উচ্চ শিক্ষার পাশাপািশ কর্মসংস্থানের জন্য উন্নত বিশ্বের অন্যতম একটি দেশ কানাডা

0
1025

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
উত্তর আমেরিকার দেশ কানাডা। উন্নত বিশ্বের অন্যতম একটি দেশ। উচ্চ শিক্ষার এক চমৎকার স্থান। গোটা দেশজুড়ে এখানকার বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলো ছড়িয়ে আছে। Association of Universities and College of Canada (AUCC)-ই কানাডার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করে। এর আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৯টি। এখানকার পড়াশোনা, ডিগ্রি বিশ্বমানের। কর্মসংস্থান ও জীবন সবদিক থেকেই কানাডার স্থান প্রথম দিকে। পড়াশোনা শেষে এখানে কর্মসংস্থানসহ এমনকি পড়াশোনা অবস্থায়ই নাগরিকত্ব লাভের সুযোগও রয়েছে। বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের কাছে বিদেশে উচ্চ শিক্ষায় কানাডা অন্যতম পছন্দ। এ নিয়েই এবারের আয়োজন কানাডায় উচ্চ শিক্ষা।

শিক্ষার ধরনঃ
কানাডায় উচ্চ শিক্ষা লাভে আন্ডার গ্রাজুয়েট, পোস্ট গ্রাজুয়েট এবং ডক্টরেট রয়েছে। এখানে একজন শিক্ষার্থী ফুলটাইম অথবা পার্টটাইম পড়াশোনা করতে পারে। এ শিক্ষার পাশাপাশি এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কো-অপারেটিভ এডুকেশন, ডিস্ট্যান্ট লার্নিং, কন্টিনিউয়িং এডুকেশন ইত্যাদি কোর্স রয়েছে। রুম, ল্যাবের বাইরেও এখানে শিক্ষার দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য রয়েছে ওয়ার্কশপ ও কাউন্সেলিং ব্যবস্থা, পড়াশোনার সহযোগিতার জন্য রয়েছে স্কলারশিপ।

পড়াশোনার মাধ্যমঃ
কানাডায় ইংরেজি এবং ফ্রেঞ্চ দুটিই অফিসিয়াল ভাষা। তাই সব বিশ্ববিদ্যালয়েই এ দু’ভাষাতেই পড়াশোনা করা যায়। আপনি কোন বিষয়ে পড়বেন সেটা আগেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। তবে ইংরেজি ভাষা পড়তে TOEFL-এ আপনার স্কোর থাকতে হবে ৫-৬ এর অধিক। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে এর ভিন্নতা আছে। আর ফরাসী ভাষায় পড়ার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ল্যাঙ্গুয়েজ ল্যাব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

পড়াশোনার বিষয়ঃ
কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্ডার গ্রাজুয়েট পর্যায়ে প্রায় দশ হাজার এবং পোস্ট গ্রাজুয়েট পর্যায়ে প্রায় তিন হাজারটি বিষয় রয়েছে। এর অন্যতম হলো- এডুকেশন, বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ইকোনোমিক্স, ইতিহাস, রিলিজিওন, ইংরেজি, কম্পিউটার সায়েন্স, ফুড সায়েন্স, বায়োলজি, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ইলেকট্রনিক্স, মেডিক্যাল সায়েন্স, মেরিন অ্যাফেয়ার্স, জিওগ্রাফি, অ্যাস্ট্রোনমি, ফিলোসফি, আইন, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি।

পড়াশোনা ও থাকা খাওয়ার খরচঃ
কানাডার বিভিন্ন প্রদেশে খরচও বিভিন্ন রকম। এ ভিন্নতা আবার বিশ্ববিদ্যালয়, ফ্যাকাল্টি বা বিষয়ের ভিন্নতায়ও বিভিন্ন রকম হয়। তবে আন্ডার গ্রাজুয়েট ৩-৪ বছরব্যাপী কোর্সে টিউশন ফি আনুমানিক বছরে ৫-৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে। আর পোস্ট গ্রাজুয়েট ১-২ বছর মেয়াদি কোর্সে বছরে ৬ থেকে ১০ লাখ পর্যন্ত লাগতে পারে। জীবন যাপনের ক্ষেত্রেও রয়েছে ভিন্নতা। এখানে অবশ্য থাকা খাওয়া কিছুটা ব্যয়বহুল। এক রুমের এপার্টমেন্ট ভাড়া ১৬ থেকে ২০ হাজার টাকা। খেতে প্রতিদিন ১২ শত থেকে ২ হাজার টাকা লাগতে পারে। সে হিসেবে মাসিক খরচ আসে ৪৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা।

পড়াশোনার পাশাপাশি কাজঃ
কানাডাতে পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করার পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে কাজ করার জন্য আপনার ওয়ার্ক পারমিট লাগবে। তবে কানাডায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই কাজের সুযোগ আছে। সেক্ষেত্রে ওয়ার্ক পারমিটের প্রয়োজন হয় না। ওয়ার্ক পারমিটের ক্ষেত্রে আপনার ক্লাস টাইমে নিয়োগকর্তা আপনাকে ছেড়ে দিতে রাজি থাকলেই কেবল কর্তৃপক্ষ আপনার নামে ওয়ার্ক পারমিট ইস্যু করবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় হতে কোনো প্রকার সমস্যা হবে না। কাজের সুযোগ অনুযায়ি কাজ করতে পারলে এখানে থাকা খাওয়া পড়াশোনার খরচ মিটিয়ে আপনি বাড়িতেও টাকা পাঠাতে পারবেন।

আবেদন, ভর্তি ও ভিসা প্রসেসিংঃ
কানাডায় পড়তে চাইলে আপনি কোন্ বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং কোন্ বিষয়ে ভর্তি হতে চান আগে সেটা পছন্দ করতে হবে। পূর্বে সে বিষয়ে পড়ার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা আপনাকে জেনে সেটা অর্জন করতে হবে। এরপর আপনি আন্ডার গ্রাজুয়েটে ভর্তি হতে চাইলে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর এবং পোস্ট গ্রাজুয়েট পর্যায়ে ভর্তি হতে চাইলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের ডিন বরাবর আবেদনপত্র পাঠাতে হবে। সাথে আপনার বিষয়ও তাদের অবহিত করবেন। এটা আপনাকে হাতে কিছুটা সময় রেখেই করতে হবে। ভিসা প্রসেসিং এর ক্ষেত্রে আপনার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা অফার লেটার, আর্থিক স্বচ্ছলতার কাগজপত্র এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বাংলাদেশের কানাডিয়ান দূতাবাসে দেখিয়ে ভিসা সংগ্রহ করতে হবে। তখন আপনার স্টাডি পারমিট লাগবে। স্টাডি পারমিট সংগ্রহ করতে ৭ থেকে ১৩ হাজার টাকা লাগবে। এরপর আপনি ভিজিটর ডিমান্ড কার্ড পেপার সংগ্রহ করে চলে যাবেন কানডায়।

স্কলারশিপঃ
কানাডায় বড় অংকের টিউশন ফি দিয়ে পড়তে হলেও, স্কলারশিপের ব্যবস্থাও আছে। এজন্যে প্রথমে বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয় এরপর যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছেন বা হবেন সেখানকার Financial Aid office-এ যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়াও নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যারা স্কলারশিপ দেয়। যেমন কানাডিয়ান হার্ট ফাউন্ডেশন, ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটি, কমনওয়েলথ স্কলারশিপ ইত্যাদি।

উল্লেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয়ঃ

ওটাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়
টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়
ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়
থম্পসন রিভারস ইউনিভার্সিটি
গুয়েলফ বিশ্ববিদ্যালয়