করোনায় মোটরসাইকেল খাতে ক্ষতি ৬০০ কোটি টাকা

0
412
এক লাখ টাকার নিচে মিলবে ১৫০ সিসির মোটরসাইকেল

খুলনাটাইমস: দেশের মোটরসাইকেল উৎপাদন ও সংযোজন খাতের দুই সমিতি দাবী করেছে, এক মাসের সাধারন ছুটিতে তারা ৬০০ কোটি টাকা পন্য বিক্রির সুযোগ হারিয়েছে। আগামী ছয় বছরে তারা মোট ২০ হাজার কোটি টাকা প্রত্যাশিত বিক্রি হারাবে।
এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তারা বেশ কিছু দাবি করেছে, যার মধ্যে একটি হলো মোটরসাইকেলের নিবন্ধন ব্যয় কমানোর। দুই সমিতি বলছে, এখন একটি মোটরসাইকেল নিবন্ধনে মোট দামের ২৫ শতাংশ ব্যয় হয়। পরিমাণের দিক দিয়ে গড়ে যা ২২ হাজার টাকা। তারা চায় এটা ৪ হাজার টাকায় নামিয়ে আনা হোক। এতে মোটরসাইকেল সহজলভ্য হবে। এ দাবি বাংলাদেশ মোটরসাইকেল এ্যাসেম্বলারর্স এ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিএমএএমএ) ও মোটর সাইকেল ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন (এমএমইএবি)। তারা অর্থমন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, নৌ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়ে করোনাভাইরাসের কারণে তাদের ক্ষতি তুলে ধরে বিভিনড়ব সহায়তা দাবি করে।
চিঠিতে স্বাক্ষর করেন বিএমএএমএর সভাপতি ও উত্তরা মোটর্স লিঃ এর চেয়ারম্যান মতিউর রহমান এবং এমএমইএবির সভাপতি ও রানার অটোমোবাইলসের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান।
ভারতের বাজাজ ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বিপণনকারী উত্তরা মোটর্স, জাপানের হোন্ডা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বিপণনকারী বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেড, ভারতের টিভিএস ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বিপণনকারী টিভিএস অটো বাংলাদেশ, জাপানের ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বিপণনকারী এসিআই মোটরস, সুজুকি মোটসাইকেলের বিপণনকারী রেনকন মোটরবাইক, বেনেলি ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বিপণনকারী আফতাব অটোমোবাইলস, জংশেন ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বিপণনকারী রূপসা ট্রেডিং করপোরেশন ও লিফান ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বিপণনকারী রাসেল ইন্ডাষ্ট্রিজ বিএমএএমএর সদস্য।
এমএমইএবির সদস্য রানার ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বিপণনকারী রানার অটোমোবাইলস ও হিরো ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বিপণনকারী এইচএমসিএল নিলয় বাংলাদেশ লিমিটেড। এসব প্রতিষ্ঠান সবাই মিলে সরকারকে চিঠি দিয়ে কর্মীদের তিন মাসের বেতন দিতে ২ শতাংশ সুদে ৬০ কোটি টাকা এবং চলতি মূলধন হিসেবে ৪ শতাংশ সুদে ২ হাজার কোটি টাকার তহবিল চেয়েছে। জানতে চাইলে বিএমএএমএর সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, বিগত কয়েক বছরে আমরা মোটরসাইকেল শিল্পে বিপুল বিনিয়োগ করেছি। যে সময়ে বিক্রি অনেক বৃদ্ধির কথা, তখনই করোনার ধাক্কা এল। আমাদের আশঙ্কা গত বছর যে পরিমাণ মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে, এবার তার ৫০ শতাংশ কম হতে পারে।
দুই সমিতীর চিঠিতে বলা হয়, দেশে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রায় ৫ লাখ মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে, যা তিন বছর আগেও দেড় লাখ ইউনিট ছিল। এ খাতে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। এ খাত থেকে সরকারের প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আসে। মোটরসাইকেল উৎপাদন, বিক্রি ও সংশ্লিষ্ট নানা কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান দুই লাখ লোকের। মোটরসাইকেল নিবন্ধন থেকে আরও এক হাজার কোটি টাকা সরকার পেতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয় চিঠিতে। বিপণনকারীরা সব সময়ই মোটরসাইকেল নিবন্ধন মাশুল কমানোর দাবি করেন। তাদেও যুক্তি হলো, প্রতিবেশী দেশগুলোতে নিবন্ধন মাশুল অনেক কম। বাংলাদেশে বেশি বলে অনেকেই নিবন্ধনে আগ্রহী হন না। এতে সরকার রাজস্ব হারায়।
চিঠিতে বলা হয়, দুই সমিতীর আশঙ্কা আগামী বছরগুলোতে মোটরসাইকেলের চাহিদা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমতে পারে। এর কারনে করোনার জন্য অর্থনৈতিক মন্দা মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমিয়ে দেবে। এ জন্য তারা চাহিদা চাঙা রাখতে নিবন্ধন র‌্যয় কমানোর দাবি করেছে।
মতিউর রহমান বলেন, কোম্পানিগুলো যাতে টিকে থাকতে পারে এবং করোনা চলে গেলে মোটরসাইকেলের চাহিদা যাতে একেবারে কমে না যায়, সে জন্য আমরা কিছু নীতি সহায়তা চেয়েছি। যার মধ্যে :- (ক) চলমান মূলধন বাবদ ২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকীর উপর ৯% এর পরিবর্তে ৪% হারে সুদ ধার্য করা। (খ) ভ্যাট এবং আবগারি শুল্ক ফেরৎ প্রদান (ভ্যাট-২০১২)। (গ) অগ্রীম কর ফেরৎ (ভ্যাট-২০১২) যা প্রতি ছয় মাস পর পর দেয়ার কথা। কিন্ত দশ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও ফেরৎ না পাওয়ায় এটি প্রতি তিন মাস পরপর ফেরৎ প্রদান করা জন্য অনুরোধ। (ঘ) অগ্রীম আয়কর ফেরৎ। (ঙ) এসআরও ১৭৫ এর ভ্যাট ২০২৫ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি।