এসবিসির বকেয়া পরিশোধে নন-লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানিগুলোর গড়িমসি

0
400

খুলনাটাইমস এক্সক্লুসিভ: সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের শত শত কোটি বকেয়া টাকা পরিশোধে ৪০টি নন-লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি গড়মসি করছে। পুনঃবীমার প্রিমিয়ামের এই টাকা ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু চলতি বছরের ১৫ জুলাইয়ের মধ্যেও বীমা কোম্পানিগুলো তা পরিশোধ করেনি। এমন পরিস্থিতিতে পাওনা টাকা আদায়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে অভিযোগ করেছে এসবিসি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাতেও সরকারি প্রতিষ্ঠানটি খুব বেশি ফল পায়নি। বর্তমানে ৪০ বীমা কোম্পানির কাছে এসবিসির পাওনার পরিমাণ ৫৭২ কোটি টাকা। এসবিসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিদ্যমান নিয়মানুসারে ঝুঁকি কমাতে কোম্পানিগুলোর বীমার ওপর শতভাগ পুনঃবীমা করার বিধান রয়েছে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ সাধারণ বীমা কর্পোরেশনে করা বাধ্যতামূলক। বাকি ৫০ শতাংশ পুনঃবীমা কোম্পানি ইচ্ছা করলে বিদেশী কোম্পানির সঙ্গেও করতে পারে। পুনঃবীমার এ আইন অনুসারে ৪০টি বীমা কোম্পানির কাছে ৫৭২ কোটি ৫৯ লাখ ৬৬ হাজার ৫০১ টাকা পাবে এসবিসি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বীমা কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন ধরে টাকা পরিশোধ করছে না। এতে এসবিসির পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বীমা খাতও। আর বীমা কোম্পানির প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন গ্রাহকরা।
সূত্র জানায়, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত তথ্যানুসারে এসবিসির সবচেয়ে বেশি বকেয়া রয়েছে পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৫৬ কোটি ৫০ লাখ ৬ হাজার ৫৯ টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা প্রগতি ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৪৭ কোটি ৮৬ লাখ ৩৮ হাজার ৭৫৯ টাকা, তৃতীয় অবস্থানে থাকা কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৪২ কোটি ১২ হাজার ৩১ হাজার ৬৪৭ টাকা পাওনা রয়েছে। তাছাড়াও চতুর্থ স্থানে থাকা ইসলামিক ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৩৩ কোটি ৭১ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩ টাকা ও পঞ্চম স্থানে থাকা ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৩৩ কোটি ৫৭ লাখ ২৩ হাজার ৯৬৪ টাকা পাওনা রয়েছে। ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৩৩ কোটি ৭৬ লাখ ১৭ হাজার ৮৩ টাকা, জনতার কাছে ৩৩ কোটি ৪২ লাখ ৮৯ হাজার ৯৬৬ টাকা, পিপলস ইন্স্যুরেন্সের ৩২ কোটি ৭ লাখ ৩১ হাজার ৮৭৩ টাকা, কর্ণফুলীর কাছে ২৬ কোটি ৬৬ লাখ ১২ হাজার ৩৫৪ টাকা, মেঘনার কাছে ২৬ কোটি ৯৮ লাখ ৬২ হাজার ৭৮০ টাকা, রূপালী ইন্স্যুরেন্সের কাছে ২৪ কোটি ৫৯ লাখ ৮১ হাজার ৪০৬ টাকা, ইস্টল্যান্ডের কাছে ১৮ কোটি ৫৫ লাখ ৩৬ হাজার ১২৯ টাকা, এশিয়ার কাছে ১৮ কোটি ৪১ লাখ ৫৭ হাজার ৬২৪ টাকা, ইসলামী কমার্শিয়ালের কাছে ১৭ কোটি ৩৩ লাখ ৬৫ হাজার ১১ টাকা, বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কাছে ১৬ কোটি ৩৮ লাখ ৯২ হাজার টাকা, গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের কাছে ১৫ কোটি ৫৮ লাখ ২ হাজার ৪৩৭ টাকা পাওনা রয়েছে এসবিসির। এছাড়াও এশিয়া প্যাসিফিকের কাছে ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ২২ হাজার ১৯১ টাকা, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের কাছে ১৪ কোটি ৫৩ লাখ ৩৮ হাজার ৯৯১ টাকা, সোনার বাংলার কাছে ২ কোটি ৭৮ লাখ২০ হাজার ৯৭ টাকা, রিপাবলিকের কাছে ১৩ কোটি ২০ লাখ ৮৫ হাজার ২৫০ টাকা, মার্কেন্টাইলের কাছে ১৪ কোটি ৫৪ লাখ ৮৯ হাজার ৩৮০ টাকা, সিটির কাছে ৮ কোটি ৬৪ লাখ ৩ হাজার ৯০৮ টাকা, প্রভাতীর কাছে ১০ কোটি ৮৯ লাখ ১৭ হাজার ৭৬২ টাকা, দেশ ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৮ কোটি ৮৪ লাখ ৯ হাজার টাকা ও রিলায়েন্সের কাছে ১২ কোটি ৯৪ লাখ ৩১ হাজার ৭৬৫ টাকা পাবে এসবিসি।
সূত্র আরো জানায়, ১০ কোটি টাকার নিচে পাওনা কোম্পানিগুলোর মধ্যে অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স, বিডি কর্পোরেশন, বিডি ন্যাশনাল, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, ক্রিস্টালের, ঢাকা ইন্স্যুরেন্স, ইস্টার্ন, ফেডারেল, গ্লোবাল, নিটলের, নর্দান, প্যারামাউন্ট, ফনিক্সের, প্রাইম, তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, ইউনাইটেড, ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স, স্ট্যান্ডার্ড, সাউথ এশিয়ার, সিকদার ইন্স্যুরেন্স, সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স, পূরবী ইন্স্যুরেন্স এবং সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের পাওনা রয়েছে এসবিসির।
এ বিষয়ে এসবিসির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) জাকির হোসেন জানান, নিয়মানুসারে কোম্পানিগুলো এসবিসিকে পুনঃবীমার প্রিমিয়াম বাবদ এই টাকা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোম্পানিগুলো টাকা দিতে গড়িমসি করছে। পাওনা টাকা দ্রুত আদায়ের লক্ষ্যে এসবিসি চেষ্টা করছে। পাশাপাশি বীমা কোম্পানিগুলোর ক্লেইমগুলো পরিশোধ করছে। যাতে বীমা কোম্পানিগুলো দ্রুত প্রিমিয়াম পরিশোধ করে। পাশাপাশি আইডিআরএর মনিটরিং টিমকে আরো জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।