উচ্চ আদালতে সরকারের যত মামলা চলছে

0
152

টাইমস ডেস্ক: উচ্চ আদালতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মামলা চলছে। নিয়মিত শুনানিও হচ্ছে। তবে নিস্পত্তি হতে আরও সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আওতাধীন চলমান মামলাগুলোর মধ্যে ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স সংক্রান্ত, সংবিধান (১৬তম সংশোধন) আইন, ২০১৪ এবং মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯ এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বিভাগে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৫ ১৪৭ ধারার সংশোধন মামলা উল্লেখযোগ্য। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানিয়েছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আইন ও মামলা সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ২০২১ সালে প্রাথমিক পর্যায়ে গঠন করা হয় আইন কোষ। পরে কাজের পরিধি বাড়লে আইন শাখা নামে একটি নতুন শাখা করা হয়। এই অধিশাখা থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে বিবাদী করে দায়ের করা সুপ্রিম কোর্ট বা এর অধীনস্ত আদালতে দায়ের করা মামলার যাবতীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। এ ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারী সম্পৃক্ত প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল এবং প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মামলার বিষয়ে প্রয়োজনীয় সমন্বয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আওতাধীন ২০২০ সাল পর্যন্ত চলমান মামলা সংক্রান্ত কার্যক্রমের বিবরণে জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে চলমান ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স সংক্রান্ত, সংবিধান (১৬তম সংশোধন) আইন, ২০১৪ এবং মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯ এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বিভাগে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৫, ১৪৭ ধারার সংশোধন মামলাসহ ৫টি রিট পিটিশন উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়াও হাইকোর্ট বিভাগে ১টি রিট পিটিশন সংক্রান্ত, প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে ২টি মামলা চলমান। মামলার বিবরণে জানা গেছে, ওয়ারেন্ট প্রিসিডেন্স সংক্রান্ত মামলার রিট পিটিশন নম্বর ১১৬৮৫/২০০৬। এই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমে সিভিল আপিল নম্বর ৪১/২০১১ এবং সর্বশেষ রিভিউ পিটিশন নম্বর ৩৮/ ২০১৭ উদ্ভুত হয়। মামলার বাদী মো. আতাউর রহমান। বিবাদি সরকারের পক্ষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ২০১৯ সালের ১৭ অক্টোবর মামলাটি শুনানি জন্য কজলিস্টে আসে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল সময় প্রার্থনা করলে আদালত তা মঞ্জুর করে। আপিল বিভাগের দ্বিতীয় মামলাটির বাদী অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান সিদ্দিকী। বিবাদী সরকারের পক্ষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মামলাটি সংবিধান (১৬তম সংশোধন) আইন ২০১৪ সংক্রান্ত। রিট পিটিশন নন্বর ৯৯৮৯/২০১৪। মামলার বিবরণে জানা গেছে, বাংলাদেশের সংবিধানের ১৬তম সংশোধনী ১০ম জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে পাস হয়। ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি এই বিলে সম্মতি দেন এবং একই বছরের একই তারিখ ২০১৪ সালের ১৩ নম্বর আইন ওই সংশোধনী আইনের গেজেট প্রকাশ করা হয়। সংশোধনীর পরিপ্রেক্ষিতে পাসকৃত সংবিধান (১৬তম সংশোধন) আইন- ২০১৪ এর বিরুদ্ধে রিট পিটিশনটি দায়ের করেন বাদী। ২০১৬ সালের ৫ মে হাইকোর্ট বিভাগ এই সশোধনী বাতিল করে রায় ঘোষণা করে। হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে সিভিল আপিল নম্বর ০৬/২০১৭ দায়ের করা হয়। একই বছরের ১ আগস্ট মামলাটির পূর্ণাঙ্গ রায় আপিল বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ হয়। রায়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা পূর্বক রিভিউ দায়েরের জন্য ২০১৭ সালের ১০ আগস্ট আইন ও বিচার বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়। অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর থেকে জানা গেছে, রিভিউ দাখিল করা হয়েছে। তবে শুনানির দিন ধার্য হয়নি এখনও। একইভাবে হাইকোর্ট বিভাগে মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯-এর কয়েকটি ধারাকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়। এর নম্বর- ২৪৪৯/২০১৭ এবং ২৪৫১/২০১৭। ২০১৭ সালের ১১ মে হাইকোর্ট বিভাগ মামলাগুলোর এনালগাস রায় দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল দায়ের করা হয়েছে। যা আদালত গ্রহণ করেছে। আপিল বিভাগে রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রশাসনিক কমকর্তা ফরিদা ইয়াসমিনকে চাকরিচ্যুত করার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা। যেটি সিভিল পিটিশন ফর টু আপিল নম্বর- ১৭৮৪/১৫। এতে বিবাদি করা হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে। অননুমোদিত ছুটি ভোগ করায় সরকারি কর্মচারী অধ্যাদেশ (বিশেষ বিধান) ১৯৭৯-এর ৩(খ) ধারা অনুযায়ী তাকে দোষী সাব্যস্ত করে অধ্যাদেশের ৪(গ) ধারা অনুযায়ী চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হলে প্রশাসনিক এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। সেখানে বাদি হেরে গেলে রায়ের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে এএটি মামলা করেন। যার নম্বর ১৬৯/২০০৩। এএটি মামলার রায় সরকারের বিপক্ষে গেলে আপিল বিভাগে সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল নম্বর ১৭৮৪/১৫ দায়ের করেন। আপিল বিভাগের রায় সরকারের বিপক্ষে গেলে রিভিউ পিটিশন নম্বর ৪৪৫/২০১৭ দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। আপিল বিভাগে আরেকটি সিভিল পিটিশন ফর টু আপিল নম্বর- ১৮৬০/১৫ রয়েছে। মামলটি ৪৪/২০১১ এবং এএটি মামলা নম্বর- ১০৫/২০১২। মামলার বাদি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক অফিস সহকারী কে এম হান্নানের নিয়োগ বাতিল সংক্রান্ত। বিভিন্ন পর্যায়ে মামলাটি চলার পর সর্বশেষ এএটি মামলার রায় সরকারের বিপক্ষে গেলে সরকারের পক্ষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আপিল বিভাগে সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল দায়ের করেন। যার নম্বর- ন১৮৬০/১৫। আপিল বিভাগের রায় সরকারের বিপক্ষে যায়। ফলে রিভিউ পিটিশন দায়েরের জন্য সলিসিটর উইং থেকে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড হিসেবে বেগম শিরিন আফরোজকে নিয়োগ দেওয়া হয়। হাইকোর্টে রয়েছে সিআরপিসির ১৪৫ ও ১৪৭ ধারা সংশোধন সংক্রান্ত মামলা। যার নম্বর- ৭৭৪৮/২০০৯। ইতঃপূর্বে মামলাটির দুবার শুনানি হয়েছে বলে জানা গেছে। আদালতে মামলাটির চলমান বেঞ্চ ভেঙে ফেলা হয়েছে। এখনও নতুন বেঞ্চ গঠিত হয়নি। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে রয়েছে ২টি মামলা। একটি হচ্ছে- এ.টি. মামলা নম্বর ২০০/২০১৮। মামলার বাদি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক অফিস সহায়ক শেখ মোতাহার হোসেন। অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তার বেতন বৃদ্ধি দুই বছরের জন্য স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে এ.টি মামলা করেন। যার নম্বর ২০০/২০১৮। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে সরকারের পক্ষে একজন অ্যাডভোকেট নিয়োগ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন এ.টি. মামলার নম্বর হচ্ছে- ২৪৮/২০১৮। মামলার বাদী মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তা রুবেল চৌধুরী। বিবাদি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ মামলা সরকারের পক্ষে পরিচালনার জন্য আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, মামলা তার আপনগতিতে চলছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগ কাজ করছে।