উচ্চমানের মোটরসাইকেল রপ্তানি করছে রানার

0
791

উচ্চমানের সৌখিন মোটরসাইকেল রপ্তানি করতে যাচ্ছে রানার অটোমোবাইলস লিমিটেড। নেপালের পর এবার প্রতিষ্ঠানটির নজর এখন ভুটান, মায়ানমার, ভারতের সাতটি রাজ্য (সেভন সিস্টার) আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ উচ্চ প্রযুক্তির মোটরসাইকেল রপ্তানি করতে যাচ্ছে দেশিয় এই কম্পানিটি। এরই মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি ১৬৫ থেকে ৫০০ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেল রপ্তানির জন্য কাঁচামাল আমদানির অনুমতি পেয়েছে রানার অটোমোবাইলস লিমিটেড।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত ৩০ আগষ্ট রানার অটোমোবাইলসকে রপ্তানির উদ্দেশ্যে ১৬৫ থেকে ৫০০ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেল উৎপাদনের জন্য কাঁচামাল ও উপাদান আমদানির অনুমতি (আইপি) প্রদান করা হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে আপাতত মোটরসাইকেল, আমদানি পার্টস বিক্রি না করা এবং এটি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার শর্তে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবদুছ সামাদ আল আজাদ স্বাক্ষরিত অনুমতি পত্রটি রানার গ্রুপের কাছে পৌচেছে বলে জানা গেছে।
জানতে চাইল রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান বলেন, ‘আমরা খুবই আনন্দিত যে, আমাদের আবেদনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সাড়া দিয়েছে। এখন আমরা হাই এন্ড মোটরসাইকেলের বাজারে প্রবেশ করবো। আর এর মধ্যে দিয়ে মেড ইন বাংলাদেশ খ্যাত রানার মোটরসাইকেল ছড়িয়ে পড়বে এশিয়া, আফ্রিকা ও মধ্য প্রাচ্যের কয়েকটি দেশে।’
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সৌখিন বাইকারদের কাছে উচ্চ সিসির মোটরসাইকেলে চাহিদা বাড়ছে উল্লেখ করে রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রতি বছর ২ কোটি ইউনিট উচ্চ সিসির মোটরসাইকেল বাজার ধরতে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। ইতিমধ্যে ভালুকায় আমাদের কারখানায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছি। বাজার গবেষণা, উদ্ভাবন, মান নিয়ন্ত্রণের কাজ চলছে। এখন কাচামাল ও প্রয়োজনীয় উপকরণ আমদানির পর খুব শিঘ্রই ১৬৫ থেকে ৫০০ সিসির মোটরসাইকেল আমরা দেশেই বানাতে সক্ষম হবো এবং তা রপ্তানি করবো। তবে প্রাথমিকভাবে আমরা ২০০ থেকে ২৫০ সিসিতে বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছি। পর্যায়ক্রমে তা বাড়ানো হবে।’
রানার অটোমোবাইলসের এমডি ও সিইও মুকেশ শর্মা বলেন, ‘রানার অটোমোবাইলস রপ্তানি বাজারে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি এ বছরের শেষ নাগাদ আমরা আমাদের কারখানায় রপ্তানির উদ্দেশ্যে উচ্চ সিসির মোটরসাইকেল উৎপাদন করতে পারবো। পরবর্তীতে আগামী বছর থেকে তা রপ্তানি শুরু হবে।’
তৈরি পোশাক, চিংড়ি, চামড়াজাত পণ্যসহ অনেক পণ্যই বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছে। ২০১৭ সালের ২১ জানুয়ারিতে রানার অটোমোবাইলসের মাধ্যমে বাংলাদেশ তালিকায় নাম লেখায় মোটরসাইকেল। সেদিন ভালুকায় রানারের রপ্তানি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। পরবর্তীতে গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবসে ৮০ থেকে ১৫০ সিসির সাত মডেলের মোটরসাইকেল নিয়ে ব্যাপক পরিসসরে নোপালের বাজারে রপ্তানি সম্প্রসারণ করে রানার অটোমোবাইলস।
২০০০ সালে মোটরসাইকেল আমদানি করে বাজারজাত শুরু করে রানার। কয়েক বছর পর প্রতিষ্ঠানটি মোটরসাইকেলের পার্টস সংযোজন শুরু করে। আর ২০০৭ সালে ময়মনসিংহের ভালুকায় রানার বাংলাদেশে প্রথম মোটরসাইকেলের কম্পোনেন্টস্ তৈরীর মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে মোটরসাইকেল উৎপাদন শুরু করে-যা বুয়েট এবং বিআরটিএ অনুমোদন দেয়। পরবর্তীতে ২০১১ সালে রানার পানচিং, ওয়েল্ডিং, পেইন্টিং, এসেম্বলিং, টেষ্টিং ইত্যাদি মেশিনারীজ স্থাপনের মাধ্যমে মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী হিসাবে সরকারী অনুমোদন লাভ করে। পূর্ণাঙ্গ মোটরসাইকেল কারখানা হিসেবে ২০১২ সালে পুরোদমে উৎপাদন শুরু করে। এ সকল যন্ত্রাংশ রং করার জন্য অত্যাধুনিক পেইন্ট শপ স্থাপন করা হয়েছে।
কারখানায় দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ৫০০ মোটরসাইকেল এবং ২০১৮ সালের মধ্যে উৎপাদন ক্ষমতা ১০০০ এ উন্নীত করনের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি সম্পন্ন উচ্চ ক্ষমতার বিখ্যাত ইউএম-রানার ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বাজারে সরবরাহের কাজ চলছে।
রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, ‘নেপালে আমাদের মোটরসাইকেল রপ্তানির মাধ্যমে বিশ্ব বাজারে রপ্তানির পথ প্রশস্ত হয়েছে। সরকারের কাছ থেকে সুষ্ঠু নীতি সহায়তা পেলে বিশ্ব বাজারে রানার ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল আধিপত্য স্থাপনে সক্ষম হবে।’