কুয়েট শিক্ষার্থী নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপুরণের দাবীতে আমরণ অনশন

0
587

ফুলবাড়ীগেট (খুলনা) প্রতিনিধি:
ময়মনসিংহের ভালুকায় আরএস টাওয়ারে গ্যাসলাইন বিস্ফোরণ ট্রাজিডির মর্মান্তিক ঘটনায় বিশ^দ্যিালয়ের চারজন মেধাবী শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম, মোঃ শাহিন মিয়া, মোঃ হাফিজুর রহমান এবং দিপ্ত সরকারের নিহতের ঘটনায় বিশ^বিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা শনিবার সিন্ডিকেটের জরুরী সভা চলাকালে নিহতদের প্রতিটি পরিবারকে ক্ষতিপুরণের দাবীতে প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করে অবরোধ করে রাখে।
দুপুর সাড়ে ১২ টায় সিন্ডিকেটের ৬০তম জরুরী সভায় সর্ব সম্মতিক্রমে ১০টি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সিদ্ধান্ত সমুহ মর্মান্তিক এই ঘটনায় নিহত চার শিক্ষার্থীর জন্য শোক প্রস্তাব এবং তাদের বিদেহী আত্মার শান্তির জন্য এক মিনিটি নিরাবতা পালন ও দোয়া করা হয়, চারজন মেধাবী ছত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু কোন দূর্ঘটনা নয়, এটি একটি হত্যাকান্ড বলে সিন্ডিকেট বিবেচনা করে, বিশ^বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রত্যেক পরিবারকে মানবিক কারনে পাঁচ লক্ষ টাকা করে প্রদান করা, দূর্ঘটনার জন্য দায়ী বাড়ীর মালিক ও এর সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ঠ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এ অপূরনিয় ক্ষতির জন্য ক্ষতিপুরণ চেয়ে একটি মামলা দায়ের করা, পরিবার ইচ্ছা পোষন করলে প্রতিটি পরিবার থেকে একজন সদস্যকে শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী বিশ^বিদ্যালয়ে নিয়োগের ব্যবস্থা করা, বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রমের চুড়ান্ত পর্যায়ে ইন্ড্রাট্রিয়াল এ্যাটাচমেন্টরত এই মেধাবী শিক্ষার্থীদের মর্মান্তিক মৃত্যুর জন্য শোকাহত প্রত্যেক পরিবারকে আর্থিক সহায়তা চেয়ে রাষ্ট্রপতি ও বিশ^বিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর এর নিকট পত্র প্রেরণ, দেশের এই অপুরনিয় ক্ষতির জন্য নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারে জন্য সহায়তা চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিকট পত্র প্রেরণ, প্রত্যেক পরিবারকে মানবিক কারণে আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য বিশ^বদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যানের নিকট পত্র প্রেরণ করা, ভবিষ্যতে যাদেরকে ইন্ড্রাটিয়াল এ্যাটাচমেন্টে পাঠানো হবে তাদেরকে ইন্সুরেন্সের আওতায় আনা হবে।
সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত সমুহ শিক্ষার্থীরা শোনার পর তাদের দাবী মনোভুত না হওয়ায় অবস্থান কর্মসুচি আমরণ কর্মসুচিতে রুপ নেয় এবং প্রশাসনিক ভবনের চতুর পাশে অবস্থান নিয়ে সিন্ডিকেটের সদস্যদের অবরুদ্ধ করে রাখে। আন্দোলনরত বঙ্গবন্ধু হলে ছাত্র মো: আরাফত জানান, নিহত চার শিক্ষার্থীর প্রতিটি পরিবারকে কর্তৃপক্ষ ১ কোটি টাকা করে ক্ষতিপুরণ দেওয়ার আশ^াস দিয়ে ছিলো। এছাড়া নিহতদের প্রতিটি পরিবার প্রাত্যান্ত গ্রামের গরীব ও অসহায় তাদের পরিবারে চাকুরী করার মতো আর সদস্য নাও থাকতে পারে। এই অস্থায় পাঁচ লক্ষ টাকা পরিবারের জন্য কিছু নয়। যার কারণে তারা তাদের দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশন চালিয়ে যাবে।
ঘটনার পর রাত ৮টায় খুলনা ৩ আসনের সংসদ সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপি ক্যাম্পাসে এসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে বিশ^বিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীরের সাথে আলোচনা করছিলো সাথে স্থানীয় আ’লীগের কয়েকজন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সর্বশেষ রাত সোয়া ৯টায় খুলনা ৩ আসনের সংসদ সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপি বিশ^বিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীরের সাথে আলোচনা শেষে প্রশাসনিক ভবনের নিচে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে এসে বলেন, আগামী ৫ এপ্রিল বিশ^বিদ্যালয়ে নিহতদের দোয়ার অনুষ্ঠানে প্রত্যেক পরিবারের কাছে নগদ ১০ লক্ষ টাকা করে প্রদান করা হবে এবং পরবর্তি এক মাসের মধ্যে প্রতিটি পরিবারকে আরো নগদ ১৫ লক্ষ টাকা করে প্রদান করা হবে। এছাড়া তিনি সাথে থেকে সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকদের সমন্বয়ে একটি টীম রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করে বিষয়টি অবহিত করে তাদের আর্থিক অনুদানের জন্য সুপারিশ করা হবে ঘোষনা দিয়ে তাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করার আহবান জানালে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন। পরে তিনি অনশনরত শিক্ষার্থীদেরকে পানি পান করিয়ে অনশন ভঙ্গ করান।
এ সময় তার সাথে মহানগর আ’লীগের সহ-সভাপতি বেগ লিয়াকত আলী, খানজাহান আলী থানা আ’লীগের সভাপতি শেখ আবিদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ আনিছুর রহমানসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বিশ^বিদ্যালয় ঘোষিত তিনদিনের কর্মসুচির প্রথম দিনে বিশ^বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, হল সমুহে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। শিক্ষার্থীরা কালো ব্যাচ ধারণ করে এবং সকল ক্লাস বন্ধ হয়েছে যা আজও বন্ধ থাকবে।