিসেব করে দেখা যায়, ২০০৮ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ছিলেন তালুকদার আব্দুল খালেক। মোট ৯শ ৭৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকার বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের মধ্যে পুরোটা বাস্তবায়ন করতে না পারলেও কিছু কাজ চলমান থেকে যায়। যা বর্তমান মেয়র মনি কিছু শেষ করেন আর বাকীটা এখনও চলমান রয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত মেয়র মনি মাত্র ১শ ১৩ কোটি টাকা কাজ অনুমোদন করেছেন যার ১টি শেষ করেছেন তিনটি চলমান রয়েছে।
তালুকদার আব্দুল খালেকের সময়ে এডিপি থেকে বরাদ্দ আসে ৮০ কোটি ৪৮ লাখ টাকার। মেয়র মনিরুজ্জামান মনি ২০১৮ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত মাত্র ৫৩ কোটি টাকার কাজ বরাদ্দ পান। পূর্বের তুলনায় যা ২৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা কম। তালুকদার আব্দুল খালেক মেয়র থাকাকালীন ৪শ ৩৩ কোটি ১৪ লাখ টাকার সরকারী ১২টি প্রকল্পের অনুমোদন করাতে সক্ষম হন। কিন্তু মেয়র মনি তার সময়ে একটিও সরকারী প্রকল্প অনুমোদন বা বাস্তবায়ন করাতে পারেননি। বিদেশী ব্যাংক ও দাতা সংস্থার নিকট থেকে তালুকদার আব্দুল খালেক ৪শ ৬৫ কোটি টাকার চারটি প্রকল্পের অনুমোদন ও বাস্তবায়ন কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু মেয়র মনি তার সময়ে মাত্র ৫০ কোটি টাকার ৪টি প্রকল্পের অনুদান আনতে সক্ষম হন। যার একটি ছাড়াও তিনটিই চলমান।
সরকারী অর্থায়নে তালুকদার আব্দুল খালেকের ১২টি প্রকল্পের মধ্যে ছিল শহরের ভৌত অবকাঠামো, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও পানি সরবরাহ কাজে ৪৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা। ঘূর্ণিঝড়-সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিকদের সুবিধাদি, অবকাঠামোগত মেরাম ও পূণর্বাসন ছিল ৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুণর্বাসন ও মেরামত বাবদ ৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা। ৭০ কিলোমিটার ড্রেনেজ মাস্টার প্লান প্রস্তুত ১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। শলুয়া বাজার ও ডুমুরিয়ায় স্যানিটারী ল্যান্ড ফিল্ড নির্মাণ ৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা। নগর ভবন, জোনাল অফিস সম্প্রসারণ, ওয়ার্ড অফিস ও কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ বাবদ ১২ কোটি ১ লাখ টাকা। শহরের সড়ক বাতি (এলইডি বাল্ব) প্রতিস্থাপন ৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। রাস্তা, ফুটপাত সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন ৭৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। এই ৮টি প্রকল্প তালুকদার আব্দুল খালেক তার সময়ে বাস্তবায়ন করেন। বাকী ৪টি প্রকল্প চলমান তার সময়ে চলমান ছিল।
সেগুলো হলোঃ লিনিয়ার পার্ক নির্মাণ ২২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, শহীদ হাদিস পার্ক ও তৎসলগ্ন পুকুর সংস্কার ও উন্নয়ন ৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা, ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট যানবাহন, যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং এ্যাসফল্ট প্লান্ট বাবদ ৩৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। শহরের রাস্তা ও অবকাঠামো সুবিধা উন্নয়ন বাবদ প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ১৯৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা। মেয়র মনি সরকারী বরাদ্দের কোন প্রকল্প অনুমোদন করাতে সক্ষম হননি।
বিদেশী ব্যাংক ও দাতা সংস্থার নিকট হতে ৪শ ৬৫ কোটি টাকার ৪টি প্রকল্পের মধ্যে সিআরডিবি’র উন্নয়ন প্রকল্প ২৫০ কোটি টাকার। যার মধ্যে খাল খনন, ড্রেন নির্মাণ, শহর রক্ষা বাধ নির্মান, ছোট রাস্তা নির্মাণ, সড়ক ও ফুটপাত উন্নয়ন। এই প্রকল্প তালুকদার আব্দুল খালেকের সময় শুরু হলেও তা এখনও চলমান রয়েছে। মাথা ভাঙ্গা ল্যান্ডফিল ও সেকেন্ডারী ট্রান্সফার স্টেশন নির্মাণ বাবদ ১৫০ কোটি টাকা। বিশ্ব ব্যাংক প্রদত্ত বাংলাদেশ মিউনিসিপাল ডেভলপমেন্ট ফান্ড ১৫ কোটি টাকা ও বস্তি উন্নয়ন প্রকল্প ৫০ কোটি টাকার কাজ তালুকদার আব্দুল খালেক শুরু করেছিলেন এবং মনিরুজ্জামান মনি শেষ করেছেন।
২০১৩ সালে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর মনিরুজ্জামান মনি বিদেশী ব্যাংক ও দাতা সংস্তার নিকট থেকে মাত্র ৫০ কোটি টাকার ৪টি প্রকল্পের অনুমোদন করিয়েছেন যার তিনটি এখন চলমান। প্রকল্পগুলো হলোঃ ভারত সরকারের অনুদানে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে খালিশপুর কলেজিয়েট গালর্স স্কুল নির্মাণ, নেদারল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের অনুদানে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মানব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প নির্মাণ। জার্মান সরকারের অনুদানে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮টি বস্তিতে টয়লেট, ড্রেন, রাস্তা ও ফুটপাত নির্মাণ এবং কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ, নগর ভবনে সেমিনার কক্ষ ও ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার নির্মাণ।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নাজমুল ইসলাম এসকল তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তালুকদার আব্দুল খালেক মেয়র থাকাকালীন পাঁচটি প্রকল্পের কাজ চলমান রেখে যান। যার তিনটি প্রকল্প বর্তমান মেয়র বাস্তবায়ন করেছেন আর একটি প্রকল্প এখনও চলমান রয়েছে। বিদেশী ব্যাংক ও দাতা সংস্থার অনুদান ও সরকারী অনুদান কম থাকায় বিগত ৫ বছরে প্রকল্প কাজের পরিমান কম ছিল বলে তিনি জানান।