কপিলমুনিতে স্বাস্থ্য কর্মী কর্তৃক যুবককে ধরে নিয়ে গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতন

0
192

নিজস্ব প্রতিবেদক::

আইল (সীমানার) বাঁশ কাটতে নিষেধ করার অপরাধে পাইকগাছার কপিলমুনিতে স্থানীয় সিএইচসিপি (স্বাস্থ্য কর্মী) কতৃক প্রতিবেশী সাধন শীল (৩২) নামে এক যুবককে ধরে নিয়ে বাড়িতে আটকে রেখে মারপিট ও দড়ি দিয়ে গাছে বেঁধে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার কাশিমনগর গ্রামে।

অভিযোগে জানাগেছে, উপজেলার কপিলমুনির কাশিমনগর গ্রামের মৃত বিনাই কৃষ্ণ শীলের ছেলে সাধন কুমার শীলের বাড়ির আইল সীমানায় প্রতিবেশী মৃত রনজিত কুমার মন্ডলের ছেলে রামনগর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মিল্টন মন্ডলের বাড়ির সীমানা অবস্থিত। দীর্ঘ দিন যাবৎ ঐ সীমানা নিয়ে উভয় পরিবারের মধ্যে গোলযোগ চলে আসছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে কয়েক দফায় শালিসীও হয়েছে। এক পর্যায়ে মিল্টন গংয়ের কাছে প্রাপ্ত সাধনের ২টি দাগে ১৪ ও ৫ শতক মোট ১৯ শতক জমি একটি দাগ থেকে বুঝিয়ে দিয়ে সীমাণা পুণ:নির্ধারণ করা হয়। এতে সাধনের লাগানো বাঁশের অংশ বিশেষ মিল্টনের সীমানা বরাবর চলে যায়। স্থানীয়ভাবে বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে সাধনকে বাঁশগুলি কেটে নেয়ার কথা থাকলেও উল্টো মিল্টন ঘটনার দিন সকালে বহিরাগতদের দিয়ে বাঁশগুলি কর্তন শুরু করে। বিষয়টি বুঝতে পেরে সাধন ঘটনাস্থলে গিয়ে বাঁশ কাটতে বাঁধা দেওয়ায় মিল্টন বহিরাগতদের সহযোগিতায় সাধনের উপর আকষ্মিক আক্রমন শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা সাধনকে সেখান থেকে ধরে নিয়ে বাড়িতে আটকে রেখে গরু বাঁধা দড়ি দিয়ে আম গাছের সাথে বেঁধে রাখে। এসময় তার আত্মচিৎকারে বাড়ির লোকজনসহ প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসলে তারা দড়ির বাঁধন খুলে দিয়ে আটকে রাখে।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মিল্টনের কাছে সাধনকে বেঁধে রাখার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি ঘটনার কথা স্বীকার করে প্রথমে সাধন তাকে কলার চেপে ধরে বলে জানালেও বেঁধে রাখার ব্যাপারে সদুত্তর দিতে পারেনি।

স্থানীয়রা জানায়, মিল্টন সরকারি চাকুরী করায় কাউকে মূল্যায়ন করেনা। সূত্র আরো জানায়, তিনি দীর্ঘ দিন যাবৎ একই সাথে কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি’র পাশাপাশি কপিলমুনি সহচরী বিদ্যামন্দির কলেজিয়েট স্কুলের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রভাষক পদে চাকুরী করতেন। সেই সুবাদে দীর্ঘ দিন যাবৎ বাড়িতে কোসিং সেন্টার খুলে বসেছেন। অভিযোগ রয়েছে, চলতি করোনাকালীণ সময়ে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি থাকলেও মিল্টন বাড়িতে আলাদা ঘর তৈরি করে সেখানে কোচিং সেন্টার পরিচালনা করছেন। যেখানে কয়েক সিফটে বিভিন্ন কলেজের শত শত ছাত্র-ছাত্রী কোচিং করে। সেক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকে সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত সেন্টার খুলে রাখার কথা থাকলেও কোনদিন সময়মত ক্লিনিকে যাননা তিনি।

অফিস চলাকালীণ সময়ে বাড়িতে অবস্থানের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন,এটা আপনার ব্যাপার নয়, ভাইয়ের সাথে কথা বলে নিয়েছেন। এসময় ভাইয়ের পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নানা বাহানার পর সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) আবু জাফরের কথা বলেন।
এব্যাপারে সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) আবু জাফরের কাছে জানতে চাইলে বলেন, বাড়িতে জরুরী কাজ আছে বলে দেরিতে অফিসে যাবে বলে জানায়।

স্থানীয়রা জানায়, মিল্টন প্রতিদিন সকাল-বিকাল কয়েক শিফটে কোচিং করানোর ফলে দেরিতে ক্লিনিকে যায় ঘটনার দিনও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।

এনিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য শেখ রবিউল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জরুরী কাজে তিনি পাইকগাছা অবস্থান করছিলেন তবে ঘটনার কথা শুনেছেন। এব্যাপারে তিনি মিল্টনকে ডাকাবেন বলেও জানান।

এদিকে একাধারে একজন শিক্ষক ও স্বাস্থ্যকর্মীর কাছ থেকে এহেন অমানবিক আচরণের ঘটনার শিকার ভূক্তভোগী সাধন শীলের পরিবারসহ এলাকাবাসী তদন্তপূর্বক মিল্টনকে আইনের আওতায় নেয়ার জন্য যথাযথ প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।