করোনাভাইরাস রোধে অনলাইনে ব্যতিক্রম কর্মকাণ্ড

0
608

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনাটাইমস :
একদল সচেতন নাগরিক অনলাইনের মাধ্যমে এক সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তাঁদের উদ্দেশ্য প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধমূলক সতর্কবার্তা সুন্দরবন কোলঘেঁষা প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষের মাঝে পৌঁছানো। এর জন্য প্রথমে তাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুক) একটি গ্রুপ তৈরি করেন। গ্রুপের নাম করণ করা হয়েছে ‘করোনাভাইরাস ও দাকোপবাসি’। এতে সংযুক্ত রয়েছেন খুলনার দাকোপ উপজেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়নের নানা বয়সের মানুষ।

জ্যামিতিক হারে বাড়ছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রতিষ্ঠিত সব গণমাধ্যম প্রতিমুহূর্তে করোনাভাইরাসের খবর প্রকাশ করে যাচ্ছে। ফেসবুকসহ শীর্ষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে করোনাভাইরাসের খবরে আগ্রহ মানুষের। অর্থাৎ, এই সময়ে করোনাভাইরাস মাসুষের চিন্তার প্রধান বিষয়।

উজ্জ্বল বর্মণ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন। দাকোপ উপজেলার ধোপাদী মধ্যবিল গ্রামে বাড়ি তাঁর। উজ্জ্বল বেশ চিন্তিত। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য নিয়ম মেনে মাস্ক পরছেন। নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধুচ্ছেন। চাকুরির কারণেই তাঁকে রোজ বাসা থেকে বের হয়ে প্রত্যন্ত গ্রামে যেতে হচ্ছে।

উজ্জ্বল জানান, গ্রাম-গঞ্জের সাধারণ মানুষের মুখে করোনাভাইরাস নিয়ে আলোচনা থাকলেও সতর্কতা নেয় কোনো রকম। প্রতিরোধমূলক বিষয় জানেনা অনেকেই। তাই কয়েকজন মিলে ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে মিলিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সতর্কবার্তা সাধারণের মাঝে কিভাবে প্রচার করা যায়। সেভাবে একত্রিত হয়ে গ্রুপটি খুলে প্রাথমিক অবস্থান থেকে কাজ করে যাচ্ছি।

সপ্তাহখানেক আগে প্রস্তুত করা কারোনাভাইরাস ও দাকোপবাসি গ্রুপটি বেশ সাড়া পেয়েছে। সেখানে সংযুক্ত হয়েছেন সরকারি ও বেসরকারি চাকুরিজীবি, সংবাদকর্মী, ডাক্তার, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সামাজিক সংগঠনের সদস্য, সুশীল সমাজের সদস্য, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। এই গ্রুপে প্রায় দুই শতাধিক দাকোপের বিভিন্ন এলাকার মানুষ যুক্ত আছেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমিত থেকে কিভাবে বেঁচে থাকতে পারে, সে ব্যাপারে মূলত আলোচনা হচ্ছে গ্রুপের মাধ্যমে। আর সেই অনুসারে কাজ করে যাচ্ছে গ্রুপের সদস্যরা।

ওই গ্রুপের একজন অসীম ঘরামী। পেশায় একজন বেসরকারি চাকুরিজীবি। তিনি গ্রুপে মাইকিং করে গ্রামে গ্রামে সতর্কবার্তা প্রচারণার বিষয় তুলে ধরেন। এটি নিয়ে ভালই সাড়া জাগে এবং সিদ্ধান্তও হয়। অসীম বলেন, মাইকের মাধ্যমে প্রচারের জন্য কয়েকটি এলাকায় মাইকও সংগ্রহ করা হয়েছে। আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা কাজও করছেন। এজন্য তিন মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের একটি অডিও বার্তা তৈরি করে গ্রুপের মাধ্যমে সদস্যদের কাছে সরবারহ করা হয়েছে। এছাড়া প্রত্যন্ত এ অঞ্চলের মানুষকে করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করাই আমাদের কাজ।

যে কোনো বিপদে একত্রিত হয়ে কাজ করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে সুদীপ্ত রায় নামের একজন গ্রুপে বলেন, যার যার স্থান থেকে দাকোপবাসিকে রক্ষা করতে কাজ করতে হবে। সুদীপ্ত এতোমধ্যে কামারখোলা এলাকায় মাইকের মাধ্যমে সতর্কবার্তাটি প্রচারণা করছেন। সেখানে বলা হচ্ছে কিভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকবে, কোন কোন জায়গায় যাওয়া যাবে আর যাবে না, নিজেকে সুরক্ষা রাখার জন্য কি করতে হবে।

সাদিয়া চাঁদনী বলছিলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে অনলাইনে, পত্রিকায়, টেলিভিশনে সর্বশেষ সব খবর জানছি। কারোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশেও পাঁচজন মানুষ মারা গেছেন, যাঁরা বৃদ্ধ। ঘরে আমার বৃদ্ধ শাশুড়ি। আমার বাচ্চা আজ ঘরে বন্দী। তবে চাকুরির কারণে স্বামী ঘরের বাইরে যাচ্ছেন। ভয় হয়, যদি আমরাও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হই।

সাদিয়ার মতো আরও অনেকের মধ্যে এ ভয় কাজ করছে। তবে এ ভয়কে রোধ করার লক্ষ্যে সতর্কমূলকবার্তা সাধারণের মাঝে তুলে ধরছে করোনাভাইরাস ও দাকোপবাসি নামের গ্রুপের সদস্যরা। অন্তত ২০ সেকেন্ড পর পর সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন। ভয় ও আতঙ্ক নয়, সচেতনতার মাধ্যমেই করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব।

ওই গ্রুপের একজন শিক্ষার্থী সমিত রায়। গ্রুপে আলোচনার পরে পানিতে জীবাণুনাশক মিশিয়ে বাড়িতে বাড়িতে স্প্রে করছেন তিনি। সমিত প্রশাসনের কাছে দাবি করেন গ্রুপের সদস্যদের জন্য পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্টের (পিপিই)। এটি পেলেই সদস্যরা স্বেচ্ছাশ্রমে করোনার রোধে সকল প্রকারের সহযোগিতায় এগিয়ে যাবে।