করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে চলমান বিপুলসংখ্যক প্রকল্প বাস্তবায়নেই স্থবিরতা বিরাজ করছে

0
304

টাইমস ডেক্স: করোনা দ্বিতীয় ঢেউয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে সরকারের চলমান বিপুলসংখ্যক উন্নয়ন প্রকল্প। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ওসব প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ফলে নির্ধারিত সময়ে ওসব প্রকল্প বাস্তবায়ন অনেকটাই অনিশ্চিত। যদিও উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রাখতে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ওই লক্ষ্যে মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেয়া হলেও অন্য প্রকল্পগুলোতে তেমন প্রস্তুতি নেই। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনার ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবে বর্তমানে চলমান ২ হাজার ৮০টি উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জর মুখে পড়েছে। তার মধ্যে ৪১১টি প্রকল্প জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের যে লক্ষ্য রয়েছে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। করোনার প্রভাব দীর্ঘায়িত হলে প্রকল্প বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জের মাত্রা আরো বাড়বে। সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) আওতায় ওসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। আর তাতে বরাদ্দ রয়েছে প্রায় ১ লাখ ৯২ হাজার ১৩ কোটি টাকা। মার্চের প্রথম সপ্তাহে আরএডিপি অনুমোদন পায়। কিন্তু ইতোমধ্যে করোনার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করায় এখন দেশজুড়ে চলছে লকডাউন। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত অনেক প্রকল্পেরই ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সূত্র জানায়, বিগত চার অর্থবছরের মধ্যে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি সর্বনি¤œ বাস্তবায়ন হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে সংশোধিত এডিপির বাস্তবায়ন হার ৪১ দশমিক ৯২ শতাংশ। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪৫ দশমিক ০৮ শতাংশ। তার আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ৪৭ দশমিক ২২ শতাংশ, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ছিল ৪৫ দশমিক ১৫ শতাংশ। মূলত করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে উন্নয়ন প্রকল্পে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে শ্রমঘন এবং বৈদেশিক কর্মী সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোর কাজই বেশি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যদিও সরকারের উন্নয়ন কাজ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় কিংবা কর্মসংস্থান ঠিক রাখতে প্রকল্পগুলো সচল রাখার প্রচেষ্টা রয়েছে। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ দীর্ঘায়িত হলে বাস্তব পরিস্থিতির কারণেই সেগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই শেষ পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সামাজিক নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য খাতের করোনা নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত প্রকল্পগুলোর কাজ চলমান রাখাটা জরুরি।
সূত্র আরো জানায়, চলতি অর্থবছরের মূল বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) চলমান বিনিয়োগ প্রকল্পের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪৬১টি। তার মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য নির্ধারিত ছিল ৩৮২টি প্রকল্প। সংশোধিত এডিপিতে বিনিয়োগ প্রকল্পের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৬৩৯টি এবং সমাপ্তির জন্য নির্ধারণ করা হয় ৪৪১টি। চলমান ওসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ফাস্টট্র্যাকভুক্ত মেগা প্রকল্পও।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী জানান, করোনার প্রভাব অবশ্যই প্রকল্পগুলোতে পড়বে। তবে যেসব প্রকল্প সমীক্ষাসংক্রান্ত বা কারিগরি সহায়তা প্রকল্প, সেগুলো হয়তো কম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর যেসব প্রকল্প শতভাগ বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সেগুলোর মধ্যে কিছু হয়তো শেষ করা যাবে। তবে বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই সমস্যা হতে পারে।