আবাসন খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে

0
1219

সুমন আহমেদ:
মহানগরীতে জমির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রসারিত হচ্ছে আবাসন ব্যবসা। সরকারি-বেসরকারি চাকুরীজীবী থেকে শুরু করে মাঝারী আয়ের মানুষের আগ্রহ হয়ে উঠছে ফ্লাট বাড়ি। মানুষের এ আগ্রহকে সামনে রেখে ডেভেলপার্স প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এতে একদিকে আবাসন খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে। আর অন্যদিকে বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হচ্ছে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের সহকারি অধ্যাপক স্থপতি এসএম নাজিম উদ্দিন পায়েল বলেন, শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জমি ক্রয়ের সক্ষমতা যারা হারিয়েছে, আবাসন ব্যবসার মাধ্যমে তাদের এসব স্থানে পূর্ণবাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দেশের অন্যান্য স্থানে দ্রুত সম্প্রসারণ করলেও খুলনায় তুলনামূলক ব্যবসাটি পিছিয়ে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, মংলা বন্দর ঘিরে খুলনা ইকোনোমিক জোন তৈরি হওয়ায় সম্প্রতি নগরীতে ব্যবসাটির ব্যাপক সম্প্রসারণ হয়েছে। এছাড়া পদ্মা সেতু নির্মাণ হলে এ অঞ্চলের জমির ক্রয় মূল্য হাতের নাগালের বাইরে চলে যাবে বলে অধিকাংশ মানুষ এ ফ্লাট ক্রয় করছে।

আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব’র অপারেশন এক্সিকিউটিভ অফিসার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বর্তমানে দেশব্যাপী ১ হাজার ২৫৮টি প্রতিষ্ঠান তাদের আওতাভূক্ত রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানসমূহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আবাসন ব্যবসা পরিচালনা করছে। তবে খুলনায় কয়টি প্রতিষ্ঠান আবাসন পরিচালনা করছে তা তার জানা নেই। তিনি জমির মালিকরা খোঁজখবর না নিয়ে আবাসন কোম্পানীর কাছে জমি দিলে প্রতারণার শিকার হওয়ার সম্ভবনার কথাও উচ্চারণ করেন।

আরসিসি বিল্ডার্স লিমিটেড’র সিইও রঞ্জণ চক্রবর্তী অভিমত প্রকাশ করেছেন, নিরাপত্তা বলয়, সিসি ক্যামেরা, বিরতিহীন বিদুৎ, লিফট সুবিধা মিলিয়ে নান্দনিক পরিবেশ বিরাজ করায় মানুষ ফ্লাট ক্রয়ের দিকে ঝুঁকছে।

সূত্রমতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খুলনায় আবাসন খাতে ব্যাপকহারে বিনিয়োগ বেড়েছে। প্রায়শই নিত্য নতুন কোম্পানী এই খাতে বিনিয়োগ করছে। প্রতিটি আবাসন ব্যবসা কোম্পানির সাথে দেড় থেকে দু’হাজার লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে। ঢাকাস্থ হোল্ডিংস কোম্পানি এডিসিএল, এসইএল, এনসিসি, ওয়েসিস হোল্ডিংস, আরসিসি, আফজাল প্রপার্টিজ, স্বপ্ন বুনন রিয়েল স্টেট, প্রিটিনিলয় বিল্ডার্স, ডায়মন্ড সিটি প্যালেসসহ স্থানীয় কতিপয় ব্যাক্তি ও আবাসন কোম্পানি এ খাতে বিনিয়োগ করছে। এ সকল কোম্পানির চার ক্যাটাগরির ফ্লাট রয়েছে। এতে ১১৩০ স্কয়ার ফিট থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২৮৯৫ স্কয়ার ফিট আকারের ফ্লাট আছে। স্কয়ার ফিট প্রতি যার মূল্য ৩ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ২০০ টাকা।

খুলনা বিভাগীয় যৌথমূলধনী কোম্পানির সূত্রানুযায়ী, খুলনায় রিয়েল স্টেট ও ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি রয়েছে ১২৭টি। তবে এদের মধ্যে নির্দিষ্ট কয়টি প্রতিষ্ঠান আবাসন ব্যবসার সাথে জড়িত? তার সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। কারণ লিমিটেড কোম্পানির আওতায় একাধীক ব্যবসা করার সুযোগ রয়েছে।

কেডিএ’র অথরাইজড অফিসার প্রকৌশলী শামীম জিহাদ’র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কতিপয় আবাসন কোম্পানি কেডিএ’র নথিভূক্তি রয়েছে। এগুলো হচ্ছে কেডিএ এভিনিউস্থ সিসভাস ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি, মুজগুন্নীস্থ ম্যানগ্রোভ ইকো প্রোপার্টিজ, হাজী মহসীন রোডস্থ রাব্বি প্রোপার্টিজ, সাউথ সেন্ট্রাল রোডস্থ সিটি প্রোপার্টিজ, টুটপাড়া মেইনরোডস্থ মেসার্স শাহীন সিটি, সাউথ সেন্ট্রাল রোডস্থ এসএন প্রোপার্টিজ ও ঢাকাস্থ উত্তরার জেনেসিস হোল্ডিংস লিমিটেড।

সূত্রমতে, এ সকল কোম্পানিসমূহের প্রতিটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য ৮টি সংস্থার স্মরণাপন্ন হতে হয়। এগুলো হচ্ছে স্থানীয় কাউন্সিলর, কেসিসি মেয়র, ওজোপাডিকো (বিদুৎ), কেএমপি (ট্রাফিক), পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভেল ডিভেন্স, খুলনা ওয়াসা ও খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। তবে হয়রানি ও ঝামেলা এড়াতে অধিকাংশ আবাসন ব্যবসায়ী এ সকল সংস্থার অনুমোদন নেয়াকে গুরুত্ব দেয় না বলে অভিযোগ রয়েছে।