আশাশুনির ১০ পয়েন্টে পাউবো’র বেড়ী বাঁধ ওভারফ্লো ও ভেঙ্গে এলাকা প্লাবিত

0
135

আশাশুনি প্রতিনিধি:
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে আশাশুনি উপজেলার বিভিন্ন নদ-নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ১০টি পয়েন্টে পাউবো’র বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ও ওভারফ্লো হয়ে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার ২০ কিঃমিঃ বেড়ী বাঁধ ঝুকিতে থাকায় এলাকার মানুষ চরম আতঙ্কে রয়েছেন। বুধবার (২৬ মে) সকাল থেকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব নদ-নদী উত্তাল হয়ে ওঠে। হালকা ও মাঝারি ধরনের বৃষ্টি এবং ঝড়ো হাওয়া উপকূলবর্তী এলাকায় আছড়ে পড়তে থাকে। দুপুর ১২ টার দিকে প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাহনিয়া লঞ্চঘাটের দক্ষিণ পাশে দু’টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ওভারফ্লো হয়ে ভেতরে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্রবল বেগে পানি ভিতরে ঢুকতে শুরু করে। প্রায় ৩০০ ফুট মত বাঁধ ভেঙ্গে এলাকা প্লাবিত হয়।

বন্যতলা, চাকলা, কল্যাণপুর, রুইয়েল বিল, আনুলিয়া ইউনিয়নের নাকনা সহ ৬টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ওভারফ্লো হয়। নদীর পানি কুড়িকাহুনিয়া, চাকলা, সুভদ্রকাটি, রুইয়ের বিল, হরিশখালি, সোনাতনকাটি, নাকনা গ্রামে জলমগ্ন করে। আশাশুনি সদর ইউনিয়নের বলাবাড়িয়া, জেলেখালী, মানিকখালী, শ্রীউলা ইউনিয়নের হাজরাখালি, পুইজালা, কাকড়াবুনিয়া, কলিমাখালী, হাজরাখালী, বড়দলের কেয়ারগাতিসহ কয়েকটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ও ওভারফ্লো হয়। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, পাউবো’র কর্মকর্তা, উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ রক্ষার কাজে এগিয়ে যান।

ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ও স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে ওভারফ্লো রোধ ও ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা করা হয়। আশাশুনি উপজেলায় ১১০ কিঃমিঃ পাউবো’র বেড়ী বাঁধ রয়েছে। এরমধ্যে ২০ কিঃমিঃ বাঁধের অবস্থা খুবই ঝুকিপূর্ণ। বছরের পর বছর এই ২০ কিঃমিঃ বাঁধ টেকসই করার দাবী জোরালো ভাবে উচ্চারিত হলেও অদ্যাবধি সেটা সম্ভব হয়নি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিজ্ঞ জনেরা বলেন, প্রতাপনগরে জাইকার উদ্যোগে বাঁধ রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখনো কাজ শুরু হয়নি। ফলে সেখানে বাঁধ ওভারফ্লো ও ভাঙ্গনের ঘটনা ঘটেছে। টেকসই বেড়ী বাঁধ নির্মান ও বাঁধের লেবেল উচু না করা হলে এমন ঘটনা প্রতি বছর ঘটতেই থাকবে বলে তারা মনে করেন।

আশাশুনি উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম বলেন, ইয়াসের ঝুঁকি থাকায় এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বাঁধ রক্ষার জন্য জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে উদ্যোগ নেওয়া হয়। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়। আমরা বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে বাঁধ রক্ষার ব্যাপারে সহযোগিতা করেছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হুসাইন খাঁন বলেন, কয়েকটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে এবং ওভারফ্লো হয়েছে। কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কাজ করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁধ রক্ষা করা হবে। সাইক্লোনের ছোবল থেকে প্রাণহানি রোধে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ২৬টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র ও ৮০টি সাইক্লোন শেল্টার কাম স্কুল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মেডিকেল টিম সকল এলাকায় দায়িত্বরত আছে।

জেলা প্রশাসন দুর্যোগ কবলিতদের সহায়তার জন্য প্রতি ইউনিয়নে ২৫ হাজার টাকা করে রিজার্ভ বরাদ্দ দিয়েছেন। গোখাদ্য বাবদ ১ লক্ষ টাকা ও শিশু খাদ্য বাবদ ১ লক্ষ টাকা পাওয়া গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এসও গোলাম রাববী ও আলমগীর হোসেন জানান, প্রতাপনগর, শ্রীউলা, আশাশুনি সদর ইউনিয়নে অনেক স্থনে ভেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ও ওভারফ্লো হয়েছে। তাৎক্ষণিক ভাবে ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে বাঁধ রক্ষা ও ওভারফ্লো ঠেকাতে কাজ করা হচ্ছে। দ্রুত বাঁধ সংস্কারের কাজ করা হবে।

খুলনা টাইমস/এমআইআর