ক্যাচ মিচে ম্যাচ মিস করল বাংলাদেশ ; সিরিজ জয় নিশ্চিত করলো নিউজিল্যান্ড

0
187

টাইমস খেলাধুলা : ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক টম লাথামের অনবদ্য সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ জয় নিশ্চিত করলো নিউজিল্যান্ড। আজ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে লাথামের অপরাজিত ১১০ রানের সুবাদে নিউজিল্যান্ড ৫ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশকে। এ মাধ্যমে সিরিজ জয়ের পাশাপাশি ২-০ ব্যবধানে এগিয়েও গেল নিউজিল্যান্ড।
বিশ্বকাপ সুপার লিগে এটি ছিলো নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ম্যাচ। সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ৮ উইকেটে জিতে সুপার লিগে পয়েন্টের খাতা খুলেছিলো কিউইরা। ফলে সিরিজে দুই ম্যাচ জয়ে এখন ২০ পয়েন্ট নিউজিল্যান্ডের। আর নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে দ্বিতীয় হারের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। তারপরও বাংলাদেশের সংগ্রহে আছে ৩০ পয়েন্ট। কারন আগের সিরিজের তিন ম্যাচেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিলো টাইগাররা।
ক্রাইস্টচার্চে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওভারেই ওপেনার লিটন দাসকে হারায় বাংলাদেশ। ৪ বল খেলে কোন রান না করেই নিউজিল্যান্ডের পেসার ম্যাট হেনরির বলে আউট হন লিটন।
শুরুর ধাক্কাটা দারুনভাবে সামলে উঠেন আরেক ওপেনার অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও তিন নম্বরে নামা সৌম্য সরকার। দু’জনের সাহসী ব্যাটিংএ বাংলাদেশের ভিত শক্ত হচ্ছিলো। ২০ ওভার শেষে ৮৪ রান তোলে তামিম-সৌম্য। তবে পরের ওভারে ধাক্কা খায় বাংলাদেশ।
৯০ মিনিট উইকেটে থেকে সেট হবার পর নিজের ভুলেই আউট হন সৌম্য। নিউজিল্যান্ডের স্পিনার স্যান্টনারকে উইকেট ছেড়ে মারতে গিয়ে স্টাম্পড হন সৌম্য। ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪৬ বল খেলে ৩২ রান করেন তিনি। তামিমের সাথে দ্বিতীয় উইকেটে ১১৬ বলে ৮১ রান যোগ করেন সৌম্য।
এরপর মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গী করে ৮৪তম বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫০তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তামিম। হাফ-সেঞ্চুরির করার পথে দু’বার জীবন পান তামিম। প্রথমে ট্রেন্ট বোল্টের বলে কট বিহাইন্ড আউট হন তামিম। কিন্তু রিভিউ নিয়ে নিজের উইকেট বাঁচান তিনি।
পরে কাইল জেমিসনের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে আবারো জীবন পান তামিম। তবে হাফ-সেঞ্চুরির পর রানের গতি বাড়িয়েছেন তিনি। নিজের ইনিংসও বড় করছিলেন তিনি। কিন্তু ইনিংসের ৩১তম ওভারের নিশামের ফুটবল স্কিলে আউট হন তামিম।
স্ট্রাইকে ছিলেন মুশফিক। সাবধনাতার সাথেই খেলেছিলেন তিনি। তবে রান নেয়ার জন্য দৌঁড় শুরু করেন তামিম। বল তখন পপিং ক্রিজেই ছিলো। দুই ব্যাটসম্যানের দৌঁড় দেখে রান আটকাতে বলের দিকে ছুটে যান নিশাম। বলের কাছে গিয়ে পা দিয়ে কিকে স্টাম্প ভেঙে দেন নিশাম। তখনও পপিং ক্রিজে পৌছাতে পারেনিন তামিম। রান আউট হয়ে ৭৮ রানে থামেন তামিম। ১০৮ বল খেলে ১১টি চারে ৭৮ রান করেন তিনি।
ধীরলয়ে শুরু করে ৩৪ রানের বেশি করতে পারেননি মুশফিকুর। স্যান্টনারের দ্বিতীয় শিকার হবার আগে ৫৯ বল খেলেন তিনি।
দলীয় ১৮৪ রানে মুশফিকের আউটের পর মাহমুদুল্লাহকে নিয়ে বাংলাদেশকে বড় স্কোর এনে দেয়ার চেষ্টা করেন মোহাম্মদ মিঠুন। মারমুখী মেজাজে ব্যাট করেন মিঠুন। তাই বড় স্কোরের পথ পায় বাংলাদেশ। মিঠুনকে স্ট্রাইক দিতেই ব্যন্ত ছিলেন মাহমুদুল্লাহ। তাই পঞ্চম উইকেটে ৪৫ বলে যোগ হওয়া ৬৩ রানের মধ্যে মাহমুদুল্লাহর অবদান ছিলো মাত্র ১৬ রান। সেই ১৬ রানেই আউট হন মাহমুদুল্লাহ।
তবে ইনিংসের শেষ পর্যন্ত খেলে বাংলাদেশকে ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৭১ রানের সংগ্রহ এনে দেন মিঠুন। ৫৭ বল খেলে ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ষষ্ঠ হাফ সেঞ্চুরি তুলে অপরাজিত ৭৩ রান করেন মিঠুন। এছাড়া শেষদিকে মাহেদি হাসান ৭ ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন অপরাজিত ৭ রান করেন।
নিউজিল্যান্ডের মিচেল স্যান্টনার ২টি, ট্রেন্ট বোল্ট-ম্যাট হেনরি ও কাইল জেমিসন ১টি করে উইকেট নেন।
২৭২ রানের জয়ের লক্ষ্যে ভালো শুরুর পথেই ছিলেন নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনার মার্টিন গাপটিল ও হেনরি নিকোলস। তবে পঞ্চম ওভারের শেষ বলে ইনফর্ম গাপটিলের বিদায় নিশ্চিত করেন বাংলাদেশের কাটার মাস্টার মুন্তাফিজুর রহমান। তিনি নিজের বলে নিজেই ক্যাচ নিলে ২৪ বলে ২০ রান করা গাপটিলের বিদায় ঘটে।
এরপর নিউজিল্যান্ড শিবিরে জোড়া আঘাত হেনে বাংলাদেশকে চালকের আসনে বসিয়ে দেন আগের ম্যাচেই অভিষেক হওয়া স্পিনার মাহেদি হাসান। ওপেনার হেনরি নিকোলসকে ১৩ ও চার নম্বরে নামা উইল ইয়ংকে ১ রানে বোল্ড করেন মাহেদি। ফলে ৫৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে নিউজিল্যান্ড।
এ অবস্থায় বড় জুটির প্রয়োজন ছিলো নিউজিল্যান্ডের। দলের প্রয়োজন মিটিয়েছেন তিন নম্বরে নামা ডেভন কনওয়ে ও ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক টম লাথাম। দ্রুত পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিয়ে দলের স্কোর বাড়াতে থাকেন তারা। ২৯তম ওভারে ৭৩ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন কনওয়ে। লাথামও হাফ-সেঞ্চুরির পথে হাটচ্ছিলেন। তবে লাথামের হাফ-সেঞ্চুরির আগেই তামিমের দুর্দান্ত ফিল্ডিংএ থামেন কনওয়ে। মিড-অফ থেকে সরাসরি থ্রোতে কনওয়েকে বিদায় করে বাংলাদেশকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন তিনি। ৯৩ বলে ৭টি চারে ৭২ রান করেন কনওয়ে। চতুর্থ উইকেটে ১৪৩ বলে মূল্যবান ১১৩ রান যোগ করেন কনওয়ে ও লাথাম।
কনওয়ে যখন ফিরেন তখন জয়ের জন্য ৯৮ বলে ১০৬ রানের প্রয়োজন ছিলো নিউজিল্যান্ডের। পঞ্চম উইকেটে নিশামের সাথে ৭২ বলে ৭৬ রানের জুটিতে নিউজিল্যান্ডের জয়কে সহজ করে ফেলেন লাথাম। সেঞ্চুরির দোড়গোড়ায় অপেক্ষায় ছিলেন লাথাম। তার আগেই নিশামের বিদায় দেখতে হয় তাকে। মুন্তাফিজের বলে লং-অনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেয়ার আগে ৩৪ বলে ৩০ রান করেন নিশাম।
নিশামের আউটেও ভড়কে যাননি লাথাম। বাংলাদেশের পেসার তাসকিন আহমেদের করা ৪৭তম ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি মেরে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম ও বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন লাথাম। সেঞ্চুরির পর ড্যারিয়েল মিচেলকে নিয়ে ১০ বল বাকী রেখে নিউজিল্যান্ডের জয় নিশ্চিত করেন লাথাম। ১০৮ বলে ১০টি চারে ম্যাচ জয়ী অপরাজিত ১১০ রান করেন লাথাম। ৬ বলে ১২ রানে অপরাজিত ছিলেন মিচেল। বাংলাদেশের মুন্তাফিজ-মাহেদি ২টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন লাথাম।
আগামী ২৬ মার্চ ওয়েলিংটনে বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টায় অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে।
স্কোর কার্ড (টস-নিউজিল্যান্ড) :
বাংলাদেশ ইনিংস :
তামিম ইকবাল রান আউট (নিশাম) ৭৮
লিটন দাস ক ইয়ং ব হেনরি ০
সৌম্য সরকার স্টাম্পড লাথাম ব স্যান্টনার ৩২
মুশফিকুর রহিম ক নিকোলস ব স্যান্টনার ৩৪
মোহাম্মদ মিঠুন অপরাজিত ৭৩
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ক গাপটিল ব জেমিসন ১৬
মাহেদি হাসান ক নিকোলস ব বোল্ট ৭
মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন অপরাজিত ৭
অতিরিক্ত (লে বা-৬, নো-১, ও-১৭) ২৪
মোট (৫০ ওভার, ৬ উইকেট) ২৭১
উইকেট পতন : ১/৪ (লিটন), ২/৮৫ (সৌম্য), ৩/১৩৩ (তামিম), ৪/১৮৪ (মুশফিক), ৫/২৪৭ (মাহমুদুল্লাহ), ৬/২৫৮ (মাহেদি)।
নিউজিল্যান্ড বোলিং :
বোল্ট : ১০-০-৪৯-১ (ও-৩),
হেনরি : ১০-৩-৪৮-১ (ও-১),
জেমিসন : ১০-২-৩৬-১ (ও-২),
নিশাম : ৯-০-৭৩-০ (ও-৩, নো-১),
স্যান্টনার : ১০-০-৫১-২ (ও-৩),
ড্যারিয়েল মিচেল : ১-০-৮-০।

নিউজিল্যান্ড ইনিংস :
মার্টিন গাপটিল ক এন্ড ব মুন্তাফিজ ২০
হেনরি নিকোলস বোল্ড ব মাহেদি ১৩
ডেভন কনওয়ে রান আউট (তামিম) ৭২
উইল ইয়ং বোল্ড ব মাহেদি ১
টম লাথাম অপরাজিত ১১০
জেমস নিশাম ক সৌম্য ব মুন্তাফিজ ৩০
ড্যারিয়েল মিচেল অপরাজিত ১২
অতিরিক্ত (লে বা-৪, ও-১৩) ১৭
মোট (৪৮.২ ওভার, ৫ উইকেট) ২৭৫
উইকেট পতন : ১/২৮ (গাপটিল), ২/৪৩ (নিকোলস), ৩/৫৩ (ইয়ং), ৪/১৬৬ (কনওয়ে), ৫/২৪২ (নিশাম)।
বাংলাদেশ বোলিং :
মুন্তাফিজুর রহমান : ৮.৩-০-৬২-২ (ও-২),
তাসকিন আহমেদ : ১০-০-৬৭-০ (ও-৩),
মাহেদি হাসান : ১০-১-৪২-২ (ও-১),
মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন : ৭.২-০-৪৩-০ (ও-১),
মেহেদি হাসান মিরাজ : ১০-১-৩৮-০,
মোহাম্মদ মিঠুন : ২-০-১২-০ (ও-১),
সৌম্য সরকার : ০.৩-০-৭-০।
ফল : নিউজিল্যান্ড ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : টম লাথাম (নিউজিল্যান্ড)।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল নিউজিল্যান্ড।