ক্ষতিকর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে জোর দিতে হবে

0
336

একটি দেশের অগ্রগতির জন্য বিদ্যুতের ভূমিকা অপরিসীম। ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর জন্য সরকার বড় বড় প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। এরমধ্যে রয়েছে পারমাণবিকসহ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ। বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে পারমাণবিক ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নিয়ে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে এবং প্রতিবাদও করছে। এদের উদ্বেগ অমূলক নয়। কয়লা ব্যবহারে পরিবেশের যে ক্ষতি হয় তা ভবিষ্যতের জন্য যে হুমকি হয়ে দাঁড়াবে না -তার নিশ্চয়তা নেই।
বাংলাদেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা দেশের দুর্দাশাগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর অস্তিত্বকে চরম হুমকির মুখে ফেলবে বলে দাবি করা হয়েছে ৫টি সংগঠনের গবেষণায়। সংগঠনগুলোর গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ৬৩ গুণ বাড়ানোর পরিকল্পনায় বড় প্রভাবকের ভূমিকা পালন করবে চীন, যুক্তরাজ্য, জাপান ও ভারত। তারা বলছে, পরিবেশের জন্য এটা বিপর্যয়কর পরিকল্পনা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী ক্রমবর্ধমান বিদেশি অর্থায়নে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ১ থেকে বাড়িয়ে ৩০টি করা হবে। বিদ্যমান ৫২৫ মেগাওয়াটের বিপরীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে ৩৩ হাজার ২শ’ ৫০ মেগাওয়াট। যা বায়ুমন্ডলে বার্ষিক ১১ কোটি ৫০ লাখ মেট্রিক টন কয়লাভিত্তিক কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণ করবে। এটি একটি কার্বন বিস্ফোরণের ঘটনা, যা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিকর প্রভাবের ফলে বাংলাদেশের দুর্দশাগ্রস্থ জনগোষ্ঠীর অস্তিত্বকে চরম হুমকির মুখে ফেলবে।
যুক্তরাজ্য ও জাপান কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরে এসেছে। তারা নিজেদের দেশে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে উৎসাহিত করলেও এখানে ওই দু’টি দেশ তিনটি করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অর্থ যোগান দিচ্ছে। তারা নিজেরা যে পথ থেকে সরে এসেছে আমরা সে পথে যাচ্ছি। তাদের ঋণের ফাঁদে পা দিয়ে এটি করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা-ও ভেবে দেখার বিষয়। এছাড়া বড় আকারের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা মূলত বৈদেশিক ঋণ সহায়তা নির্ভর। যা বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের বোঝা বহুগুণে বাড়িয়ে দেবে। এতে বৈদেশিক বাণিজ্য ভারসাম্য নষ্ট হবার আশঙ্কা রয়েছে।
বিদ্যুৎ আমাদের উৎপাদন করতেই হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে অগ্রগতি হয়েছে এর জন্য বর্তমান সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন যে আত্মঘাতী পথ -সেটি বেছে নেওয়া যাবে না। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরে এসে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দিতে হবে। ভবিষ্যতের চাহিদা মেটাতে কয়লা ছাড়াই পরিবেশ বান্ধব, নিরাপদ ও টেকসই বিদ্যুৎ উৎপাদন বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব। পরিবেশের দিকে লক্ষ্য রেখে কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিবর্তে স্বল্প খরচে সৌরশক্তি ও বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রয়োজন অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দিতে হবে।