করোনায় ভালো নেই দুধ গ্রামের খামারিরা,বিক্রি হচ্ছে না দুধ

0
452

মোঃ রোকনুজ্জামান টিপু ,তালা  ::

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার একটি গ্রামের নাম জেয়ালা নলতা। দুধ গ্রাম হিসাবে বেশ পরিচিত। উপজেলার সদর ইউনিয়নে আবস্থিত জেয়ালা নলতা গ্রাম। গ্রামের প্রতিটা বাড়িতেই রয়েছে ছোট বড় গরুর খামার।করোনাভাইরাসের কারণে চিলিং সেন্টারগুলো কম পরিমাণে দুধ কিনছে।এ কারনে দুধ গ্রামের খামারিরা পড়েছে বিপাকে।

দুধের হাট, হোটেল, ও রেস্তোরাঁ গুলো বন্ধ থাকায় আগের মতো দুধ বিক্রি হচ্ছে না । ফলে বিপাকে পড়েছেন জেয়ালার দুধ গ্রামের খামারিরা। অনেকে বাধ্য হয়ে বাছুরকে দুধ খাওয়াচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ছানা করে রাখছেন।এই ছানা দিয়ে তৈরী হয় সুস্বাদু মিষ্টি।আবার কেউ কেউ ক্রিম বানিয়ে রাখছেন।এই ক্রিম দিয়ে তৈরী হয় ঘি। মিষ্টির দোকান গুলো বন্ধ থাকায় ছানা বা ক্রিম কোনটাই বিক্রি করতে পারছেনা তারা।তাই বাধ্য হয়ে খালের পানিতে দুধ ঢেলে দিচ্ছেন খামারিরা।এ অবস্থা চলতে থাকলে খামারগুলো বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

জেয়ালা নলতায় ছোটবড় সবমিলিয়ে ১৩৫টির মতো দুগ্ধ খামার রয়েছে। এসব খামার থেকে দুধ উপজেলার ব্র্যাক,মিল্ক ভিটাও আকিজ চিলিং সেন্টারসহ সাতক্ষীরা ও খুলনায় সরবরাহ করা হতো। এছাড়া হোটেল ও মিষ্টির দোকানগুলোতেও সরবরাহ করা হতো জেয়ালা নলতা গ্রামের দুধ। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে চিলিং সেন্টার গুলো দুধ কম কিনছে।তাছাড়া সাতক্ষীরা -খুলনার হাট-বাজার এবং অন্যান্য যেসব স্থানে দুধ বিক্রি করা হতো সেগুলো বন্ধ রয়েছে।

দুগ্ধ খামারি সুবির ঘোষ এপ্রিতনিধিকে বলেন, ‘করোনার কারণে সবকিছু বন্ধ থাকায় আমি দুধ বিক্রি করতে পারছি না। আমার খামারের অধিকাংশ দুধ আকিজ চিলিং সেন্টারে দিতাম। কিন্তু তারাও এখন অনেক কম পরিমাণে দুধ নিচ্ছে। হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও মিষ্টির দোকানগুলোতে বন্ধ থাকায় দুধ বিক্রি করতে পারছি না। আমার খামারে গড়ে প্রতিদিন ১২০-১৫০ লিটারের মতো দুধ বিক্রি করতে পারছি না।প্রতিদিন আমার ৫-৬ হাজার টাকার মতো লোকসান গুনতে হচ্ছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে খামার বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।’

আরেক খামারি চৌধুরী ওসিউর রহমান এপ্রতিনিধিকে বলেন, ‘আমার খামারে ৮টি গাভী থেকে গড়ে প্রতিদিন ৮৫ লিটার দুধ হতো। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে ক্রেতা না থাকায় দুধ বিক্রি হচ্ছে না। এদিকে গরুর খাবার বস্তা প্রতি ১০০ থেকে ১৫০ বেশী দামে কিনতে হচ্ছে।এ কারণে লোকসানে পড়তে হচ্ছে। এমন অবস্থা কতদিন চলবে তাও বুঝতেও পারছি না।’এ আবস্থা চলতে থাকলে খামারিদের পথে বসতে হবে।

জেয়ালা ঘোষ পাড়া প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবয় সমিতির সভাপতি দিবাস ঘোষ এপ্রতিনিধিকে জানান,তার নিজেরও প্রতিদিন ২৮০ লিটারের মত দুধ উৎপাদন হয়। বর্তমানে উৎপাদিত দুধ বিক্রি করতে না পেরে তিনিও পড়েছেন বিপাকে।শুধু তিনি নন তার মত ছোট বড় খামারিরা এবার পথে বসবে। তাই খামারিদের বাঁচাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।

তালা উপজেলা প্রানীসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ সন্জয় বিশ্বাস বলেন, অত্র উপজেলায় উৎপাদিত দুধ এক-তৃতীয়াংশ অবিক্রিত থাকছে। এসব দুধ দিয়ে ঘি, ছানা, মাখন তৈরি করে তা বাজারজাত করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে খামারীদের। এতে করে অর্থনৈতিক সাপোর্টের পাশাপাশি এলাকায় পুষ্টির চাহিদা পুরন হবে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রানীসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, অত্র জেলা গরুর দুধে সমৃদ্ধ। জেলায় প্রতি বছর ১.৯০ লাখ মেট্রিক টন দুধ উৎপাদন হয়। যারমধ্যে এক তৃতীয়াংশ উৎপাদন হয় তালা উপজেলাতে। দেশের বর্তমান পেক্ষাপটে অবিক্রিত দুধের সঠিক ব্যবহারে বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে খামারীদের ।