ইছামতিতে এবারও হচ্ছেনা মিলনমেলা; দু’দেশের সীমানায় প্রতিমা বিসর্জন- পতাকা বৈঠকে সিদ্ধান্ত

0
149

আব্দুর রব লিটু: শুরু হতে যাচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ব বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গা পূজা। প্রতিবছর ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পূজার সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিজয়া দশমীতে আর্ন্তজাতিক সীমানা নির্ধারনী ইছামতি নদীতে একসাথে প্রতিমা বিসর্জন করেন বাংলাদেশ-ভারতের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। প্রতিমা বিসর্জনকে ঘিরে গত কয়েক বছর আগেও ইছামতির দুপাড়ে বাংলাদেশ ও ভারতের লাখো মানুষের উপস্থিতিতে বসতো শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মিলন মেলা। সেসময়ে বছরে ওই একটি দিনে সীমানার গন্ডি এবং জাতি-ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ ভুলে সৌহাদ্য ও সম্প্রীতির মেলবন্ধনে একসাথে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠতো দু’দেশের লাখো মানুষ। ইছামতি নদীর বুক চিরে ভাসতো বাংলাদেশ ও ভারতের হাজারো নৌকা, ট্রলার, লঞ্চ। দিনটিতে থাকতোনা আইনের কোন বাধ্য বাধকতা। পাসপোর্ট ভিসা ছাড়াই ওই দিনটিতে কয়েক ঘন্টার জন্য ভারতের মানুষ বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশের মানুষ ভারতে প্রবেশ করতো। বেড়ানো, কেনাকাটা এবং ভিন্ন দেশে থাকা আত্মীয় স্বজনদের সাথে দেখা করে সন্ধ্যার আগেই সবাই আবার ফিরে যেতো যার যার দেশে। সর্বশেষ ২০১৭ সালে ইছামতি নদীর বুকে ভেসেছিল এমন সৌহাদ্যপূর্ন মিলন মেলার তরী। পরবর্তী আইনী জটিলতার কারনে বাংলাদেশ ও ভারতের উচ্চ পর্যায়ের প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে বন্ধ হয়ে যায় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মিলনমেলা। তবুও প্রতিবছর দূর্গা পূজা আসলেই কাঙ্খিত সেই মিলনমেলার অপেক্ষা করতে থাকে দু’দেশের মানুষ।
এবারও বাংলাদেশ ও ভারতের উৎসুক লাখো মানুষের সেই আকাঙ্খা অপূর্ণ থাকবে, ১৫ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনকে ঘিরে ইছামতির দু’পাড়ে বসবেনা সৌহাদ্য ও সম্প্রীতির সেই মিলন মেলা।
প্রতিমা বিসর্জনকে ঘিরে আগাম পতাকা বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দুই বাংলার উচ্চ পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। এছাড়া ইছামতি নদীর নোম্যান্স ল্যান্ড বরাবর রশি টানিয়ে সীমানা নির্ধারণসহ যাতে কোন দেশের প্রতিমাবাহী ট্রলার আর্ন্তজাতিক সীমারেখা অতিক্রম করতে না পারে সেজন্য থাকবে বিজিবি ও বিএসএফ’র টহল। করোনা সংক্রমন এড়াতে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত মেনে নিজ নিজ সীমানায় শান্তিপূর্ণ ভাবে ভারতীয় সময় দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৪টা এবং বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টা থেকে সাড়ে চারটার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন দিবে উভয় দেশের মানুষ।
শনিবার দুপুর আড়াইটা থেকে ইছামতি নদীর নোম্যান্স ল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ঘন্টাব্যাপী পতাকা বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এসময় বাংলাদেশের পক্ষে দেবহাটা উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার নাজমুল হুসেইন খাঁন, সদর ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর গাজী, টাউনশ্রীপুর কোম্পানী সদরের নায়েব সুবেদার বন্দে আলী, হাবিলদার মোকতারুজ্জামান, ল্যান্স নায়েক আবুল কামাল ভারপতের পক্ষে হাসনাবাদের বি.ডি.ও মোস্তাক আহমেদ, এস.ডি.পি.ও দেবরাজ ঘোষ, হাসনাবাদ পুলিশ স্টেশনের ইন্সপেক্টর কৃষ্ণেন্দু ঘোষ, টাকী পৌরসভার চেয়ারম্যান সোমনাথ চ্যাটার্জী, বিএসএফ’র এ.সি বিনোদ কুমার, ইন্সপেক্টর সুভাস চন্দ্র, এস.আই পারভীন কুমার সানি, এইচ.সি ইত্তেফাক আহমেদ সহ দু’দেশের সিভিল প্রশাসন ও বিজিবি-বিএসএফ’র কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।