ইলেকশন নয়, সিলেকশনেই হচ্ছে জেলা ও নগর আ’লীগের কমিটি

0
597

ফারহা শেখ বহ্নি:
ইলেকনয় নয়, সিলেকশনেই হবে খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নির্ধারণ। দলের এই দুই ইউনিটের নেতাকর্মীদের মধ্যে ত্যাগী ও দলের দূর্দিনে পরীক্ষীত সৈনিকের সংখ্যা নেহাতই কম নয়। সেই হিসেবে দলের শীর্ষ পদে প্রার্থীর সংখ্যা ভারী হবে। অনাকাংঙ্খিত ও উদ্ভূত পরিস্থিতি এড়াতে দলের নীতি-নির্ধারক মহল তাই সিলেকশনেই নেতৃত্ব নির্বাচিত করবেন। দলের একাধীক সূত্র এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দলের নগর সভাপতি ও সিটি মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, সম্মেলনকে ঘিরে প্রয়োজনীয় সকল কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। জেলা-নগরের কাউন্সিলর, ডেলিগেট, স্বেচ্ছাসেবক ও নেতাকর্মী মিলিয়ে অন্তত: ৩০ সহ¯্রাধিক নেতাকর্মীর আগমন ঘটবে। নেতৃত্ব নির্বাচনে দলীয় সভানেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে।
দলের জেলা সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ বলেন, এবারের সম্মেলন হবে চমকপ্রদ। সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীরাও অত্যন্ত প্রাণচাঞ্চল্য। নেতৃত্ব নির্ধারণে দলীয় সভানেত্রীর সিদ্ধান্তইকে সবাই বরণ করে নিবে। সাধারণ সম্পাদক পদে দলের দূর্দিনের পরীক্ষীত সৈনিকরাই প্রাধাণ্য দেয়া হোক এমনটাই প্রত্যাশা করেন এই প্রবীণ রাজনীতিক।
জানা গেছে, প্রায় ৫ বছর পর মহানগর আওয়ামী লীগ এবং প্রায় ৪ বছর পর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন হতে যাচ্ছে। খুলনায় এবার প্রথম একসাথে হচ্ছে জেলা ও নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন। আগামী ১০ ডিসেম্ব, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় নগরীর সার্কিট হাউজ ময়দানে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন দলের প্রেসিডেয়াম সদস্য পীযূষ কান্তি ভট্রাচার্য। প্রধান অতিথি থাকবেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি। সন্মানিত অতিথি থাকছেন বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকছেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল হানিফ ও প্রধানমন্ত্রীর অথনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান। প্রধান বক্তা থাকবেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান। বিশেষ বক্তা থাকবেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপি, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও দলের নির্বাহী সদস্য মির্জা আযম এমপি, বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র সেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েল এমপি ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, দলের শ্রম সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিষ্টার বিপ্লব বড়–য়া, নির্বাহী সদস্য এসএম কামাল হোসেন ও এড. আমিরুল ইসলাম মিলন, শেখ সারহান নাসের তন্ময় এমপি। স্বাগত বক্তৃতা করবেন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও কেসিসি মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক। সভাপতিত্ব করবেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ। পরিচালনায় থাকবেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মুহাম্মদ মিজানুর রহমান মিজান ও জেলা আওয়ামী লীগ ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এড. সুজিত অধিকারী। বক্তৃতা করবেন পঞ্চানন বিশ্বাস এমপি, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমপি, মোঃ আব্দুস সালাম মুর্শেদী, আক্তারুজ্জামান বাবু এমপি ও গ্লোরিয়া ঝর্ণা এমপি।
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকাকালীন এটা আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় সম্মেলন। ফলে এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মাঝে উৎসবের আমেজ বইছে। মহানগরীর প্রবেশ দ্বারসহ সর্বত্র সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। এর আগে ২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর নগর আওয়ামী লীগের এবং ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জানান, মহানগর ও জেলা কমিটির এবারের সম্মেলন হবে সব চেয়ে চমকপ্রদ। আর দীর্ঘদিন পর সম্মেলন হওয়ায় নেতা-কর্মীদের মাঝে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে।
সম্মেলনে নগরের ৩৬টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড থেকে ১২জন করে ৪৩২জন, ৫টি থানার ৫জন করে ২৫জন, মহানগর কার্যনির্বাহী কমিটির ৬৬জন কাউন্সিলর এবং ৭ হাজার ২শ’ জন ডেলিগেট ১০ হাজার ডেলিগেট উপস্থিত থাকবেন। জেলায় কার্যনির্বাহী কমিটির ৬৭জন, ৯ উপজেলা থেকে ১৫৭জন কাউন্সিলর এবং চার হাজার ডেলিগেট অংশগ্রহণ করবেন। উল্লেখ্য, ডেলিগেটদেও মধ্যে ৫জন মহিলা বাধ্যতামূলক রাখা হয়েছে। সম্মেলনকে ঘিরে গোটা নগরীকে সাজানো হয়েছে অপরূপ সাজে। নগর জুড়ে ছেয়ে গেছে তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার। মঞ্চ ও প্যান্ডেলকে সাজানো হয়েছে ভিন্ন আঙ্গিকে। দলের নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ ও দিক নির্দেশনা বক্তৃতা শোনার জন্য অপেক্ষায় আছেন।
সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে বিকাল ৩টায় অফিসার্স ক্লাবে কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এ অধিবেশনে আগামী তিন বছরের জন্য নতুন নেতৃত্ব নির্ধারণ করা হবে। নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দলের নগর ও জেলা কমিটির ৭১ সদস্য চূড়ান্ত করবেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, ইলেকশন নয়, সিলেকশনেই দলের নতুন নেতৃত্ব চূড়ান্ত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে নগরের বর্তমান সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান স্বপদে বহাল থাকছেন। অনুরূপ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ স্বপদে বহাল থাকছেন। শুধু সাধারণ সম্পাদক পদে নতুন মুখ আসবে। তাছাড়া কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যান্য পদে এবার অনেক তরুণ নেতৃত্বের আগমন ঘটবে। সাবেক ছাত্র-যুব নেতাদের পাশাপাশি ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের এ কমিটিতে স্থান দেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে চেক-ব্যালেন্সের জন্য প্রবীণ নেতাদের উপদেষ্টা মন্ডলীতে নিয়ে যাওয়া হবে।