করোনাভাইরাস সংকটের মধ্যেও এগিয়ে খুলনার প্রশাসন

0
708

সারোয়ার আহমেদ সালেহীন: সারা বিশ্ব আজ করোনা ভাইরাসের করাল থাবায় আক্রান্ত। বাংলাদেশেও ইতোমধ্যে এর প্রভাব গত ১৭ মার্চ থেকে পড়তে শুরু করে। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে গোটা দেশের মধ্যে খুলনার প্রশাসন এগিয়ে আছে। বিশেষ করে কতিপয় মানবিক উদ্যোগ গ্রহণ করে প্রশংসা কুড়িঁয়েছে। করোনার থাবা থেকে রক্ষা করতে স্থানীয় প্রশাসন সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করাসহ অন্যান্য উদ্যোগ যেমন- সরকারি ত্রাণ বিতরণ, ডাক্তারদের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রদান, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য সেবা নতুন আঙ্গিকে সাজানো এবং সরকারি অফিস আদালত বন্ধ ঘোষণা করেছে (জরুরি পরিসেবা ব্যতিত)।

ত্রাণ বিতরণের অংশ হিসেবে সরকার দেশব্যাপী জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে খাদ্য সামগ্রী এবং নগদ সহায়তা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিতরণ করছে। খুলনা জেলায় ইতিমধ্যে ১৫০০ মে. টন খাদ্যসামগ্রী এবং নগদ ৫৭ লক্ষ টাকা সরকার জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে নয়টি উপজেলা এবং খুলনা সিটি কর্পোরেশনের জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী বিতরণ করেছে। ইতিমধ্যে প্রায় ১ লক্ষ ৬ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা, নগদ টাকা এবং শিশু খাদ্য খুলনা জেলায় বিতরণ করা হয়েছে।

খুলনার মহানগরীতে প্রায় ১২ লক্ষ লোকের বসবাস। এর মধ্যে প্রায় ৩ লক্ষ ভাসমান লোক আছে যারা বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত। এদের মধ্যে আছে ট্রাক শ্রমিক, নৌযান শ্রমিক, পাটকল শ্রমিক, দোকান শ্রমিক, শিশু শ্রমিক, ভবঘুরে, ইমাম, মুয়াজ্জিন, ছোটখাট মুদি দোকানদার, দোকান-হোটেল শ্রমিক, নাপিত সহ নিম্ন আয়ের বিভিন্ন পেশার লোকজন। এরা এখানকার স্থানীয় লোক নয় এবং খুলনার ভোটারও না কিন্তু বহু বছর ধরে মহানগরীতে এসব শ্রেণী পেশায় প্রায় ৩ লক্ষ বসবাস করছে।

সরকারের পরিপত্র অনুযায়ী মহানগর এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের ৩১ টি ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মাধ্যমে প্রায় ৪০০ মে. টন চাল ও অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরা ভোটার আইডি কার্ড আছে এমন দরিদ্র লোকদের মাঝে এসব খাদ্র সামগ্রী বিতরণ করেছে। কিন্তু ভাসমান এসব লোক যারা মহানগরীতে বিভিন্ন বস্তি ও অন্যান্য এলাকায় বসবাস করেও তারা বঞ্চিত হচ্ছিল।
এসব বঞ্চিত লোকজনের অভিযোগ মিডিয়ায় প্রাপ্ত খবর এবং এসব নিম্ন আয়ের ভাসমান লোকদের কথা মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন মানবিক সহায়তার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বেসরকারি ত্রাণ সহায়তা সেল এর মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে এসব লোকের ডাটাবেজ তৈরি করে বাড়ী বাড়ী খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি চালু করেন গত ২০ মার্চ হতে।

এমন উদ্যোগে খুলনা জেলার ধনাঢ্য ব্যক্তি ও ব্যবসায়ী যারা স্বেচ্ছায় ত্রাণ বিতরণ ও সহায়তা করতে আগ্রহী তাদেরকে অনুপ্রাণিত করে জেলা প্রশাসন, খুলনার উদ্যোগে এ বেসরকারি ত্রাণ বিতরণ সেল গঠন করা হয়। প্রায় ২০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ৩০০ জন ভলান্টিয়ার দিনরাত পরিশ্রম করে দরিদ্র ভাসমান লোকজনের বাড়ী বাড়ী এসব সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন। জেলা প্রশাসকের পরিকল্পনায়, সরাসরি তত্ত্বাবধান এবং তদারকিতে এ ত্রাণ সহায়তা সেলের কার্যক্রম সুন্দরভাবে পরিচালিত হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, সংগঠন ও পেশীজীবি শ্রেণী উদ্বুদ্ধ হয়ে জেলা প্রশাসকের বেসরকারি ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রমে স্বেচ্ছায় চাল, ডাল, লবন, তেল, আলু সহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রদান করছেন। এ সেলের মাধ্যমে প্রায় ১২,৫০০ দরিদ্র ও ভাসমান লোকের হাতে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানো হয়েছে।

খুলনা মহানগরীতে প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার শ্রমিক শ্রেণী সহ প্রায় ৩ লক্ষ ভাসমান লোকজন (ট্রাক শ্রমিক, নৌযান শ্রমিক, পাটকল শ্রমিক, দোকান শ্রমিক, শিশু শ্রমিক, ভবঘুরে, ইমাম, মুয়াজ্জিন, ছোটখাট মুদি দোকানদার, দোকান-হোটেল শ্রমিক, নাপিত, হিজরা, যৌন কর্মী ইত্যাদি) বসবাস করেন। এসব দরিদ্র এবং ভাসমান লোকজনের খাদ্য সহায়তায় এ ত্রাণ কার্যক্রম চলমান। যদিও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। খুলনা মহানগরীরএই ৩ লক্ষ ভাসমান লোকদের খাদ্য সহায়তার আওতায় আনতে সরকারের সার্বিক সহায়তা আরও বৃদ্ধি প্রয়োজন। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

সরকারের বিভিন্ন সংস্থাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে জেলা প্রশাসক, খুলনা কর্তৃক পরিচালিত এ বেসরকারি ত্রাণ সহায়তা সেল ইতিমধ্যে খুলনাসহ সারা দেশে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে এবং সুন্দরভাবে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে লোকজনের মাঝে সুষ্ঠভাবে ত্রাণ বিতরণের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষ্যে ইতিমধ্যে দরিদ্র শ্রেণীর লোকজনের মাঝে রোজার সামগ্রী বিতরণের উদ্যোগও এ ত্রাণ সহায়তা সেলের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে যে পবিত্র রমজানে দরিদ্র পীড়িত ভাসমান জনগোষ্ঠীকে সকলের সহযোগিতায় এ বেসরকারি ত্রাণ সহায়তা সেলের মাধ্যমে সুষ্ঠ ও সুন্দরভাবে ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রাখা যাবে।

লেখক : সারোয়ার আহমেদ সালেহীন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), খুলনা জেলা প্রশাসন