সাইমুম মোর্শেদঃ
আসন্ন খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনকে ঘিরে চলছে ব্যাপক হিসাব-নিকাশ। কে হতে যাচ্ছেন খুলনার ভবিষ্যৎ নগর পিতা? এই নিয়ে নগরবাসীর জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। তেমনি প্রধান দুই দল বিএনপি ও আওয়ামীলীগ কাকে প্রার্থী করছেন তা নিয়ে ধোয়াশা কাটছে না তৃণমূল ও জনসাধারণের। রাস্তার মোড়ে মোড়ে, চায়ের টং দোকানে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের মধ্য চলছে একই আলোচনা, নানা গুঞ্জন।
খুলনার ক্ষমতাসীন দুই দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাদের রাজনীতির কঠিন সমীকরণে এখন কেউ শত চেষ্টা করেও দলীয় টিকেট নিশ্চিত করতে পারছেন না, আবার ইচ্ছা না থাকলেও অনেককে জোর করা হচ্ছে প্রার্থী হতে।
আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় আছেন খুলনা মহানগর আওয়ামীলীগ এর সভাপতি ও সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। জেলা ও নগর আওয়ামীলীগ এককভাবে মেয়র পদে তার নাম সসুপারিশ করেছে। যদিওবা তার মনোনয়ন নিয়ে গুঞ্জনের শেষ নেই। খুলনার বিশাল এক জনগোষ্ঠী চাচ্ছে, দলীয় মনোনয়ন তালুকদার খালেকের প্রাপ্য, বিকল্প অন্য কাউকে ভাবছেন না তারা।
কিন্তু তালুকদার আব্দুল খালেক মেয়র নির্বাচন করতে ইচ্ছুক নন। দলীয় স্বার্থে দলের হাই কমান্ড যদি তাকে চান, তবেই এবারের খুলনা সিটি কর্পোরেশন এ মেয়র নিরর্বাচনে দেখা যেতে পারে এই সাবেক নগর পিতাকে।
অন্যদিকে মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে আছেন, খুলনা মহানগর যুবলীগের আহবায়ক এড. আনিসুর রহমান পপলু, সদর থানা সভাপতি এড. সাইফুল ইসলাম সহ আওয়ামী লীগ নেতা কাজী এনায়েত হোসেন, শেখ সৈয়দ আলী, অধ্যক্ষ শহিদুল হক মিন্টু ও আলহাজ্ব শেখ মোশাররফ হোসেন। ইতিমধ্যই তারা কেন্দ্রীয় কার্যলয়ে গিয়ে দলীয় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মনোনয়ন জমা দেয়ার শেষ সময় ৭এপ্রিল বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক এমপি নির্বাচন করলে কেউ প্রার্থী হতে চান না। এর আগে খুলনা আওয়ামীলীগের এক বর্ধিত সভায় দলের পক্ষে সকল নেতাকর্মীরা একমত হয়ে তালুকদার আব্দুল খালেককেই ভবিষ্যৎ মেয়র পদে দেখার জন্য কেন্দ্রে সুপারিস করেন। সভায় আ’লীগ নেতৃবৃন্দ বলেন, সঠিক প্রার্থী মনোনয়ন না দিলে কেসিসি নির্বাচনের সাথে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনার ছয়টি আসনেও এর প্রভাব পড়তে পারে। আর তালুকদার আব্দুল খালেক যদি নির্বাচনে অংশ না নেন তাহলে খুলনা সিটি উন্নয়ন বঞ্চিত হবে। খুলনাবাসীর স্বার্থে, খুলনার উন্নয়নের জন্য মেয়র পদে তালুকদার আব্দুল খালেকের নির্বাচন করা উচিত।
উলেখ্য, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক ২০০৮ সালের নির্বাচনে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। তার মেয়াদকালে (২০০৮-২০১৩) খুলনার অভুতপূর্ব উন্নয়ন দৃষ্টি কেড়েছে নগরবাসীর। এরপরও ২০১৩ সালের নির্বাচনে হেফাজত ইস্যু, দলীয় কোন্দল ইত্যাদির কারণে বিএনপি প্রার্থীর কাছে প্রায় ৫৮ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। তখন থেকেই অদ্যবধি তিনি মেয়র পদে নির্বাচন করবেন না বলে সুস্পষ্টভাবে বলে আসছেন।
সর্বশেষ গত ৩১ মার্চ কেসিসি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর মেয়র পদে নির্বাচন করতে চান না বলে সাংবাদিকদের কাছে সাক্ষাৎকার প্রদান করেন। এরপরই তাকে মেয়র পদে নির্বাচন করতে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ লোকজন ফেসবুকে খোলা চিঠি, স্ট্যাটাস, ফ্রেম তৈরি করে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এদিকে, ৮এপ্রিল সন্ধ্যায় মনোনয়ন প্রত্যাশিদের সাক্ষাৎকার গ্রহন করবেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড। এজন্য রাতেই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করার কথা রয়েছে।এজন্য নগরবাসীকে অপেক্ষা করতে হবে আর মাত্র কয়েক ঘন্টা।
অন্যদিকে কেসিসিতে বিএনপির প্রার্থী কে হচ্ছেন এখন সে বিষয়টি নিয়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা। ২০১৩ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত সর্বশেষ কেসিসি নির্বাচনে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি এক লাখ ৮০ হাজার ৯৩ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হলেও নগর উন্নয়নে তার তেমন ভূমিকা না থাকায় জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে। গত নির্বাচনে যেসব নেতা-কর্মী মনির পক্ষে কাজ করেছেন তারা মনি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরে অবমূল্যায়িত হয়েছেন। যে কারণে তারা মনির বিকল্প খুঁজছেন বলে দলের বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
মেয়র পদে দুই মনোনয়ন প্রত্যাশী নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি ও জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনার সাথে নতুন করে নেতাকর্মীদের আলোচনায় নাম উঠে এসেছে দলের বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা ও নগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর। যদিও বা তার কাছ থেকে সুস্পষ্ট কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। দলীয় সূত্রে জানা যায়, খুলনায় নজরুল ইসলাম মঞ্জুর আছে স্বচ্ছ রাজনৈতিক ইমেজ। দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সাথে তিনি খুলনার রাজনীতিতে বিএনপিকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। খুলনা সিটিতে কর্তৃত্ব ধরে রাখতে এবং কেন্দ্রীয় বিএনপির সিদ্ধান্তে বিপরীত দলের হেভিওয়েট প্রার্থীর মুখোমুখি হতে পারেন তিনি। এদিকে, গত সিটি নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তে জায়গা ছেড়ে দেওয়া জেলা বিএনপি সভাপতি শফিকুল আলম মনা জোড়ালোভাবে এবছর মনোনয়ন দাবি করছেন।
জানা গেছে, দলীয় প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার আগামী ৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে। ওইদিন সন্ধ্যা সাতটায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ সাক্ষাৎকার হবে। এজন্য বিএনপিকেও আওয়ামীলীগের মত অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে দলীয় চূড়ান্ত মনোনয়নের অপেক্ষায়।
সবমিলিয়ে এখন অপেক্ষায় আছেন রাজনৈতিক শিবিরের তৃণমূল ও আপামরজনসাধারণেরা, সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে কে কে হচ্ছেন প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের চূড়ান্ত মেয়র প্রার্থী?