কয়রায় নদীর চরে গুচ্ছগ্রাম : শঙ্কায় এলাকাবাসী

0
582

ওবায়দুল কবির সম্রাট, কয়রা:
খুলনার কয়রা উপজেলার গোবরা গ্রামের কপোতাক্ষ নদীর চরে ২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যায়ে নির্মাণ করা হচ্ছে আশ্রয় প্রকল্প (গুচ্ছগ্রাম)। যেখানে নির্মাণ করা হবে ২২০ ঘর। ইতোমধ্যে প্রায় ৮০টির মত ঘরের নির্মাণ করা হয়েছে। চলমান কাজের মধ্যেই ভেঙে পড়েছে ওই এলাকার কিছু অংশ। গুচ্ছগ্রামের পানি নিষ্কাশনের সময় বালু দ্বারা ভরাট স্থানও ভেঙ্গে নদীতে পড়ে যায় বলে জানা যায়, এমন পরিস্থিতে সেখানে বসবাস করা কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে এলাকাবাসির মধ্যে।
অবশ্য, স্থানীয় সংসদ সদস্য মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু দৈনিক খুলনা টাইমসকে বলেছেন, গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দাদের ভয়ের কোন কারণ নেই। তারা যাতে বসবাস করতে পারে, এমন করণীয় সবই সেখানে করা হবে। এজন্য তিনি অচিরেই প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করবেন এবং সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানপূর্বক নিজে তদারকিও করবেন বলে জানান।
আর খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন দৈনিক খুলনা টাইমসকে বলেন, কয়রার গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প এলাকা বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে। প্রকল্প কাজের তদারিক করার জন্য ইতোপূর্বে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এই কাজে কোনরকম গাফলতি গ্রহণযোগ্য হবে না এমন নির্দেশনা দেয়া আছে। তারপরও তিনি নিজে প্রকল্প সার্বক্ষণিক তদারকি করবেন বলে জানান।
এলাকাবাসি জানান, ২০০৯ সালের ঘটে যাওয়া আইলার পর থেকে উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। এখন কয়েকশ’ মানুষ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধের ওপর বসবাস করছে। তাদের নিদিষ্ট একটি ঠিকানার জন্য কয়রা সদর ইউনিয়ানের গোবরা গ্রামে কপোতাক্ষ নদের তীরে নির্মাণ হচ্ছে গুচ্ছগ্রাম। কিছুদিন আগে ওই স্থানের খুবই কাছে স্লুইচগেটের সংলগ্ন এলাকার নদে ফাটল দেখা যায় এবং কিছু অংশ ভাঙ্গনে বিলীন হয়। তার পর থেকে সুইচ গেটটি বন্ধ থাকে। সারা বছর এখানে কম-বেশি নদে ভাঙন লেগেই থাকে। নির্মাণ কাজ চলার মধ্যেই নদের মধ্যে ভেঙে পড়ে এই আশ্রয় প্রকল্প এলাকার কিছু অংশ। তবে সেখানে কোন ঘর ছিল না। এমন পরিস্থিতে কতদিন এখানে গুচ্ছগ্রাম বাসিন্দারা বসবাস করতে পারবে তা নিয়ে শঙ্কা এলাকাবাসির।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় ৮০টির ঘরের কাজ প্রায় শেষ। বাকি ঘরগুলো নির্মাণের জন্য কাজ চলছে। পুরো এলাকা ধরে কাঁদা-পানিতে ছয়লাপ। কপোতাক্ষের পাড়ের ভেঙে যাওয়া অংশের শ্রমিকরা মাটি ভরাটের কাজ করছে। কাজ তদারকি করছেন সদর ইউনিয়ানের ৩নম্বর গোবরা ওয়ার্ডের মেম্বর মো. আব্দুল গফফর ঢালী।
এ সময় মো. আব্দুল গফফর ঢালী বলেন, অল্প বৃষ্টিতে তেমন সমস্যা হবে না। যদি ভারি বৃষ্টি হয় একটানা আর জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের থেকে একটু বৃদ্ধি পায় তবে গুচ্ছ গ্রামে পানি উঠবে। কাজ চলাকালীন সময় একটি অংশ নদীতে ভেঙে গেছে। সেই স্থান ঠিক করার কাজ চলছে। তবে ভাঙন ঠেকাতে নদীর পাড়ে ব্লাক দিতে হবে।নইলে নদীতে ভেঙ্গে যাবে ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গুচ্ছ গ্রামে ঘর পাওয়া এক মহিলা জানান,আমাদের মোতন অসহায় মানুষে সরকার ঘর দিচ্ছে এতে আমরা খুবই খুশি ।সমস্যা হচ্ছে তবে এখানে বালু দিয়ে ভরাট করা উপরে কিছু মাটি দিছিলো সেটা তলে আবার ঘরের মেজেতে দিছে ।ফলে নদীর ঢেউয়ে ও বৃষ্টিতে ধুয়ে ও ভেঙ্গে চলে যাবে।মানুষ যদি ভালো ভাবে বসবাস না করতে পারে তাহলে কী সেই ঘর কোন উপকারে আসবে।ঘর করে এলাকাবাসীকে দেওয়ার পর সেখানে বসবাস করা যাচ্ছে কিনা তা আর সরকার দেখবে না বলে জানান তিনি।এখানে বসবাস করতে হলে আমাদের ভেঙ্গে যাওয়ার পর আবার বার বার মাটি ভরাট করে খুব কষ্ট করে বসবাস করতে হবে।কারণ আমাদের তো আর যাওয়ার জায়গা নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাসিন্দা জানায়, নদীর তীরে ও ভাঙন কবলিত স্থানে এভাবে ঘর নির্মাণ যুক্তি সংগত হয়নি। ভারী বৃষ্টি পানি ও নদীর জোয়ারে পানিতে এই স্থান তলিয়ে যাবে । স্বাভাবিক জোয়ারে কানায় কানায় পানি চলে আসে।সেই সাথে নদী ভাঙতে থাকে। এখানে এসে কপোতাক্ষের একটি বাঁক নিয়েছে। সেকারণে জোয়ারের পানি এই অংশে এসে আছড়ে পড়ে।তাছাড়া এটি কপোতাক্ষের ভরাট হওয়া অংশ। নদীর সঠিকভাবে খনন করা হলে এই গুচ্ছগ্রামের বেশ বড় অংশ ভেঙে ফেলতে হবে।তখন কোটি কোটি টাকা পানিতে যাবে।
কয়রা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জাফর রানা জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অর্থায়ানের গুচ্ছগ্রাম-২ প্রকল্পের আওয়ায় ২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯ একর জমির উপর ২২০টি ঘর নির্মাণ করা হবে।চলতি বছরের মে মাসে কাজ শুরু হয়েছে শেষ হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে। ১২টি আরসিসি পিলার দিয়ে টিনের বেড়া ও ছাউনি দিয়ে ২ কক্ষ বিশিষ্ট ঘর করা হবে। আর ৪টি পিলার দিয়ে টিনের ছাউনি ও বেড়া দিয়ে করা হবে বাথরুম। ছাউনির টিনের পুরুত্ব হবে .৪৬ মিলিমিটার আর বেড়ার টিনের পুরুত্ব হবে .৩৬ মিলিমিটার।এখানে থাকবে খেলার মাঠ, কমিউন্টি হল ওমসজিদ। পানির প্রয়োজন মিটানোর জন্য ১০টি টিউওয়ালে বসানো হবে। এখানের যারা ঘর পাবেন তাদের ঘরের দলিল দেওয়া হবে, নিজস্ব বিদ্যুতের মিটার, উন্নত চুলা দেওয়া হবে। তাছাড়াকিছু চাষের জমিও দেওয়া হবে। এর মধ্যে ২২০টি ঘরে বিপরীতে ৭০০ জনের মত আবেদন জমা পড়েছে।
তিনি বলেন, নদীর পাড়েই তো গুচ্ছ গ্রাম হয়। কারণ খাস জমি নদীর পাশেই পাওয়া যায়। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে, ডিসি স্যার ও ইউএনও স্যারদের সমন্বয়ে এই জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে।
নদীর ভাঙন ও খননে সময় এই প্রকল্পে কোন সমস্যা হবে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, নদী থেকে বেশ দূরে রয়েছে। তাছাড়া ভাঙন রোধে আমরা কাজ করছি। পরে আরও কাজ করা হবে। নদী কখনও পাশে খনন করা হয় না শুরু মধ্যে একটু খনন করা হয়। তাছাড়া নদীতো দিনদিন মরে যাচ্ছে।সবাই তো আর ঘর পাবে না। কিছু লোক যারা ঘর পাওয়ার উপযুক্ত নয় তা এসব রটাচ্ছে।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিমুল কুমার সাহা বলেন, গুচ্ছগ্রাম যাতে ভাঙনের কবলে না পড়ে আর পানিতে তলিয়ে না যায় সে বিষয়ে আমাদের লক্ষ্য আছে। এখানে আমাদের অনেক কাজ আছে। ধীরে ধীরে সব রকম প্রটেক্টের ব্যবস্থা আমরা করব।