কমলা রকেটে ঘুরে আসার অনুভূতি

0
609

বিনদোন ডেস্কঃ

খুবই সাধারণ গল্পের চলচ্চিত্র ‘কমলা রকেট’। আমাদের বাসে ট্রেনে লঞ্চে বাড়ি ফেরার মতো। সেখানে অনেক যাত্রী থাকে, যাত্রীদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা গল্প থাকে, সে গল্পগুলো আমরা কেউ জানতে চাই না, সেই সব গল্প একত্রে দেখানো হয়েছে কমলা রকেটে। কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের দুটো ছোট গল্প ‘মৌলিক’ এবং ‘সাইপ্রাস’ এর কাহিনি অবলম্বনে তৈরি হয়েছে এই চলচ্চিত্র।

একটা লাশ নিয়ে উঠে গেল রকেটে, কিছু চাকরিপ্রার্থী যাত্রী, কিছু বিসিএস ক্যাডার যাত্রী, কিছু ফার্স্ট ক্লাস যাত্রী, কিছু সাধারণ যাত্রী, একদল সার্কাসের লোক, একটা ছাগলসহ দুজন মানুষ, আর কিছু হকারও উঠে গেল। কেউ খুলনা, কেউ মংলা যাবে আর কিছু মানুষ কোথাও যাবে না। আমাদের চারপাশে কত চরিত্র আছে, কেউ কাউকে ঠকিয়ে বড় হয়ে উঠছে , কেউ চাকরির জন্য মরিয়া হয়ে উঠছে; এমনকি ঘুষ দিতেও প্রস্তুত, কেউ চাকরি পেয়ে যাচ্ছে, কেউ চাকরি পেয়েও চাকরি করছে না কিংবা চাকরির পাশাপাশি আরো অনেক কিছু নিয়ে ভাবছে, কেউ ব্যবসার সুযোগ পেয়েও ব্যবসায় মন দিচ্ছে না, দাম্পত্য কলহ এবং গোপন সম্পর্কের একটা আর্তনাদ। এই যে আমাদের দেশের মাঝে একেক জনের একেক অসুবিধা, সুবিধা, দৌড় ঝাপ এবং গন্তব্যে ফিরে যাওয়া কিংবা গন্তব্য খুঁজে না পাওয়া এসব কিছুই যেন উঠে এসেছে এই রকেটে।

শ্রেণীভেদে সবাই সবার থেকে আলাদা বেশভূষা ধারণ করলেও কাম, ক্ষুধা, শীত, গন্ধের মতো মৌলিকতার প্রশ্নে, বেঁচে থাকার প্রশ্নে সবাই এক- কমলা রকেট ছবিতে একথা স্পষ্ট। ব্যবসায়ীর বিবেকের দংশন প্রসঙ্গে একজন মন্দ লোকেরও মন আছে। এ ছবিতে বিশেষ একটি দৃশ্যের কথা বলতেই হয়, যেখানে আমাদের পচন ধরা সমাজব্যবস্থা থেকে যে উটকো গন্ধ বের হচ্ছে, তা প্রতীকী অর্থে দেখানো হয়েছে। সেই গন্ধ আমাদের উচ্চশ্রেণীর নাকে সাধারণত পৌঁছায় না। তবে যখন পৌঁছায়, তখন নিজেরাই নিজেদের কৃতকর্মের নোংরা গন্ধ পান। আর এই দৃশ্যটিতে কোনো সংলাপ ছাড়া অসাধারণ অভিনয় করেছেন তৌকীর আহমেদ। আর মোশাররফ করিমের সুনিপুণ অভিনয় এবং চরিত্রের মাঝে ঢুকে গিয়ে চরিত্রকে বাস্তব করে তোলাই যেন তার অন্যতম বিশেষত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে, কমলা রকেটেও তার কমতি নেই। মোশাররফ করিমকে আরো অন্যভাবে দেখতে চাইলে আপনাকে ‘কমলা রকেট’ দেখতেই হবে হলে গিয়ে।

এ ছবিতে ড্রোন ক্যামেরায় কিছু এরিয়েল শট মুগ্ধ হয়ে দেখেছি! কিছু সুন্দর ক্যামেরার কাজ এবং দুটো হিপ্নোটাইজ হওয়ার মতো গান। সিনেমা শিল্পের চূড়ান্ত শৈল্পিকতা বহন করে। একজন সাহিত্যপ্রেমী মানুষ যদি সিনেমা বানায় সেখানে শিল্প উঠে আসবে, সমাজের নানা দিক উঠে আসবে এবং চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবার মতো অনেক কিছুই থাকবে, তার চোখ এড়াবে না কিছুই। যেমন ইঁদুরের চলাফেরার সাথে মাছির ভো ভো শব্দটার মতো অসহনীয় কিছু সৌন্দর্য্য সিনেমার পরতে পরতে। সাহিত্যপ্রেমী মানুষ বন্ধুবর নূর ইমরান মিঠু এদিক থেকে তার স্বল্প বাজেটের সিনেমাতে অত্যন্ত যতœ নিয়েই কাজ করেছেন। সেটার ছাপ স্পষ্ট পাওয়া যাবে যদি কেউ বাইনোকুলার নিয়ে সিনেমা দেখতে না বসে।

সিনেমাটি মুক্তির আগে নামমাত্র প্রচারণার কারণে অনেক দর্শক এখন এই চলচ্চিত্রের নামটি পর্যন্ত জানেন না। এক্ষেত্রে প্রযোজক ইমপ্রেস টেলিফিল্ম কি বুঝেছে তারাই ভালো বলতে পারবে। বিষয়টি দুঃখজনক। আমরা চাই প্রতিটি চলচ্চিত্রের বিকাশ হোক। সঠিক পরিচর্যা হোক। শুধু পুরস্কার কিংবা চলচ্চিত্র উৎসব নয়, প্রত্যেক নির্মাতার স্বপ্নে যেন প্রতিটি দর্শক সওয়ারী হয়। প্রতিটি মনে রাখার মতো চলচ্চিত্র যেন সত্যি সত্যিই আজন্ম লালিত হয় দর্শকের মানসপটে।