ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ দ্রুত মেরামত করতে হবে

0
213

ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাস নয়, দৈনন্দিন জোয়ারেই এখন ডুবে যায় দেশের উপক‚লীয় নিম্নাঞ্চল। সেই সঙ্গে লঘুচাপ বা নিম্নচাপের কারণে সাগর উত্তাল হলে তো কথাই নেই। তেমনটিই চলছে কয়েক দিন ধরে। অমাবস্যার প্রভাব, সাগরে লঘুচাপ এবং সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর কারণে প্রবল বৃষ্টি -সব কিছু মিলিয়ে উপক‚লজুড়ে দেখা দিয়েছে অধিক উচ্চতার জোয়ার। উপক‚লের মানুষ বলছে, তারা ভাদ্র মাসের এই সময়ে এর আগে কখনো এমন উচ্চতায় জোয়ারের পানি দেখেনি। আবহাওয়া অফিসও বলছে, এই সময়ে উপক‚লে এ রকম জোয়ার আগে দেখা যায়নি। মানুষের দুর্ভোগ আরো বাড়িয়েছে উপক‚লীয় বেড়িবাঁধ বা রিং বাঁধের (বেশ খানিকটা জায়গা নিয়ে আংটির মতো ঘুরিয়ে দেওয়া বাঁধ) ভাঙন। জোয়ারের সময় বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকে ভাসিয়ে দিচ্ছে জনপদ। ধানের জমি, পানের বরজ, শাকসবজিসহ ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। শত শত পুকুর বা ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। ফলে বহু কৃষক সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে।
প্রকাশিত খবরাখবর থেকে জানা যায়, সাতক্ষীরা থেকে শুরু করে খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত উপক‚লজুড়েই কমবেশি একই অবস্থা। প্রতিবছরই বাড়ছে উপক‚লীয় নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ার পরিমাণ। অমাবস্যা শুরু হয়েছে গত বুধবার। রোববারও অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। চট্টগ্রাম শহরে মা ও শিশু হাসপাতাল, পাইকারি ব্যবসার প্রধান কেন্দ্র খাতুনগঞ্জসহ অনেক এলাকা নিয়মিত জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। সাতক্ষীরায় বাঁধ ভেঙে দুই উপজেলার ২৪ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। খুলনার কয়রা এলাকার রিং বাঁধগুলোও অনেক স্থানে ভেঙে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ। বাগেরহাটের চিতলমারী ও কচুয়ায় আউশ ও রোপা আমন ক্ষেত প্লাবিত হয়েছে। নোয়াখালীর হাতিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা এখন পানির নিচে। লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে। অস্বাভাবিক জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে পিরোজপুরের ইন্দুরকানী ও পটুয়াখালীর গলাচিপার অর্ধশতাধিক গ্রাম। ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় প্লাবিত হয়েছে কমপক্ষে ৫০টি গ্রাম।
বিজ্ঞানীরা অনেক আগেই হুঁশিয়ার করেছেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। তাঁদের মতে, ২১০০ সালের আগেই বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা সাগরের পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। উপক‚লীয় বেড়িবাঁধগুলো আরো উঁচু ও প্রশস্ত করে নির্মাণের কথা নব্বইয়ের দশকে বলেছিলেন জাতীয় টাস্কফোর্সের বিজ্ঞানীরা। সে কাজটি এখন পর্যন্ত করা যায়নি। উপক‚লের কয়েক কোটি মানুষের জান-মাল রক্ষার বিষয়টিকে আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে রাখতেই হবে।