ওয়াসার পানির মান নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই

0
454

ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ করা পানির মান নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। ওয়াসার পানি পরীক্ষা করে মাঝেমধ্যে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা যে তথ্য উপস্থাপন করে, তাও উদ্বেগজনক। কিন্তু বাধ্য হয়ে নগরবাসী পান করছে দূষিত পানি। শহরের মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত স্তরের নাগরিকরা ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ করা পানি নানাভাবে শোধন করে ব্যবহার করলেও নিুবিত্ত পরিবারের পক্ষে সেটা সম্ভব হয়ে ওঠে না। রাজধানীর মিরপুর, সবুজবাগ, খিলগাঁও, মালিবাগ, বাড্ডা, জুরাইন ও পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকার পানিতে মাঝেমধ্যেই প্রকট দুর্গন্ধের খবর সংবাদ মাধ্যমে দেখা যায়। যদিও এসব অভিযোগ বরাবরই উড়িয়ে দেয় ঢাকা ওয়াসা।
ঢাকা ওয়াসার লাইনের পানির দুর্গন্ধের কারণে বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা পেতে নগরবাসী নির্ভর করছে জার ও বোতলজাত পানির ওপর। এতে বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুণ। ঢাকায় প্রতিদিন জার ও বোতলজাত পানি বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৯৫ লাখ লিটার। নিরাপদ ও সুস্থ থাকতে বেশি দামে ক্রেতারা এ পানি কিনছে। মিনারেল ওয়াটার পানকারী মানুষের সংখ্যা বাড়লেও ঢাকায় পানিবাহিত রোগে বাড়ছে। মূলত ওয়াসার পানির ওপর মানুষের নির্ভরতা কমে যাওয়ায় জার ও বোতলজাত পানির বিক্রি বাড়ছে।
গত বছর সুপেয় পানির দাবিতে আন্দোলন, এমনকি ওয়াসা ঘেরাও কর্মসূচিও পালন করে রাজধানীবাসী। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। আদালতে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের দাবি ছিলো; রাজধানীতে সরবরাহ করা ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়। এরপর গত জুলাইয়ে হাইকোর্ট ওয়াসার পানির মান পরীক্ষার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। ওই কমিটি আদালতে ওয়াসার পানির মান-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। সেই প্রতিবেদন বলছে, ওয়াসার দাবি ঠিক নয়। একাধিক জায়গা থেকে পানির নমুনা পরীক্ষা করে এ কমিটি। এতে ক্ষতিকর ই-কোলাই ও ব্যাকটেরিয়ার সত্যতা মিলে। বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদনে বলা আরো বলা হয়, ওয়াসার পানি সুপেয়, সংস্থাটির এমন দাবি অসত্য। ওয়াসার পানিতে মিলেছে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও মলের জীবাণু।
সুপেয় পানির চাহিদায় অনেকেই কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করছে। এভাবে অপরিকল্পিতভাবে পানি উত্তোলনের কারণে প্রতি বছরই ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামছে। পানির স্তর নিচে নামার সাথে সাথে ভূগর্ভস্থ খাবার পানির সাথে নলকূপে উঠে আসছে ক্ষতিকর ভারী ধাতু ও দূষিত পদার্থ।
আমরা মনে করি, ঢাকা ওয়াসার পানির গুণগতমান বজায় না থাকায় কারণে জার ও বোতলজাত পানি পান করার বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়েছে। ওয়াসার পানি মানসম্পন্ন ও পর্যাপ্ত থাকলে পানি উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর এতো প্রসার ঘটতো না। ওয়াসার লাইনের পানি সরাসরি পানে নির্ভরতা কমিয়ে আসায় জার ও বোতলজাত পানির ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। এতে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর বছরে বছরে ব্যবসার প্রসার ঘটছে। এভাবে চলতে থাকলে মানুষ একসময় বাণিজ্যিক পানির ওপর অনেকাংশে নির্ভর হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।