করোনা ভাইরাস: স্বস্তি দিচ্ছে হোম ডেলিভারি

0
893

খুলনাটাইমস অর্থনীতি : রাজধানীর বারিধারা জে ব্লকের বাসিন্দা রাশিদুর রহমান। চাকরি করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। করোনা ভাইরাসের সাধারণ ছুটিতে ঘরবন্দি সেই ২৬ মার্চ থেকে। মাঝে মধ্যে ইচ্ছে হলেও বের হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে জানতে পারলেন কোম্পানিগুলোর কল সেন্টারে যোগাযোগ করে অথবা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অর্ডার করলে খাবার ও নানা পণ্য বাসায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। কথা হয় রাশিদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি নিয়মিত সুপারশপ থেকেই বাজার করি। করোনা ভাইরাসের কারণে বাসায় বন্দি। বের হতে পারছি না। আমি মাঝে মধ্যে বের হওয়ার চেষ্টা করলেও দুই সন্তানের কারণে পারি না। সোশ্যাল মিডিয়ায় জানতে পারলাম অনলাইনে বা কল সেন্টারে কল দিয়ে অর্ডার করলে পণ্য বাসায় দিয়ে যাচ্ছে। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য ক্রয় করলে ডেলিভারি চার্জও দিতে হয় না। করোনা ভাইরাসের এই দুর্যোগে এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় উদ্যোগ। জনসাধারণের গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ঘোষিত সাধারণ ছুটিতে ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়াই বেশ কয়েকটি খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সরাসরি কাস্টমারের বাসায় ডেলিভারি দিচ্ছে। নির্ধারিত পরিমাণ খাদ্যপণ্য কোনো ধরনের চার্জ ছাড়াই বাসায় পৌঁছে দিচ্ছে বেশ কয়েকটি কোম্পানি। সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ওয়েবসাইটে গিয়ে অথবা হেল্পলাইনে কল দিয়ে অর্ডার দিতে হবে। পণ্য বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে সর্বোচ্চ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী সামিয়া সুলতানা। তিনি জানান, বার্গার তার প্রিয় খাবারের একটি। বাসা থেকে বের হতে না পারায় অনেক দিন ধরে মিস করছেন। এক সহকর্মীর কাছ থেকে জানতে পারলেন অনলাইনে অর্ডার দিলে বাসায় বার্গার পৌঁছে দিচ্ছে বার্গারকিং। তখনই অর্ডার দিলেন আধাঘণ্টা পরে বাসায় বার্গার চলে এলো। চলমান সংকটে কোম্পানিগুলো হোম ডেলিভারি দেওয়ায় নিরাপত্তার সঙ্গে মানুষ অনেক স্বস্তিও পাচ্ছে।
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে বিনামূল্যে হোম ডেলিভারি সেবা দিচ্ছে দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রো। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রোপ্রাইটর মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, সাদিক অ্যাগ্রো উৎপাদিত শতভাগ বিশুদ্ধতার নিশ্চয়তা দেয়। চলমান সংকটের কারণে আমাদের উৎপাদিত মাংস, দুধ, দুই, লাবান, ঘি, মিষ্টি ও সেমাই ওয়েবসাইটে গিয়ে ও মোবাইলে কল দিয়ে অর্ডার করলেই ঢাকার মধ্যে ফ্রি ডেলিভারি দিচ্ছি।
দ্য কোকা কোলা কোম্পানির কমিউনিকেশন ডিরেক্টর নুরে আলম বলেন, আমাদের কল সেন্টারে কল দিয়ে অথবা হোয়াটস অ্যাপ করে অর্ডার দিলে সাধারণ পানি (কিনলে), কোমল পানীয় বাসায় পৌঁছে দিচ্ছি সর্বোচ্চ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে। কোনো কাস্টমার ৫শ টাকা বা তার বেশি অর্থের পণ্য ক্রয় করলে ঢাকা শহরের যে কোনো জায়গায় পণ্য পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। গোল্ডেন হারভেস্ট কোম্পানি উৎপাদিত রুটি, পরোটা, চিকেন রোলসহ অন্য পণ্য ওয়েবসাইটে গিয়ে অথবা নির্দিষ্ট নম্বরে কল করে অর্ডার দিলে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। গোল্ডেন হারভেস্ট জানায়, ঢাকার শহরের ভেতরে এক হাজার টাকা বা তার বেশি অর্থের পণ্য কিনলে তারা ফ্রি ডেলিভারি দিচ্ছেন। কম হলে নামমাত্র একটি চার্জ নেওয়া হচ্ছে। রেস্টুরেন্ট বার্গারকিং অনলাইনে যেকোনো ধরনের খাদ্য সামগ্রী ও বার্গার অর্ডার করলে ফ্রি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে বাসায়। মোবাইল নম্বরে কল দিয়ে অর্ডার দিলে বাসায় পৌঁছে যাচ্ছে ঈগলু আইসক্রিমসহ আরও বেশ কয়েকটি কোম্পানির পণ্য। এসিআই লজিস্টিকের সুপারশপ স্বপ্ন এই ধরনের ক্রাইসিসের কথা মাথায় রেখে প্রথম থেকেই নিজেদের প্রস্তুত করেছে। স্বপ্ন’র কল সেন্টারে কল করে অথবা ওয়েবসাইটে গিয়ে অর্ডার দিলেও পণ্য পৌঁছে যাচ্ছে বাসায়। এ বিষয়ে স্বপ্ন’র নির্বাহী পরিচালক সাব্বির নাসির বলেন, বাসায় যেন মানুষ সহজে দৈনন্দিন পণ্য পেতে পারে, সে লক্ষ্যে কাজ করছে স্বপ্ন। ইতোমধ্যে স্বপ্নের নিজস্ব ডেলিভারি ছাড়াও পাঠাও এবং ফুডপান্ডার মাধ্যমে স্বপ্ন থেকে পণ্য কেনা যাচ্ছে। মানুষ যেন ঘরে বসে কেনাকাটা করতে পারেন সেজন্য সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।