ইয়াবার রুটেই ঢুকছে আইস

0
288

টাইমস প্রতিবেদক:
ইয়াবা পাচার বন্ধে হিমশিম অবস্থায় প্রশাসন। এরমধ্যে মিলেছে ভয়ংকর মাদক আইস। যার আরেক নাম ক্রিস্টাল মেথ। ইয়াবা রুটে বাংলাদেশে আসছে ক্রিস্টাল মেথ বা আইস নামের নতুন মাদক। ইয়াবার চেয়েও শতগুণ বেশি ক্ষতি হয় আইসে। এর দামও বেশি, মৃত্যুর ঝুঁঁকিও বেশি। ইয়াবা তৈরির মুল উপাদান ‘এমপিটামিন’। ইয়াবার এমপিটামিন থাকে পাঁচ ভাগ আর ক্রিস্টাল মেথ বা আইসের এমপিটামিনের পরিমাণ শতভাগ। গত মার্চ মাসে দুইবার আইসের চালান ধরা পড়েছে টেকনাফে। প্রতিবারই দুই কেজি করে চার কেজি আইস উদ্ধার করেছে র‌্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। তদন্তকারী সংস্থা প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছেন থাইল্যান্ড-মিয়ানমার হয়ে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ইয়াবার রুটে আইসের এ বিশাল চালান ঢুকছে বাংলাদেশে। এর আগে ঢাকা ও চট্টগ্রামে আইসের সন্ধান মিলেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের টেকনাফ জোনের সহকারী পরিচালক সিরাজুল মোস্তফা জানান, থাইল্যান্ড-মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে আইস বা ক্রিস্টাল মেথ দেশে ঢুকছে। তবে এ প্রথম ‘আইস’ এসেছে তা নয়। প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি, টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে এর আগেও আইসের কয়েকটি চালান দেশে ঢুকেছে। সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ইয়াবার মূল উপদান ‘এমপিটামিন’। ইয়াবাতে এমপিটামিনের পরিমাণ থাকে পাঁচভাগ। আর আইসে এমপিটামিনের পরিমাণ শতভাগ। পাচারকারিরা বাংলাদেশে আইস বাজারজাত করার চেষ্টা করছে। ‘আইস’ দেশে বাজারজাত হয়ে গেলে ইয়াবার চেয়ে শতগুণ ক্ষতির মুখে পড়বে যুবসমাজ । সর্বশেষ দুই কেজি আইস’র চালান ধরা পড়েছে তাও টেকনাফে। এ ব্যাপারে গত ২৬ মার্চ টেকনাফ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন র‌্যাব-১৫ এর ডিএডি আবুল কালাম ঢালী। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ২৫ মার্চ র‌্যাব-১৫ (কক্সবাজার) সদস্যরা টেকনাফ-কক্সবাজার সড়কের উত্তর বরইতলী গ্রামের বায়তুল রহমান জামে মসজিদের গেইটের সামনে থেকে আইসগুলো উদ্ধার করেছে। এ সময় মোহাম্মদ হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। হোসেন টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের নোয়াখালী পাড়ার কালা মিয়ার ছেলে। এ সময় র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে অপর একব্যক্তি পালিয়ে যায়। গ্রেপ্তারের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের র‌্যাব কর্মকর্তাদের কাছে হোসেন জানিয়েছে, একই গ্রামের (বাহারছড়া) নবী হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ রশিদসহ মিলে দীর্ঘদিন ধরে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ক্রিস্টাল মেথ বা ‘আইস’ পাচার করছে বাংলাদেশে। এর আগেও তারা কয়েকটি আইস’র চালান এনেছে। হোসেন ধরা পড়লেও রশিদ ধরা পড়েনি। র‌্যাবের দাবি উদ্ধার হওয়া আইসের বাজারমূল্য তিন কোটি টাকা। এর আগে টেকনাফে আইস’র প্রথম চালান ধরা পড়েছে গত ৩ মার্চ। টেকনাফ বিশেষ জোনের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিশেষ জোনের একটি টিম দুই কেজি ‘আইস’ উদ্ধার করে। এ ব্যাপারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের টেকনাফ বিশেষ জোনের সহকারী পরিচালক সিরাজুল মোস্তফা বাদি হয়ে টেকনাফ মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। জানা যায়, টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুড়া কোনাপাড়া আবদুর রহমানের টিনের বেড়ার ঘর থেকে উদ্ধার করা হয় দুই কেজি ক্রিস্টাল মেথ বা ‘আইস’। যার বাজার মূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা। তবে আবদুর রহমানকে পায়নি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। তার ভাই আবদুল্লাহ ধরা পড়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আবদুল্লাহ জানায়, তার ভাই আবদুর রহমান পেশাদার মাদক পাচারকারিদের কাছ থেকে ‘আইস’ সংগ্রহ করেছে। তবে আবদুর রহমান ধরা পড়েনি। ‘আইস’ লবণের মতো দানাদারজাতীয় মাদক। দেখতে কখনো চিনির মতো, কখনের মিছরির মতো। আইচ উচ্চ মাত্রার মাদক, যা সেবনের পর মানবদেহে দ্রæত উত্তেজনার সৃষ্টি করে। এই মাদক সেবনের পর মস্তিষ্ক বিকৃতিতে মৃত্যু হতে পারে। তাছাড়া,অনিদ্রা, অতিরিক্ত উত্তেজনা, স্মৃতিভ্রম ও হৃদরোগকে বেগবান করে। এ মাদক বাজারে সয়লাব হলে ইয়াবার চেয়ে বেশি বিপর্যয়ের মুখে পড়বে তরুণ সমাজ। স্ক্যানিংয়ে ধরা পড়ছে না আইস। ২০১৯ সালের ২৭ জুন ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে ক্রিস্টাল মেথ বা আইসসহ নাইজেরীয় একজন নাগরিককে আটক করে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। সেই সময় ওই নাইজেরীয়ান নাগরিক দাবি করেছিলেন, নিষিদ্ধ ডার্ক নেটের সদস্য হয়ে তিনি মাদক ব্যবসা শুরু করেছেন। আফ্রিকা থেকে ‘আইস’ এনে এদেশে বিক্রির চেষ্টা করছেন। তার কাছে ৫২২ গ্রাম ‘আইস’ পাওয়া গিয়েছিলো। আইসের কথা প্রথম জানাজানি হয় ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। সেই সময় ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে ৮ গ্রাম আইসসহ তিন ব্যক্তিকে আটক করেছিলো। চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো ক্রিস্টাল মেথ বা আইস পাওয়া যায় চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে। নগরীর খুলশী থানার মোজাফফর নগর বাইলেইন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৪০ গ্রাম ‘আইস’ উদ্ধার করে র‌্যাব। এ সময় দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন, বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া গ্রামের শফিউল আলম (৩৪) ও কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার মো. ইয়াছিন রানা (৫০)। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান রাসায়নিক কর্মকর্তা দুলাল কৃষ্ণ সাহা জানান, ‘আইস’ ইয়াবার চেয়ে খুবই ভয়ংকর মাদক। এই মাদক সয়লাব হলে ইয়াবার চেয়ে বেশি বিপর্যয়ের মুখে পড়বে দেশের তরুণ সমাজ। স্ক্যানিংয়ে ধরা পড়ছে না ‘আইস’।