করোনায় বিদেশে অন্তত ১০০ বাংলাদেশির মৃত্যু

0
234

খুলনাটাইমস: করোনাভাইরাসে বিদেশে অবস্থানরত অন্তত ১০০ বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর জানা গেছে। এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে মারা গেছেন কমপক্ষে ৬৩ জন, যুক্তরাজ্যে মারা গেছেন ২৪ জন, সৌদি আরবে ৫ জন, কাতারে ২ জন, ইতালিতে ২ জন স্পেনে ১ জন, গাম্বিয়ায় ১ জন, কানাডায় ১ জন। তবে এ সংখ্যাগুলো অনানুষ্ঠানিক। এ সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক তথ্য পাওয়ার তেমন কোনও সুযোগ নেই। বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশ মিশন সেখানকার বাঙালি কমিউনিটির মাধ্যমে এসব মৃত্যুর তথ্য জেনেছে। গোপনীয়তা সংক্রান্ত আইনের কারণে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে মৃত ব্যক্তির নাগরিকত্ব জানানো হয় না। অনেকে আবার নাগরিক হয়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশি পরিচয় স্বীকার করেন না। তাই বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশ মিশন সুনির্দিষ্ট করে প্রবাসে থাকা বাংলাদেশিদের মৃত্যুর আনুষ্ঠানিক তথ্য জানতে পারে না। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা আনুষ্ঠানিকভাবে ১০০ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশি বা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কতজন মারা গেছে সেটি জানতে বাঙালি কমিউনিটির মাধ্যমে অনানুষ্ঠানিকভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। আমরা যতদূর জেনেছি এই সংখ্য ১০০-এর মতো, কিন্তু এটি সমর্থিত না। ওই কর্মকর্তা বলেন, সৌদি আরবে পাঁচ জন করেনাভাইরাসে মারা গেছেন এবং আরেকজন বাংলাদেশির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে তিনি মার্স ভাইরাসে মারা গেছেন। কাতারে দুই জন মারা গেছেন এবং ওই তথ্য কাতার সরকার আমাদের দিয়েছে। ইটালিতে যে তিন জন মারা গেছেন তাদের মৃত্যু সনদে বাংলাদেশি লেখা আছে। এদিকে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এবং বিভিন্ন মিশনে যোগাযোগ করে দেখা যায়, করোনায় সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি মারা গেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৫৮ জন বাংলাদেশির মৃত্যুর কথা জানা গেছে। তাদের মধ্যে ১১ জন নারী ও ৪৭ জন পুরুষ। এছাড়া যুক্তরাজ্যে ২৪ জন, সৌদি আরবে ৬ জন, ইতালিতে ৩ জন, কাতারে ২ জন, স্পেনে ১ জন ও সুইডেনে ১ জন প্রবাসী বাংলাদেশির মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়। বিভিন্ন মিশন থেকে জানা গেছে, প্রায় সব দেশের সরকার মৃত ব্যক্তির জাতীয়তা প্রকাশ করছে না। সে কারণে স্ব-স্ব দেশে বাংলাদেশি কমিউনিটির কাছ থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে তথ্য সংগ্রহ করছেন।
যুক্তরাষ্ট্র: উত্তর আমেরিকার দেশটিতে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বাস করে নিউ ইয়র্কে। ওই রাজ্যে সবচেয়ে বেশি করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী রয়েছে। মৃত বাংলাদেশিদের মধ্যে ৮৩ বছরের বৃদ্ধ যেমন আছেন, তেমনি আছেন ৩৮ বছর বয়সী তরুণ। নিউ ইয়র্কে কর্মরত বাংলাদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মার্কিন সরকার মৃত ব্যক্তির নাগরিকত্ব প্রকাশ না করার কারণে বাঙালি সম্প্রদায়ের কাছ থেকে তারা তথ্য সংগ্রহ করছেন। এ পরিস্থিতিতে সেখানকার বাংলাদেশ কনস্যুলেট ও স্থায়ী মিশন থেকে সব বাংলাদেশিকে সাবধানে থাকার এবং স্থানীয় আইন মেনে চলার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। একজন কূটনীতিক বলেন, এখানে আমরা সবাই ঘরবন্দি। আমরা টেলিফোন, ফেসবুক বা অন্য সামাজিক মাধ্যমের সাহায্যে সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করছি।
যুক্তরাজ্য: যুক্তরাষ্ট্রের পরে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মারা গেছেন যুক্তরাজ্যে। গত রোববার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় রাত আটটায় যুক্তরাজ্য থেকে এক কূটনীতিক টেলিফোনে জানান, সে পর্যন্ত মৃত বাংলাদেশির সংখ্যা ২৪। যুক্তরাষ্ট্রের মতো যুক্তরাজ্যেও মৃত ব্যক্তির নাগরিকত্ব প্রকাশ না করার কারণে বাঙালি সম্প্রদায়ের কাছ থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে তথ্য সংগ্রহ করছে সেখানকার বাংলাদেশ মিশন। এরমধ্যে কতজন নারী এবং কতজন পুরুষ জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, এটি আমরা এখনও আলাদা করিনি। তবে এতটুকু বলতে পারি পুরুষের সংখ্যা বেশি এবং এদের বেশিরভাগই বৃহত্তর সিলেটের। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শিশু কিংবা অপ্রাপ্তবয়স্ক কারও মৃত্যু হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কাছে এ ধরনের কোনও তথ্য নেই। তবে ব্রিটিশ গণমাধ্যমের খবর থেকে জেনেছি পাচঁ বছরের একটি বাচ্চা মারা গেছে, যার স্বাস্থ্যগত সমস্যা ছিল এবং সম্প্রতি দুইজন মারা গেছে যাদের বয়স ১৩ ও ১৯, কিন্তু তাদের কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা ছিল না।
সৌদি আরব: পৃথিবীর সব দেশের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের ওই দেশটিতে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি বাস করে। সেখান থেকে এখন পর্যন্ত ছয় জন বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রিয়াদ ও জেদ্দা মিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশটির সরকার দ্রুত এবং কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে এখনও সেখানে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা তুলনামূলক কম। এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা ছয় জন মারা যাওযার খবর নিশ্চিত করেছি। আরও দুই জনের বিষয়ে আমরা জেনেছি কিন্তু তারা করোনাভাইরাসে মারা গেছে কিনা তা নিশ্চিত নয়। তিনি জানান, যারা মারা গেছেন পাসপোর্ট অনুযায়ী তাদের দুই জনের বয়স ৩৬ ও ৩৮ এবং সবচেয়ে বেশি যে বয়সী যিনি মারা গেছেন, তার বয়স ৬০-এর বেশি। বাকিদের বয়স ৫০-এর ঘরে। মৃত ব্যক্তিরা চট্টগ্রাম, সাভার, পাবনা অঞ্চলের মানুষ।
ইতালি: েেগাটা ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ অবস্থা ইটালিতে। ওই দেশের সরকারি হিসাব অনুযায়ী সেখানে ১ লাখ ৪০ হাজার বাংলাদেশি বাস করে। সেখানে কর্মরত একজন কূটনীতিক বলেন, এখন পর্যন্ত তিন জন বাংলাদেশি মারা গেছেন এবং তাদের মৃত্যু সনদ ইস্যু করেছে ওই দেশের সরকার। যারা মারা গেছেন, তাদের বয়স ৫০ থেকে ৬০ এবং এদের মধ্যে একজনের বাড়ি নোয়াখালী, একজনের লাকসাম এবং অপরজনের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে।
কাতার: মধ্যপ্রাচ্যের ওই দেশটিতে কয়েক লাখ বাংলাদেশির বাস। করোনাভাইরাসে সেখানে এখন পর্যন্ত ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে প্রথম দুই জনই বাংলাদেশি। কাতারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ বলেন, কাতার সরকার দুই জন বাংলাদেশি মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অবহিত করেছিল। রাষ্ট্রদূত বলেন, কাতারে অবস্থিত বাংলাদেশিদের দেখভাল করার জন্য আমি ওই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। তিনি জানান, যারা মারা গেছেন তাদের দুই জনের বয়স যথাক্রমে ৫৭ ও ৫৮। একজন মৌলভীবাজারের, আরেকজন গাজীপুরের বাসিন্দা। এছাড়া সুইডেনে ৮০ বছর বয়সী একজন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। স্পেনেও এক বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
কানাডা: মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা হাজী তুতিউর রহমান তুতি (৭৫) করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কানাডায় মারা গেছেন। স্থানীয় সময় গত রোববার রাত সোয়া ১০টায় দেশটির টরোনটো মাইক্যাল গ্যারন হাসপাতালে তিনি মারা যান। গত দুই সপ্তাহ ধরে তিনি আইসিইউতে ছিলেন। কানাডার টরোনটোর জালালাবাদ বার্তা ডটকমের সম্পাদক রুহুল চৌধুরীএ তথ্য জানান। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক ছেলেসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন রেখে গেছেন। তিনি কানাডায় মৌলভীবাজার জেলা অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা ছিলেন। রুহুল চৌধুরী জানান, লাশ ডল ল্যান্ডের মদিনা মসজিদ জানাজা-দাফনে অস্বীকার করেছে। এই পরিস্থিতিতে সেখানে করোনায় মৃত ব্যক্তিদের জানাজ-দাফন স্থগিত রয়েছে। পরিবার নাগেট মসজিদ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছে। এ নিয়ে গতকাল সোমবার সিদ্ধান্ত হবে। তবে নাগেট মসজিদে জানাজা হলে পিকারিং কবরস্থানে দাফন করা হবে তিনি জানান। এ নিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কানাডায় দ্বিতীয় বাংলাদেশির মৃত্যু হলো। গত ৪ এপ্রিল দেশটির রাজধানী অটোয়াতে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে মারা যান হাজী শরিয়তুল্লাহ। তাকে ওই দিন স্থানীয় মেনোটিস্থ অটোয়া মুসলিম সেমিট্রতে দাফন করা হয়।