করোনা সংক্রমণ ও ঈদুল আযহা

0
167

সারাদেশ এখন করোনা সংক্রমণের হটস্পট হয়ে উঠেছে। নগর কি গ্রাম সবখানেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে ব্যাপকভাবে। বন্যার ¯্রােতের মত করোনা রোগীরা হাসপাতালে ছুটছে। কিন্তু ঠাই নাই ঠাই নাই অবস্থা। হাসপাতালে বেড নাই। সংকট রয়েছে হাই ফ্লো নাজেল ক্যানুলা, অক্সিজেন সিলিন্ডারের অভাব আর সব হাসপাতালে আইসিইউ না থাকা। ফলে যথাসময়ে ভেন্টিলেশন সাপোর্ট না পাওয়ায় মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হচ্ছে লাগানহীন ভাবে। তাই প্রতিদিন মানুষের মৃত্যু দু’শোর ওপরে অথবা নিচে ওঠা নামা করছে। আর সংক্রমণ প্রতিদিন ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। কবে এ মৃত্যুর মিছিল থামবে বা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আসবে তা কেউ বলতে পারছে না।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করছেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণ হার কিছুটা কমতে পারে লাগাতার লকডাউনের কারণে। তবে মৃত্যুর হার কমবে না। এটা চিন্তার বিষয়। অন্যদিকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আরেক পক্ষ বলছে, লাগাতার লকডাউন মানুষকে ঘরে আটকে রাখতে পারেনি। ফলে সংক্রমণ কমার কোনো কারণ নেই। তাই মৃত্যুর মিছিলে আরো নাম যুক্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। এমন এক বিভৎস সময়ে দুয়ারে কড়া নাড়ছে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় আনন্দ উৎসব ঈদুল আযহা। মহামারীর এ চলমান সময়ে মানুষ কি করে ঈদ করবে, তা ভাবনার বিষয় হয়ে উঠেছে। এবারো হয়তো ঈদগাহে নামাজ আদায় করা যাবে না। স্বাস্থ্য বিধি মেনে মসজিদে আদায় করতে হবে। পশু কোরবানি করতে হবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্দিষ্ট জায়গায়।
কোরবানি করার আগে পশু ক্রয় করা নিয়ে এবার নানা কথা শোনা যাচ্ছে। যেখানে সেখানে হাট বসানো যাবে বা। সিটি করপোরেশন নির্দিষ্ট স্থানে হাট বসাবে। সেখান থেকে পশু ক্রয় করতে হবে। এছাড়াও অনলাইনে পশু কেনা যাবে। ইতোমধ্যে রংপুর প্রশাসন শতাধিক পশুর হাট বন্ধ করে দিয়েছে। এর মধ্যে মহানগরীর চারটি হাটও রয়েছে। অনলাইনে পশু কেনায় ১০টি পেইজ খোলা হলেও তেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বিক্রেতা খামারি ও ক্রেতারা তাদের পশু কেনা-বেচা নিয়ে সংকটে পড়েছেন। অন্যদিকে কোরবানির পশু পরিবহনে ১৭-১৯ জুলাই খুলনা-ঢাকা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-ঢাকা রুটে চলবে দুই জোড়া বিশেষ ট্রেন। ট্রেনগুলো কোরবানির পশু আনা নেয়া করবে বলে সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়েছে। এখন পশু বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয়েই হিসেব করছেন, পশুর দাম এবার কম হবে না বেশি হবে। লাভের টাকা ঘরে তুলতে পারবেন কিনা? সব কিছু শেষে নিজের মত করে কোরবানি কিনতে পারবেন কিনা? এমন নানা প্রশ্ন সবার মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে।
সবকিছুর উর্ধে এখন করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও মৃত্যুর মিছিল থামানো। সেদিকে যতœবান হয়ে ঈদুল আযহা সবার পরিবারে আনন্দ নিয়ে আসুক, এ আমাদের একান্ত প্রত্যাশা। মৃত্যুর মিছিলের শোকগাথা ঈদুল আযহা কারো কাম্য নয়। স্বাস্থ্য বিধি মেনে রাজধানীর প্রতিটি এলাকায় পশুর হাট বসিয়ে মানুষের কোরবানি সহজলভ্য করা দু’সিটি কর্পোরেশনের মানবিক দায়িত্ব। শুধু হাট বসালেই হবে না, পশুর যোগান বাড়াতে হবে এবং ক্রেতা-বিক্রেতার বিচরন নিরাপদ করতে হবে।