কেন টার্গেট জাফর ইকবাল? জড়িতদের খুঁজে বের করুন

0
641

 

অনলাইন প্রতিবেদক

ড. জাফর ইকবালকে হত্যা চেষ্টার পেছনে যারা জড়িত তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা হোক। হামলাকারী ফয়জুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক। অবস্থাদৃষ্টে জামায়াত-শিবির এখন অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। এ সময় তারা যে প্রাণসংহারী ষড়যন্ত্রে মেতে উঠবে এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। সুতরাং সরকারকেই এদের দমনে আরো কঠোর অবস্থানে যেতে হবে।

দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ, জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন। খোদ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তার ওপর হামলা চালানো হয়। গত শনিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ‘ইইই ফেস্টিভ্যাল’-এর সমাপনী অনুষ্ঠান চলাকালে এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার ধরন বলছে এটি জঙ্গি হামলা। জাফর ইকবালকে নিশ্চিতভাবে হত্যার উদ্দেশেই তার মাথায় হামলা চালানো হয়েছে। এ ঘটনা নৃশংস। মর্মান্তিক।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার এলাকায় শুক্রবার ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠান চলছিল। শুক্রবার অনুষ্ঠানের বিভাগীয় সভাপতি হিসেবে উদ্বোধন করেছিলেন ড. জাফর ইকবাল। শনিবার বিকেলে অনুষ্ঠানের সমাপনী অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চ এলাকায় হামলার ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিকেল ৫টায় মঞ্চে ওঠার সময় পেছন থেকে মাথায় ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয় জাফর ইকবালকে। হামলাকারী দ্রুত কয়েক দফায় জাফর ইকবালের মাথায় ছুরিকাঘাত করার চেষ্টা করে। তার মাথা থেকে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। তাকে দ্রুত সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। বর্তমানে জাফর ইকবাল ঢাকা সিএমএইচ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে তিনি শঙ্কামুক্ত বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে আশপাশে থাকা ছাত্র-শিক্ষকরা হামলাকারীকে ধরে পুলিশে দিয়েছে। হামলাকারীর নাম ফয়জুর রহমান ওরফে ফয়জুল (২৪)। সে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী কুমারগাঁওয়ের শেখপাড়ার বাসিন্দা। তার মূল বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে। ফয়জুল মাদ্রাসা শিক্ষার্থী বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর বলছে। দীর্ঘদিন ধরে ড. জাফর ইকবালকে একটি ধর্মীয় উগ্রগোষ্ঠী হুমকি দিয়ে আসছিল। ধারণা করা হচ্ছে হুমকিদাতারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগারো শিক্ষার্থীকে গোয়েন্দা সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শনাক্ত করেছেন। যারা নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম বর্তমানে আনসার আল ইসলামের সদস্য। তারা উগ্র জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী। তাদের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটানোর অভিযোগ রয়েছে। জঙ্গি হামলার দায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্র গ্রেপ্তারও হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে গত কয়েক বছরে সারাদেশে ব্লগার, প্রকাশক, লেখকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি ইতোপূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকে সিলেটের সুবিদবাজারে নৃশংসভাবে হত্যা করে জঙ্গিরা। হত্যাকারীদের একজন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় হামলার ঘটনাটি ঘটতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকেই। ২০১৬ সালের ১২ অক্টোবর জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নামে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ইয়াসমিন হককে মোবাইলে এসএমএসে হত্যার হুমকি দেয়। তিনি সিলেটের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের রোষানলেও পড়েছেন বহুবার। তদন্তে বিষয়গুলো মাথায় রেখে প্রশাসনকে সামনের দিকে এগুতে হবে। জাফর ইকবালের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় মামলা দায়ের করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ঘটনার পর হামলাকারীর মামা ফজলুর রহমান ও চাচা আবুল কাহারকে আটক করেছে র‌্যাব। ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারী ফয়জুর শিবিরের কর্মী বলে জানা গেছে। সঙ্গত কারণেই এই খুনের অভিযোগের তীর জামায়াত-শিবিরের দিকে। সাম্প্রদায়িক এই দলটির কার্যকলাপে এটি স্পষ্ট। সুতরাং সরকারের আর পিছু ফিরে তাকানোর সুযোগ থাকতে পারে না। আমরা চাই, ড. জাফর ইকবালকে হত্যা চেষ্টার পেছনে যারা জড়িত তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা হোক। হামলাকারী ফয়জুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক। অবস্থাদৃষ্টে জামায়াত-শিবির এখন অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। এ সময় তারা যে প্রাণসংহারী ষড়যন্ত্রে মেতে উঠবে এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। সুতরাং সরকারকেই এদের দমনে আরো কঠোর অবস্থানে যেতে হবে।